অবৈধ অনুমোদনহীন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধের জন্য স্বাস্থ্য বিভাগের অভিযান কাগজে কলমেই রয়ে গেছে। অভিযানের একদিন পর থেকে ফের চালু হয়েছে খুলনা নগরীর বন্ধ ঘোষণা করা ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো। তারা এখনও রোগী দেখে হামলে পড়ছেন। পরীক্ষার নামে প্রতারণা করছেন নিরীহ মানুষের সঙ্গে।
খুলনা স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে জানা গেছে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের নির্দেশে গত ২৭ আগস্ট থেকে ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মহানগরীর অবৈধ অনুমোদনহীন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অভিযান চালায় স্বাস্থ্য বিভাগ। অভিযানে খুলনা মহানগরীর ৭টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও একটি ক্লিনিক বন্ধ করা হয়েছে বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে প্রতিবেদন পাঠিয়েছে খুলনার স্বাস্থ্য পরিচালক।
স্বাস্থ্য বিভাগের তালিকা ধরে নগরীর ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো ঘুরে দেখা গেছে, বন্ধের তালিকায় থাকা শান্তিধাম ল্যাব কেয়ার কনসালটেশন সেন্টারের অবস্থান নগরীর শান্তিধাম মোড়ে। পুরাতন একটি ভবনের কয়েকটি রুম নিয়ে সেন্টারটি খোলা হয়েছে। ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, রিসিপশনিস্টের টেবিলের খুলনার খ্যাতনামা চিকিৎসকের ভিজিটিং কার্ড সাজানো রয়েছে। প্রবেশেরই পরই দু’জন কী পরীক্ষা করবেন জানতে চাইলেন। বিশেষ ছাড়ে টেস্ট করার প্রস্তাবও দেন।
কিন্তু সাংবাদিক পরিচয় জেনে সেন্টারের পরিচালক জি এম ফিরোজ জানান, আপাতত ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ। স্বাস্থ্য বিভাগ পরিদর্শনে এসে কাগজপত্র ও যন্ত্রপাতি হালনাগাদ করতে বলেছে।
নগরীর শামসুর রহমান সড়কেই ল্যাব এইড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অবস্থান। বন্ধের তালিকায় রয়েছে এটিও। ভেতরে গিয়ে রক্ত ও বুকের এক্সরে করাবো জানালে রিসিপশনে থাকা এক নারী জানান, রক্ত পরীক্ষা করা যাবে, এক্সরে পাশের ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে করিয়ে এনে দেব।
স্বাস্থ্য বিভাগের পরিদর্শনের পর বন্ধের নির্দেশনা ছিলো কি-না জানতে চাইলে নাসরিন আকতার নামের ওই নারী জানান, কেউ আসেনি। বন্ধের কোনো নোটিশ দেয়নি।
বন্ধের তালিকায় থাকা বয়রা সেন্ট্রাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অবস্থান খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিপরীতে। গত ৭ সেপ্টেম্বর সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, মূল দরজা বন্ধ। হাসপাতাল থেকে মধ্য বয়স্ক এক ব্যক্তি হাতের কবজি এক্সরে করতে যান সেখানে। রোগী দেখেই ছুটে আসেন কয়েক ব্যক্তি। ওই রোগীর সঙ্গে ডায়াগনস্টিক স্টোরের ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, রিসিপশনসহ প্যাথলজি বিভাগে নারী কর্মীরা বসে আছেন।
পাশেই বন্ধের তালিকায় থাকা আরেক প্রতিষ্ঠান ‘রেডিয়েন্স ক্লিনিক্যাল অল্ট্রাসাউন্ড’। এক্সরে করা যাবে কি-না শুনতেই কয়েকজন প্রতিবেদককে ভেতরে নিয়ে যান। ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ভেতরে তখন বেশ কয়েকজন রোগী ছিলো।
নগরীর ছোট বয়রা কলা বাগান এলাকায় বেল ভিউ ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এটিও খোলা এবং কার্যক্রম চলছে। রিসিপশনে থাকা এক নারী জানান, বন্ধের কোনো নোটিশ তারা পাননি।
নগরীর হাজী মহাসিন রোডে এক্সপার্ট স্যাম্পল ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ রয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগের নির্দেশে একমাত্র তারাই কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে।
স্বাস্থ্য বিভাগের পরিদর্শন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শান্তিধাম ল্যাব কেয়ার, বয়রা সেন্ট্রাল ও রেডিয়েন্সের অনুমোদন নেই। অনুমোদনের জন্য কোনো আবেদনও করেননি তারা। ল্যাব এইড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অনেক আগে অনুমোদন ছিলো। এখন সেখানে মানসম্মত কিছুই নেই। বেল ভিউ ডায়াগনস্টিক সেন্টার অনুমোদনের আবেদন করেছেন। কিন্তু সেখানেও নানা রকম ঘাটতি দেখা যায়। ডায়াগনস্টিক সেন্টারটি বন্ধ রেখে ঘাটতি পূরণের নির্দেশনা দিয়েছিলো স্বাস্থ্য বিভাগ।
নগরীর ছোট বয়রা এলাকায় আনোয়ারা মেমোরিয়াল হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার। পরিদর্শনকালে কর্মকর্তা দেখতে পান, হাসপাতালে কোনো ডিউটি ডাক্তার ও ডিপ্লোমা নার্স নেই। প্যাথলজিক্যাল ফ্রিজে একসঙ্গে মাংস ও রক্ত রাখা হয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিষ্ঠানটি স্বাস্থ্য সম্মত নয়। সেবার মান ভালো নয়, দক্ষ লোকবলের অভাব রয়েছে।
তবে ক্লিনিক মালিককে বন্ধের কোনো নোটিশ দেওয়া হয়নি। অথচ মহাপরিচালকের কাছে পাঠানো প্রতিবেদনে ওই ক্লিনিক বন্ধের তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।
নগরীর টুটপাড়া তালতলা হাসপাতাল রোডের সূর্যের হাসি নেটওয়ার্ক ক্লিনিকের প্যাথলজি বিভাগে গিয়েও অনেক কিছুর ঘাটতি পান স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। তাদেরও শোকজ করা হয়।
এ ব্যাপারে খুলনা বিভাগের স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. মো. মনজুরুল মুরশিদ বলেন, বন্ধের নির্দেশের পরেও যদি কোনো ডায়াগনস্টিক সেন্টার চালু থাকে-তাহলে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে পাঠানো প্রতিবেদন এবং বাস্তব তথ্য দুই রকম কেন-জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি নিয়ে প্রধান সহকারীর সঙ্গে কথা বলার অনুরোধ জানান।
প্রধান সহকারী মাসুম বিল্লাহ জানান, ভুল করে মহাপরিচালকের কাছে ৮টি প্রতিষ্ঠান বন্ধের তথ্য পাঠানো হয়েছে। মূলত ৬টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করা হয়েছে। আনোয়ারা মেমোরিয়াল হাসপাতাল ও সূর্যের হাসি নেটওয়ার্ককে শোকজ করা হয়েছে।
খুলনা গেজেট/এইচএইচ/এমএম