সেই ১৫ বছর আগে স্বামী হারিয়েছেন খুলনার রূপসা উপজেলার ৪নং টিএসবি ইউনিয়নের গোয়ালবাতান গ্রামের রেশমা বেগম (৩৮)। স্বামীকে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন তিনি। সংসারে দেখা দেয় চরম সংকট। অভাব-অনটনে কি করবেন সেটিও জানা ছিল না তার। নিজে অসুস্থ হয়েও পরিবার সামলাতে কাজের সন্ধানে তার এদিক-ওদিক ছুটে চলা। জীবনসংগ্রামে টিকে থাকতে অবশেষে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন মাছ ব্যবসাকে। মাত্র ২০ হাজার টাকা ব্যাংক ঋণ নিয়ে শুরু করেন মাছের ব্যবসা। জীবিকার তাগিদে প্রতিদিন মাছ নিয়ে ছুঁটে চলেন বিভিন্ন বাজারে।
উপজেলার কাজদিয়া বাজারে যেয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন প্রকার মাছ নিয়ে ব্যবসার কাজে ব্যস্ত রেশমা বেগম। ওই বাজারটিতে সে এক মাত্র নারী মাছ বিক্রেতা। এক পর্যায়ে কথা হয় তার সঙ্গে। খুলনা গেজেটকে খুলে বলেন তার জীবন সংগ্রামের কথা।
তিনি বলেন, প্রায় ১৫ বছর আগে আমার স্বামী মারা যায়। তারপর থেকে সংসারে অভাব দেখা দেয়। এরপর থেকে শুরু হয় আমার জীবন সংগ্রাম। স্বামী মারা যাওয়ার পর আমি মানুষের বাড়ি কাজ শুরু করি। আমি দিন মজুরের কাজ পর্যন্ত করেছি। কোথাও যে একটু চাকরি করবো তার সুযোগ নেই, কারণ আমি শিক্ষার আলো পায়নি। টাকার অভাবে আমার পরিবার আমাকে লেখাপড়া করাতে পারেনি। অন্যের বাড়ি কাজ করে যে টাকা পেতাম তা দিয়ে আমার সংসার চলতো না। এরপর মাত্র ২০ হাজার টাকা ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে মাছের ব্যবসা শুরু করি। আমার ছেলে-মেয়ে নেই। অনেক আগেই বাবা মারা গেছে। আমার সংসারে মা, ভাই, বোন আছে। তাদেরকে আমার দেখতে হয়। মাছের ব্যবসার ওপর দিয়ে আমার সংসার চলে।
সংগ্রামী এই নারী বলেন, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত উপজেলার কাজদিয়া বাজারে মাছ বিক্রি করে থাকি। আর বিকেলে থানার মোড় বাজারে। প্রতিদিন সকাল ৮ টায় আমি বাড়ি থেকে বের হই। বাড়ি ফিরতে রাত ১২ টা বাজে। সারদিন পথেই কাটে। আমি অসুস্থ থাকা অবস্থায় আমার স্বামী মারা যায়। সেই সময়ের রোগ শরীরে নিয়ে এখনও ভুগছি। প্রতিদিন আমার ২শ’ টাকার ওষুধ লাগে। টাকার অভাবে অনেক সময় খেতে পারিনা। তবুও আমি কারও কাছে হাত পাততে রাজি নই। অনেক লোক আমার এ পেশাকে ভালোভাবে গ্রহণ করেনি। অনেকেই হাসি-ঠাট্টা ও সমালোচনা করতো। আবার কিছু লোক সহযোগিতাও করেছেন।
তিনি বলেন, দেশের সব নারীকে কর্মক্ষেত্রে এগিয়ে আসা উচিত। লোকে কী বললো তার দিকে না তাকিয়ে কাজ করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।
কাজদিয়া বাজারের ব্যবসায়ী মিজান খাঁন বলেন, রেশমা বেগম একজন সংগ্রামী নারী। আমি নিজেও তার কাছ থেকে মাছ কিনে থাকি। অনেক সময় চক্ষু লজ্জার ভয়ে নারীরা ঘর থেকে বের হতে চান না। তবে রেশমা জীবিকার তাগিদে মাছ নিয়ে দিন রাত ছুঁটে চলেন। কোনো কাজকেই খাটো করে না দেখে, তার মতো সংগ্রামী নারীদের উৎসাহ প্রদান করা উচিত।
খুলনা গেজেট/এমএম