খুলনা, বাংলাদেশ | ৬ কার্তিক, ১৪৩১ | ২২ অক্টোবর, ২০২৪

Breaking News

  শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে রাজশাহীর সারদায় পুলিশের ২৫০ এসআইকে অব্যাহতি
  নিবন্ধন ফিরে পেতে জামায়াতে আপিল পুনরুজ্জীবিত করলেন আপিল বিভাগ, এ আদেশের ফলে জামায়াতের আইন লড়াইয়ের পথ খুলে গেল
প্রার্থী পরিবর্তন কয়রার চার ইউপিতে, নতুন মুখ তিন

হেভিওয়েট চেয়ারম্যানরাও নৌকা বঞ্চিত, অসন্তোষ তৃণমূলে

তরিকুল ইসলাম ও নিতিশ সানা, কয়রা

আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে খুলনার কয়রা উপজেলায় ৭টি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী চুড়ান্ত করা হয়েছে। বিগত নির্বাচনে নৌকা প্রতিক নিয়ে বিজয়ী দুই চেয়ারম্যানসহ মোট চারজন এবার দলীয় মনোনয়ন থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। এছাড়া বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে বিজয় ছিনিয়ে আনা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সহসভাপতি গত বারের ন্যায় এবারও নৌকা প্রতিক পাননি। সে হিসেবে ক্ষমতাসীন দলের চার চেয়ারম্যান নৌকা পাননি। তিন ইউপিতে সম্পূর্ণ নতুন মাঝির হাতে নৌকা তুলে দেয়া হয়েছে। এ নিয়ে তৃণমূলে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। তবে মনোনয়ন বঞ্চিত চার ইউপি চেয়ারম্যানদের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দূর্ণিতিসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। এদিকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির ভাই মহারাজপুর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে তার সমর্থক-কর্মীরা।

সূত্রে জানা যায়, বিগত ইউপি নির্বাচনে মহেশ্বরীপুর থেকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বিজয় কুমার নৌকা না পেয়ে বিদ্রোহী হিসেবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। ওই নির্বাচনে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি এস এম ইব্রাহিম শিকারী নৌকা প্রতিকে নির্বাচন করে জামানত হারান। বিগত পাঁচ বছরে বিজয়ের বিরুদ্ধে গ্রাম পুলিশকে মারাধর এবং মেম্বরদের সাথে চরম দুরত্বসহ তার নানা কেলেংকারীর অভিযোগ রয়েছে। এবারও বিজয়কে বঞ্চিত করে নৌকা দেয়া হয়েছে প্রভাষক শাহানেওয়াজ শিকারীকে।

মহারাজপুর ইউনিয়নে বিগত নির্বাচনে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জিএম মহসিন রেজার ভাই উপজেলা য্বুলীগের সদস্য আব্দুল্লাহ আল মামুন লাভলু নৌকা নিয়ে চেয়ারম্যান হন। তবে তার বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা, পরিষদের ৩০ লাখ টাকা দিয়ে সরকারী খাল ভরাট করে মার্কেট নির্মাণসহ মেম্বারদের সাথে সমন্বয়হীনতার চরম অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া তার ভাগ্নে বাহিনী ও বখাটে কিছু কর্মীদের অত্যাচারে এলাকাবাসির মধ্যে চরম চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছিল বলে একাধিক সূত্রে জানা যায়। তাছাড়া তার বড় ভাই জিএম মহসিন রেজা উপজেলা চেয়ারম্যান থাকাকালিন অনিয়মের কারণে অনাস্থার মাধ্যমে বরখাস্ত হন। গেল উপজেলা নির্বাচনে তিনি নৌকা প্রতিক পেয়েও বিদ্রোহী প্রার্থীর কাছে পরাজিত হন। এদিকে ওই ইউনিয়নে বিএনপি সমার্থিত সাবেক চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান বেল্টুর ভাই আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ এবার নৌকা পাওয়ায় লাভলু সমর্থক-কর্মীরা বিক্ষোভ ও টায়ার জ্বালিয়ে রাস্তা অবরোধ করে আন্দোলন করেছেন। মাহমুদের মনোনয়ন বাতিল করে পুনরায় লাভলুকে নৌকা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে জোর দাবি জানানো হয়েছে।

কয়রা সদর ইউনিয়নে বিগত নির্বাচনে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম বাহারুল ইসলাম নৌকা প্রতিক পেয়েও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি এসএম শফিকুর রহমানের কাছে পরাজিত হন। পরে শফিকুল ইসলাম উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে ওই ইউনিয়নে উপ-নির্বাচন হয়। তখন উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মেহেদী হাসান দিদার নৌকা প্রতিক পেলেও বিএনপির সতন্ত্র প্রার্থীর কাছে পরাজিত হন। এসএম বাহারুল ইসলাম পুনরায় নৌকা পেয়েছেন।

বাগালী ইউনিয়নে পুনরায় নৌকা প্রতিক পেয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুস ছামাদ গাজী। বিগত নির্বাচনে তার প্রতিদ্বন্দ্বি বিদ্রোহী প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আব্দুস সাত্তার পাড়ের কাছে ব্যাপক ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন। ২য় হন জামায়াত সমর্থিত এক প্রার্থী। তবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পরে আ. সাত্তারের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠেছে। বিভিন্ন সরকারী সুবিধাভোগীদের তালিকা তৈরিতে অর্থ লেনদেনের ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে। বিশেষ করে পানির ট্যাংক বিতরণে ৮/১০ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

আমাদী ইউনিয়নে দলীয় প্রতিক পেয়ে বিজয় ছিনিয়ে নিয়েছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আলহাজ্ব আমির আলী গাইন। তার বিরুদ্ধেও রাস্তা নির্মাণে অনিয়মসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। এবার নৌকা দেয়া হয়েছে উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য জিয়াউর রহমান জুয়েলকে।

উত্তর বেদকাশি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সরদার নুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে আম্পানে ক্ষতিগ্রন্থ ভেড়িবাঁধ নিয়ে ষড়যন্ত্রের অভিযোগসহ নানা অভিযোগ থাকলেও তিনি পুনরায় নৌকা পেয়েছেন। তিনি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি।

দক্ষিণ বেদকাশিতে বর্তমান চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি কবি শামসুর রহমান পুনরায় নৌকা পেয়েছেন। বিগত পাঁচ বছরে বয়স্কভাতাসহ অন্যান্য সরকারী সুবিধাভোগীদের তালিকা তৈরিতে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

এদিকে বিগত নির্বাচনের মত এবারও মনোনয়ন বঞ্চিতদের থেকে বিদ্রোহী হিসেবে প্রার্থী হতে পারে বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।

উল্লেখ্য, বিগত ইউপি নির্বাচনে চারটিতে নৌকা ও তিনটিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী (স্বতন্ত্র) চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন।

খুলনা গেজেট/ টি আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!