খুলনা, বাংলাদেশ | ৮ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৩ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  রাজধানীতে ফার্মগেটে বণিজ্যিক ভবনে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ৫ ইউনিট কাজ করছে
  গাজীপুরের শ্রীপুরে পিকনিকের বাস বিদ্যুতায়িত হয়ে ৩ শিক্ষার্থী নিহত
  ঝিনাইদহে ২ ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে ট্রাক চালকের মৃত্যু

স্বামীর হত্যা নিয়ে মেয়ের বিরুদ্ধে যা বললেন মা

একরামুল হোসেন লিপু 

বাবার শাসনে ক্ষিপ্ত হন কিশোরী কন্যা। ছক আঁকেন পিতা শেখ হুমায়ুন কবিরকে চিরতরে সরিয়ে দেওয়ার। এক পর্যায়ে রাতের খাবার ও পানির সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে বালিশ চাপা দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে নিজ কন্যা । এমন অভিযোগে নিহত হুমায়ূনের স্ত্রী ও কিশোরীর মা ফারজানা আফরিন দৌলতপুর থানায় মেয়ের নামে মামলা দায়ের করেছেন। মামলা নং ১৫। তাং ১৫/৭/২০২৪। মামলার এজাহারে নিজের মেয়ে ছাড়াও অজ্ঞাতনামা আরও ২/৩ জনকে আসামি করা হয়েছে।

মামলার বাদী নিহত শেখ হুমায়ুন কবিরের স্ত্রী ফারজানা আফরিন এজাহারে উল্লেখ করেন, গত ৩ জুলাই সন্ধ্যা আনুমানিক ৭ ঘটিকার সময় তিনি ও তার মেঝ মেয়ে হুমাইরা বিনতে কবির বাইরে থেকে হেঁটে বাসায় এসে হাতমুখ ধুয়ে প্লাস্টিকের জগে রাখা পানি পান করেন। পানি পান করার কিছুক্ষণ পর তারা ঘুমিয়ে পড়েন। তাঁর স্বামী শেখ হুমায়ুন কবির মসজিদ থেকে মাগরিবের নামাজ পড়ে বাসায় এসে ফ্লোরে রাখা খাবার খেয়ে বিছানায় শুয়ে পড়েন। এ সময় আমি ঘুম ঘুম চোখে স্বামীর খাবারের থালা বাটি গুছিয়ে রেখে স্বামীর পাশে ঘুমিয়ে পড়েন। রাত ১০ টার দিকে আমার ছোট মেয়ে (শিশু হওয়ায় নাম উল্লেখ করা হলোনা) ভয়ে তার ঘুম আসছে না বলে মাকে তার রুমে ডেকে নিয়ে যায়।  দু’জনে একসঙ্গে ছোট মেয়ের রুমে ঘুমিয়ে পড়েন। মেঝ মেয়ে হুমাইরা বিনতে কবিরও তার রুমে ঘুমিয়ে পড়েন।

তিনি বলেন, পরের দিন সকালে তিনি ঘুম থেকে উঠে দেখি গেটে তালা মারা। আমার স্বামী এখনও ঘুম থেকে উঠে নাই। সাধারণত সে এত বেলা পর্যন্ত ঘুমায় না। এ সময় আমি আমার স্বামীর রুমে যেয়ে তাকে ডাক দেয়। ডাকে সাড়া না পেয়ে আমার স্বামীর মুখে ও বুকে হাত দিয়ে ডাকাডাকি করি। কোন সারা শব্দ না পেয়ে আমি আমার মেঝো মেয়ে হুমাইরা বিনতে কবিরকে ডাক দিয়ে বলি তোর বাবা মনে হয় আর নেই। এ সময় মেঝো মেয়ে আমার স্বামীর রুমে এসে ডাক চিৎকার করতে থাকলে তার বড় চাচা শেখ নজরুল ইসলাম ও প্রতিবেশীরা ছুটে আসে। এ সময় আমার স্বামীর বাম হাতের বাহুর পাশাপাশি দুটি  ছিদ্র ও বাম হাতের আঙ্গুলে রক্ত ছিল। তখন উপস্থিত অনেকেই তাকে সাপে দংশন করেছে বলে ধারণা করেন। যে কারণে থানা পুলিশকে না জানিয়ে তাকে দাফন করা হয়।

স্বামীর মৃত্যুর কয়েকদিন পর ছোট মেয়ে আমাকে ও আমার মেঝ মেয়েকে স্বেচ্ছায় জানায়,  রাতের খাবার ও পানির সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দিয়ে রাতে বালিশ চাপা দিয়ে তার বাবার মৃত্যু নিশ্চিত করে। আমি আমার ছোট মেয়ের কাছে এর কারণ জানতে চাইলে সে জানায়, তার বাবা শাসন করে। সে রাগের বশে তার বাবাকে মেরে ফেলেছে। কেউ যাতে ঘুম থেকে জেগে উঠতে পারে এজন্য আমার খাবার পানি ও মেঝ মেয়ের কোমল পানীয়তে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দেয়।

এজাহারে বাদী ফারজানা আফরিন আরো উল্লেখ করেন, তার বাবাকে সুকৌশলে মেরে ফেলার জন্য আমাকে তার কক্ষে নিয়ে যায়। আমি আমার স্বামীর প্রকৃত মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনের জন্য কবর থেকে তার মৃতদেহ উত্তোলন করে ময়না তদন্তের জন্য অনুরোধ করছি।
বাদী তার এজাহারে আরো উল্লেখ করেন, ৩ জুলাই রাত ১ ০ টা থেকে পরের দিন সকাল ৭ টার মধ্যে আমার মেয়েসহ অজ্ঞাতনামা ২/৩ জন আসামি মিলে আমার স্বামীকে রাতের খাবারের মধ্যে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করেছে।

উল্লেখ্য, ৪ জুলাই দৌলতপুর থানাধীন দেয়ানা উত্তর পাড়া জামে মসজিদ সংলগ্ন নিজ বাড়িতে মৃত্যু হয় ৫২ বছর বয়সী সুস্থ-সবল শেখ হুমায়ুন কবিরের। তার মৃত্যুর খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে প্রতিবেশী এবং স্বজনদের মধ্যে তার অস্বাভাবিক মৃত্যু নিয়ে নানান ধরনের গুঞ্জন শুরু হয়। মৃত্যুর এক সপ্তাহ পর গুঞ্জনের সত্যতা মিলে হুমায়ুন কবিরের স্বাভাবিক মৃত্যু হয়নি। তাকে হত্যা করা হয়েছে। ১২ জানুয়ারি দৌলতপুর থানায় হাজির হয়ে হুমায়ুন কবিরের ছোট মেয়ে পুলিশের কাছে স্বীকার করে সে তার বাবাকে রাতের খাবারের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে ও বালিশ চাপা দিয়ে মেরে ফেলেছে।

প্রতিবেশীদের কাছ থেকে জানা যায়, হুমায়ুন কবির দুই মেয়ে ও স্ত্রী নিয়ে দেয়ানা উত্তর পাড়া নিজ বাড়িতে বসবাস করতেন। তার কোন পুত্র সন্তান ছিল না। বড় মেয়ে দশ বছর পূর্বে প্রেম করে বিয়ে করেছে। মেঝ মেয়ে এবছর এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। হুমায়ুন কবির ব্যক্তিগত জীবনে খুব ভালো মানুষ ছিলেন। মসজিদে মুসল্লিদের সঙ্গে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতেন। হজ্ব করেছেন। দুই মেয়ের চলাফেরা ও আচার-আচরণে খুশি ছিলেন না হুমায়ুন কবির। এ নিয়ে প্রায়শই তার সঙ্গে মেয়েদের বাকবিতন্ডা হতো।

ছোট মেয়েটি এ বছর দৌলতপুর মুুহসিন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেছে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ নজরুল ইসলাম বলেন, মেয়েটি ভালো ছাত্রী ছিল। আমাদের দেখলে সালাম দিত। কুশল বিনিময় করতো। তার এমন খবর শুনে আমরা হতবাক হয়েছি।

খুলনা গেজেট/কেডি




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!