এক দিন কাজ করলে ৫ দিন কাজ হয় না। যে দিন এক বেলা কাজ হয় সেদিন ২০০ টাকা পাই। সেই টাকা দিয়ে কোন রকমে চলতে হয়। কখনো ঝিয়ের কাজ কখনো দিন মজুর আবার কখনো নদীতে মাছ ধরে চলছে জীবন যুদ্ধ। রাস্তার ধারে ঝুপড়ি ঘরে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে মা ছেলে।
আমি লেখা পড়া জানি। আমার যদি কোথাও একটা চাকরি হতো তাহলে ছেলেকে নিয়ে খেয়ে পরে জীবন বাঁচাতে আর আমার ছেলেকে পড়া-শুনা শিখিয়ে মানুষের মত মানুষ করতে পারবো। শুনেছি সরকার ভূমিহীনদের ঘর দিচ্ছে আমারও যদি একটা ঘর হয় তাহলে সন্তান নিয়ে নিরাপদে থাকতে পারবো। – দু’কূল হারা মাহফুজা
খুলনার কয়রা উপজেলার বাগালি ইউনিয়নের ফতেকাটি গ্রামের মরহুম আতিয়ার রহমানের ছোট মেয়ে মাহফুজা বেগম এর সহিত পারিবারিক সমন্ধের মাধ্যমে পাইকগাছা উপজেলার মৌখালী গ্রামের বাপ্পি হোসেন সাথে বিয়ে হয়। বিয়ের পরে স্বামীর সংসার থেকে আলেম পরিক্ষা দিয়ে কৃতজ্ঞতার সাথে উত্তীর্ণ হয়। শ্বশুর বাড়ির সংসার সামলাতে আর হয়ে ওঠেনি লেখাপড়া। সে সময় বিয়েকে তিনি ভেবে নিয়েছিলেন বেঁচে থাকার নতুন স্বপ্ন, নতুন জীবন। কিন্তু তার স্বপ্ন, দুঃস্বপ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছিলো। বিয়ের কিছু দিন পর পিতার মৃত্যুর পরে স্বামী যৌতুকের দাবি করে শুরু করেন নতুন নতুন আবদার। স্বামীর আবদার পূরণ না করাই প্রতিনিয়ত স্বামী শ্বাশুড়ির নির্যাতন সহ্য করতে হতো। ইতিমধ্যে মাহফুজার কোল আলো করে জন্ম হয় পুত্র সন্তান। কিছু দিন পর স্বামী তাকে ফেলে রেখে অন্য জায়গায় নতুন বিয়ে করে সংসার শুরু করে। এদিকে শ্বাশুড়ির নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে বাবার বাড়ি চলে আসলেও একমাত্র ছেলেকে নিয়ে মাহফুজা ঠাঁই নিয়েছিলেন ভাইদের কাছে।
স্বামীর সংসারে ফিরে যেতে গ্রাম্য আদালতে মামলা করলে স্থানীয় চেয়ারম্যান মেম্বর ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের মাধ্যমে শালিসি মিমাংসার মাধ্যমে শ্বাশুড়ি নূরজাহান বেগম তাকে ফিরিয়ে নিয়ে যান এবং আশ্বাস দেন তার ছেলেকে ফিরিয়ে নিয়ে আসবেন। তখন নতুন করে এক মাত্র ছেলেকে নিয়ে আবার ও স্বপ্ন দেখলেন স্বামীর সংসার করবেন। কিছু দিন পর আবারও শুরু হয় শ্বাশুড়ির নির্যাতন। খেয়ে না খেয়ে শ্বাশুড়ির নির্যাতন সহ্য করে পড়ে ছিলেন স্বামীর সাথে সংসার করবেন বলে। শ্বাশুড়ির নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে পুনরায় ফিরে আসেন বাবার বাড়ি তবে এবার আর ঠাই হলোনা ভাইদের কাছে। ভাইয়েরা মাহফুজাকে বোঝা মনে করে কোনো পাত্তা না দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। এমনকি তার ওয়ারেশ সূত্রে প্রাপ্ত অংশও ভাইয়েরা দিতে অস্বীকার জানায়।
দু’কূল হারা মাহফুজা নিরুপায় হয়ে রাস্তার ধারে নদীর চরে দোচালা একটি ঝুুুপড়ি বেঁধে শুরু করেন মা ছেলের সংসার। জীবন যুদ্ধে টিকে থাকতে বিভিন্ন এনজিওতে চাকরির চেষ্টা করলেও মেলেনি কোন চাকরি। এরপর শুরু করেন অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ, কখনো দিন মজুর কখনো নদীতে মাছ ধরা। তবে এবার ভাইরা তাকে সেখান থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনায় লিপ্ত বিভিন্ন সময়ে ভাই ভাবিদের অমানবিক নির্যাতন সহ্য করতে হয়। এমনটি জানা গেছে মাহফুজার সাথে কথা বলে।
তিনি আরও বলেন, আমি লেখা পড়া জানি। আমার যদি কোথাও একটা চাকরি হতো তাহলে ছেলেকে নিয়ে খেয়ে পরে জীবন বাঁচাতে আর আমার ছেলেকে পড়া-শুনা শিখিয়ে মানুষের মত মানুষ করতে পারবো। শুনেছি সরকার ভূমিহীনদের ঘর দিচ্ছে আমারও যদি একটা ঘর হয় তাহলে সন্তান নিয়ে নিরাপদে থাকতে পারবো।
খুলনা গেজেট/এনএম