খুলনার তিন নারী চিকিৎসকসহ ৪ চিকিৎসক নিখোঁজের প্রায় ৭২ ঘণ্টা অতিবাহিত হয়েছে। কিন্তু তাদের বিষয়ে মুখ খুলছে না পুলিশ। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) একটি দল চিকিৎসকদের তুলে নিয়ে গেছে বলে পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হচ্ছে। কিন্তু তিন দিনেও এ বিষয়ে মুখ খুলছে না সিআইডি। বিষয়টি উদ্বিগ্ন চিকিৎসকদের পরিবার ও সহকর্মীরা।
এ অবস্থায় নিখোঁজ চিকিৎসকদের সন্ধান চেয়ে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনারকে চিঠি দিয়েছে চিকিৎসকদের সংগঠন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) খুলনা জেলা শাখা। রোববার রাতে পুলিশ কমিশনারকে দেওয়া চিঠিতে দ্রুত সময়ের মধ্যে চিকিৎসকদের খুঁজে বের করার দাবি জানানো হয়।
গত ১৮ আগস্ট সকালে খুলনায় মেডিকেল কলেজে ভর্তি কোচিং থ্রি ডক্টরসের উপদেষ্টা ডা. ইউনুস উজ্জামান খান তারিমকে আটক করে সিআইডি। খুলনা সদর থানা পুলিশের ওসি হাসান আল মামুন সাংবাদিকদের এই তথ্য নিশ্চিত করেন। পরদিন জানা যায়, ১৮ আগস্ট রাতে আরও দুই চিকিৎসক এবং ১৯ আগস্ট সকাল থেকে আরও দুই জন চিকিৎসক নিখোঁজ হয়েছেন। তাদেরও সিআইডি আটক করেছে বলে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে। পরিবারের পক্ষ থেকেও একই অভিযোগ করা হচ্ছে।
নিখোঁজ অন্য চিকিৎসকরা হলেন ডা. লুইস সৌরভ সরকার, ডা. নাজিয়া মাহজাবিন তিশা, ডা. মুসতাহিন হাসান লামিয়া ও ডা. শর্মিষ্ঠা মন্ডল।
তবে সিআইডির পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি। গত দুই দিন সিআইডি সদর দপ্তরে কয়েক দফায় যোগাযোগ করা হলেও এই বিষয়ে কেউই মুখ খুলছে না।
চিকিৎসকরা যে প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সেই খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও বিষয়টি নিয়ে নীরব। নিখোঁজ চিকিৎসকদের বিষয়ে জানতে রোববার দুপুর, বিকাল ও রাতে উপ-পরিচালক ডা. নিয়াজ মুস্তাফি চৌধুরীকে কয়েকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি ধরেননি।
আটকের বিষয়ে সংবিধান কী বলে
সংবিধানের ৩৩ অনুচ্ছেদে ‘গ্রেফতার আটক সম্পর্কে রক্ষাকবচ’ শিরোনামে গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের সাংবিধানিক অধিকার রক্ষার কথা বলা হয়েছে। প্রথম দফায় বলা হয়েছে, গ্রেপ্তারের কারণ না জানিয়ে কোনো ব্যক্তিকে আটক করা যাবে না এবং আটক ব্যক্তিকে অবশ্যই তাঁর মনোনীত আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতে হবে।
ওই অনুচ্ছেদের দ্বিতীয় দফায় আরও বলা হয়েছে, আটক ব্যক্তিকে অবশ্যই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে উপস্থিত করতে হবে এবং ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি ছাড়া কোনো ব্যক্তিকেই ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় আটক রাখা যাবে না।
চিকিৎসকরা জানান, মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফঁাসের বিষয়ে সিআইডির একটি দল দীর্ঘদিন ধরে তদন্ত করছে। খুলনা মেডিকেল কলেজ থেকেও তারা কিছু তথ্য নিয়েছে। তার জেরেই নিখোঁজদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নেওয়া হতে পারে বলে কেউ কেউ মনে করছেন। কিন্তু তুলে নেওয়ার ৩দিন অতিবাহিত হলেও বিষয়টি স্বীকার না করায় তারা উদ্বিগ্ন এবং ক্ষুব্ধ। ইতোমধ্যে সামাজিক মাধ্যম এবং কয়েকটি পত্রিকায় তারা প্রশ্ন ফাঁসে জড়িত বলে প্রচার করা হচ্ছে। এতে বিচার হওয়ার আগেই তাদের সামাজিক মর্যাদা ক্ষুন্ন হচ্ছে।
বিএমএ খুলনা জেলা সভাপতি ডা. শেখ বাহারুল আলম বলেন, এখানে কেউ ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত নিখোঁজ রয়েছেন। আইনশৃংখলা বাহিনী তাদের বিষয়ে কোনো তথ্য দিচ্ছে না। এর মধ্যে নারী চিকিৎসকদের দুগ্ধপোষ্য শিশু রয়েছে। ৩ দিন ধরে মাকে না পেয়ে বাচ্চাগুলো কাঁদছে, তাদের খাওয়া-দাওয়া বন্ধ।
তিনি বলেন, কেউ যদি অপরাধ করে দেশের প্রচলিত আইনে তার বিচার হবে। আটকের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে উপস্থাপন করতে হবে। কিন্তু এখানে কী হচ্ছে আমরা কিছুই বুঝতে পারছি না। এ অবস্থায় পরিবার এবং অন্য চিকিৎসকরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। আমরা দ্রুত তাদের সন্ধান চাই।
খুলনা গেজেট/হিমালয়