খুলনা মহানগর জাতীয় পার্টির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং শিল্প ও বণিক সমিতির সাবেক সভাপতি শেখ আবুল কাশেম হত্যা মামলা উচ্চ আদালতে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার সংক্রান্ত আদেশের পর অনুলিপিতে সহকারী রেজিস্ট্রার স্বাক্ষর করেছেন ১৮ মাস পর। আর তা খুলনার ট্রাইব্যুনালে পৌঁছাতে লেগেছে আরও ১১ মাস। বিষয়টি ‘অতীব গুরুত্বপূর্ণ’ হিসেবে বিবেচনা করে সুপ্রীম কোর্টের রেজিস্ট্রারকে অবহিত করে জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এ বছরের ২৭ জানুয়ারি পত্র প্রেরণ করেছেন ।
আদালত সূত্র জানায়, জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন ৪০/১৯৯৭ নং দায়রা মামলাটি (খুলনা থানার মামলা নং-৩৫, তারিখ ২৫/০৪/১৯৯৫, জি.আর-৪০৫/৯৫) স্মরণকালের চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলা। দীর্ঘদিন উচ্চ আদালতের ক্রিমিনাল মিস-৯২৩১/২০১৪ ( ধারা ৫৬১-এ ফৌঃ কাঃ বিঃ ) গত ২০১৫ সালের ১২ আগস্ট আদেশে রুল নিস্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এ মামলার সকল বিচার কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। কিন্তু ক্রিমিনাল মিস-৯২৩১/১৪ নং মামলা ২০১৮ সালের ২ আগস্ট রুলটি ডিসচার্জ করে আদালত আদেশে উল্লেখ করেন যে- The interim order of stay upon the proceedings of the Sessions case no. 40 of 1997 pending in the court of the learned Special Sessions Judge and Jana Nirapatta Bighnakari Aparad Damon Tribunal, Khulna is hereby recalled and vacated . The office is directed to communicate this judgment and order immediately.
উচ্চ আদালতের উক্ত আদেশ থাকা সত্ত্বেও ২০১৮ সালের ২ আগস্ট তারিখের আদেশটি বিচারিক আদালতে পৌঁছায় দুই বছর ৫ মাস পর। উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ২ আগস্ট স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার সংক্রান্ত অনুলিপিটি সহকারী রেজিস্ট্রার মোঃ জাকির হোসেন পাটোয়ারী কর্তৃক স্বাক্ষরিত হয় ১৮ মাস পর গত বছরের ২ ফেব্রুয়ারি। বিষয়টি ‘অতীব গুরুত্বপূর্ণ’ হিসেবে বিবেচনা করে সুপ্রীম কোর্টের রেজিস্ট্রারকে অবহিত করা হয়েছে বলে আদালতের সূত্রটি জানায়।
খুলনার এ চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলাটি ২৬ বছর ধরে চলছে। ১৯৯৫ সালের ২৫ এপ্রিল খুলনা থানার সন্নিকটে নগর জাপা নেতা ও পশ্চিম বানিয়াখামারের হাজী বাড়ির সন্তান শেখ আবুল কাশেম ও ড্রাইভার মিকাঈল হোসেন দুপুর পৌনে ২টায় খুন হন। পরদিন নগরীতে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালিত হয়। পরদিন নিহতের নিকট আত্মীয় রূপসা উপজেলার দেয়াড়া গ্রামের মৎস্য ব্যবসায়ী শেখ আলমগীর হোসেন বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। গত ২৬ বছরে স্থানীয় রাজনীতিকরা এ হত্যার সুষ্ঠু বিচার দাবি করে আসছেন। বিশেষ করে জাতীয় পার্টির প্রয়াত চেয়ারম্যান জেঃ (অবঃ) এইচ এম এরশাদ খুলনা সফরে এলে কাশেম হত্যার দ্রুত বিচার দাবি করতেন। জাতীয় সংসদে এ দাবি উত্থাপন হয়েছে।
শেখ আবুল কাশেম হত্যা মামলায় আসামিরা হচ্ছেন সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল গফ্ফার বিশ্বাস, তরিকুল হুদা টপি, মফিজুর রহমান, ওয়াসিকুর রহমান, মুশফিকুর রহমান, আনিছুর রহমান ওরফে মিল্টন ও মো. তারেক।
আদালতের পিপি আরিফ মাহমুদ খুলনা গেজেটকে জানিয়েছেন, সাক্ষীদের মধ্যে তদন্তকারী কর্মকর্তা, অপর সাক্ষী কেসিসি’র কমিশনার আছাদুজ্জামান লিটু, সৈয়দ মনিরুল ইসলাম ও কেসিসি’র সাবেক ডেপুটি মেয়র ইখতিয়ার উদ্দিন বাবলুও ইন্তেকাল করেছেন।
মামলার পরবর্তী দিন আগামী ৩ মার্চ। মামলার ধার্যদিনে উপস্থিত থাকার স্বাক্ষীদের সমন দেয়া হয়েছে।
নিহতের পরিবারের নিরাপত্তা চেয়ে ৩ নং সাক্ষী শেখ মনিরুজ্জামান এলু’র ২৬ জানুয়ারি আবেদনের প্রেক্ষিতে ট্রাইব্যুনাল নিহত শেখ আবুল কাশেমের পরিবারের নিরাপত্তার নির্দেশ দিয়েছেন। স্বাক্ষীর আবেদন ও ট্রাইব্যুনালের এ আদেশ কেএমপি কমিশনারকে পাঠানো হয়েছে। এরপরও আসামিরা ভয়ভীতি প্রদর্শন অব্যাহত রাখায় গত ১৬ ফেব্রুয়ারি শেখ মনিরুজ্জামান এলু খুলনা থানায় নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তা চেয়ে জিডি করেছেন, যার নং ৮১৮।
খুলনা গেজেট/ টি আই