যশোরে ঈদের বাজারে স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা না করে সড়ক ও শপিংমলে জনস্রোত সৃষ্টিকারীদের সতর্ক বার্তা দিল করোনা। ফের উর্দ্ধমুখি করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা। গত তিন দিন জেলায় মৃত্যুর সংখ্যা আটের নিচে থাকলেও শনিবার ১৫ জনে দাঁড়িয়েছে। এরমধ্যে করোনায় ১০ জন ও উপসর্গে পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছে।
আবাসিক মেডিকেল অফিসার অরিফ আহমেদ জানান, গত ২৪ ঘন্টায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে করোনা ডেডিকেডেট ওয়ার্ড রেডজোনে ১০ ও ইয়োলোজোনে পাঁচ জন মারা গেছেন। এরআগে শুক্রবার মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৫ জন, বৃহস্পতিবার ৭ জন ও বুধবার ৭ জন মৃত্যুবরণ করেছিলেন। রেডজোনে বর্তমান ভর্তি আছেন একশ’ ৬২ জন ও ইয়োলো জোনে উপসর্গ নিয়ে রয়েছেন ৬৭ জন। গত ১০ জুলাই থেকে ১৭ জুলাই পর্যন্ত যশোরে করোনা ও উপসর্গ নিয়ে আট দিনে মোট মৃত্যু হয়েছে ৯৪ জনের। এখনো পর্যন্ত বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি হাসপতালসহ বাড়িতে চিকিৎসাধীন আছেন জেলার ৬ হাজার সাতশ’ ৩১ জন করোনা রোগী। এরমধ্যে যশোর পৌর এলাকায় গত ১১ থেকে ১৫ জুলাই পর্যন্ত ৫ দিনে নতুন করে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা তিনশ’ আট জন।
হাসপাতালের
সিভিল সার্জন শেখ আবু শাহীন জানান, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে চারশ’ ৮০টি নমুনা পরীক্ষা করে একশ’ আট জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার কমলেও কমেনি মৃত্যু। আক্রান্তদের মধ্যে সর্বোচ্চ সদর উপজেলায় ৭০ জন। ঝিকরগাছায় ১০, চৌগাছায় ১০, মনিরামপুরে ৬, অভয়নগরে ৩, বাঘারপাড়ায় ১ ও শার্শায় ৮ জন রয়েছেন। জেলায় শনাক্তের হার প্রায় ২৫ শতাংশ। এ পর্যন্ত মোট শনাক্ত হয়েছেন ১৬ হাজার আটশ’ ছয় জন। সুস্থ হয়েছেন নয় হাজার সাতশ’ ৮২ জন। মৃত্যু হয়েছে দুইশ’ ৬৩ জনের।
গত ১৫ থেকে আগামী ২৩ জুলাই পর্যন্ত কঠের বিধিনিষিধ শিথিল করেছে সরকার। ঈদ উদযাপন, ঈদে যাতায়াত, ঈদ কেন্দ্রিক ব্যবসা বাণিজ্য এবং দেশের আর্থ সামাজিক অবস্থা ও অর্থনৈতিক কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে এ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। তবে প্রজ্ঞাপনে সর্বাবস্থায় জনসাধারণকে সতর্ক অবস্থায় থাকা এবং মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করার কথাও বলা হয়েছে। কিন্তু যথাযথভাবে তা অনুসরণে আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না যশোরের মানুষ। তারা কোন কিছুর তোয়াক্কা না করে ঈদের নতুন কাপড় কিনতে ছুটছেন দোকানপাট ও শপিংমলে। এ কারণে বড়বাজার এলাকায় ও শহরের রাস্তায় সারাদিন ছিল মানুষের স্রোত। এ কারণে এদিন বেলা ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত শহরের প্রধান সড়কগুলোতে ছিল যানজট।
হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, রোগী ও স্বজনরা স্বাস্থ্যবিধি মানতে নারাজ। করোনা নমুনা দেবার জন্য রেজিস্ট্রেশন ও সংগ্রহ বুথে রোগীর দীর্ঘ লাইন। সেখানে স্বাস্থ্যবিধির কোনো বালাই নেই। সকলে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে দাঁড়িয়ে আছেন রিপোর্ট নেয়ার জন্য।
হাসপাতালের পুরুষ ও মহিলাজোনে প্রতিদিন বাড়ছে নতুন আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। এখানে রোগীর স্বজনরা অবাধে যাতায়াত করছেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এ সকল ওয়ার্ডে রোগীর স্বজনদের যাতায়াত কোনো ভাবেই আটকাতে পারছেন না। এতে করে ওয়ার্ডের রোগী ও আগত স্বজনরা চরম স্বাস্থ্য ঝুকিতে রয়েছেন।
এসব ব্যাপারে হাসপাতালের তত্ত¡াবধায়ক ডাক্তার আখতারুজ্জামান জানান, গত তিন দিন রোগী মৃত্যুর সংখ্যা কম থাকলেও হঠাৎ তা বৃদ্ধি পেয়েছে। সকলকে নিজের রক্ষা নিজেকেই করতে হবে। তা একমাত্র সম্ভব স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। হাসপাতালে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য টিকিট কাউন্টার ও বর্হিবিভাগের সামনে মাইকে ঘোষণা করা হচ্ছে। রেডজোনে কাউকে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। ইয়োলোজোনের ব্যাপারেও কঠোর হবে হাসপাতাল প্রশাসন। করোনা ও উপসর্গ নিয়ে ভর্তি রোগীদের চিকিৎসা সেবায় যে কোনো পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রস্তুত রয়েছেন তারা।
খুলনা গেজেট/ টি আই