খুলনা, বাংলাদেশ | ১৪ কার্তিক, ১৪৩১ | ৩০ অক্টোবর, ২০২৪

Breaking News

  দ্রুতই সিটি করপোরেশন, জেলা-উপজেলা পরিষদ ও পৌরসভায় স্থায়ীভাবে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হবে : স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা
  খাগড়াছড়ির পানছড়িতে দুর্বৃত্তদের গুলিতে ইউপিডিএফের ৩ কর্মী নিহত
  খুলনার রূপসায় কোস্ট গার্ডের অভিযানে বোমা, অস্ত্র-গুলি ও মাদকসহ ডাকাত দলের ৪ সদস্য আটক
  নড়াইলের তুলারামপুরে গরু চোর সন্দেহে তিনজনকে পিটিয়ে হত্যা
  চট্টগ্রামে জুস কারখানায় আগুন, এক ঘণ্টার চেষ্টায় নিয়ন্ত্রণ এনেছে ফায়ার সার্ভিস

সুন্দরবনে একদিন

সুমন বিপ্লব

“মশা মারতে কামান দাগার প্রয়োজন ছিল না” কথা গুলি বলেছিলেন একজন ফরেস্ট অফিসার আমার চাচাতো বোনের ছেলে শাহিন গাজীকে কেন বলেছিলেন লেখাটি পড়তে থাকুন। কারণ পেয়ে যাবেন। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসের প্রথম দিকে আমার ছোট ভাই মুকুল আমাকে ও ভাগনে অর্ণব হাসানকে বলেছিল সুন্দরবনে খুলনা, শাহ্পুর বাজার থেকে ১৬ ডিসেম্বর পিকনিকে যাবে আমরা যাব কিনা। আমরা যেতে রাজি হয়ে গেলাম। আমি ছাড়া আমাদের বাড়ির প্রায় সবাই সুন্দরবনে গেছে। সুন্দরবনে যাওয়ার স্বপ্ন সেই ছোট বেলা থেকে। দীর্ঘদিন বাইরে ছিলাম বলে যাওয়া হয়ে উঠিনি। আমাদের গ্রাম থেকে বছরে ২/১ বার পিকনিকে যায়।

১৫ ডিসেম্বর রাতে মুকুল জানালো, সকাল ৬ টায় বাজারে পৌঁছাতে হবে। রাত তিনটায় ঘুম ভেঙ্গে গেল। আর ঘুম আসে না প্রতিদিনের মত মেডিটেশন করে পোশাক পরে আমরা বাজারে চলে আসি। সাথে মুকুলও ছিল। তখনো সবাই আসিনি। কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করে গাড়িতে উঠি। গাড়ি চলতে থাকলো অনেকে চিনতে পারলেন। আমার ক্লাসমেট আশরাফুল তার ছেলেকে নিয়ে এসেছে। শাহিনকে দেখলাম। খুলনা থেকে চাচাতো ভাই মান্নান ফকিরের ছেলে তিতাশ তার ছেলেকে নিয়ে গাড়িতে উঠলো।

সকাল ৮ টায় গাড়ি এসে বটিয়াঘাটায় থামলো। আমরা ইঞ্জিনের নৌকার ছাদের পরে উঠলাম। এক সময় নৌকা চলতে থাকলো। আমি নদীর দু’পাশের দৃশ্য উপভোগ করতে থাকলাম। নৌকা এক সময় চালনা বাজারে এসে থামলো। এই চালনা ছিল বাংলাদেশের দ্বিতীয় নদী বন্দর। বন্দর এখন মোংলায় চলে গেছে। রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র দেখতে পেলাম। নদীতে অনেক জাহাজ নোঙর ফেলে দাঁড়িয়ে আছে। বৃহৎ একটি খাদ্য সংরক্ষণাগার দেখতে পেলাম। একটি জাহাজ থেকে গম উপরে যাচ্ছে, অন্য একটি জাহাজে আটার বস্তা পড়ছে। বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে নৌবাহিনীর যুদ্ধ জাহাজ গুলি সাজিয়ে রাখা হয়েছে। দুর থেকে হিরণ পয়েন্ট দেখতে পেলাম। তীরে এক স্থানে সাইনবোর্ডে ডলপিনের ছবি ও লেখা দেখলাম অর্ণব হাসান লেখা পড়তে না পড়তে আমাদের সামনে লাফিয়ে উঠল দুটি ডলপিন। নৌকা এক সময় হাড়বাড়িয়া পর্যটন কেন্দ্রে এসে থামল আমরা সবাই নামলাম। নামতেই কয়েকটি বানর দেখতে পেলাম। নদীতে পানি, জমিতে গাছ আর গাছ। এখানে কয়েকটি বিল্ডিং। সামনে খোলা জায়গা। বসার সুব্যবস্থা করা হয়েছে। শাহিনসহ কয়েকজন বন অফিসে গেল। অফিসারের নিকট থেকে পাস নিতে হবে ভিতরে ঘোরার জন্য। ৫ হাজার টাকা চাইলেন! শাহিন জানালো অধিকাংশ লোক গরীব, আমরা ২ হাজার টাকা দিতে পারব। অফিসার নিতে রাজী হল না। শাহীন তখন খুলনার একজন উর্দ্ধতন কর্মকর্তাকে জানালো তিনি অফিসারের হাতে মোবাইল দিতে বললেন। শাহিন হাতে দিতেই অফিসার শুধু জী স্যার, জী স্যার, বলতে শুরু করলেন। শাহিনের হাতে মোবাইল দিয়ে ওই বিখ্যাত উক্তিটি বলেছিলেন ও পাস দিলেন। আমরা সুন্দরবনের ভিতরে যাত্রা করলাম।

বনে ঢুকতেই দেখতে পেলাম বড় একটা পুকুর। পুকুরে ফুটে আছে লাল শাপলা। পাশে অনেক উঁচু শাপলা টাওয়ার। আমাদের সাথে ছিলেন শাপলা বেগম নামের একমাত্র মহিলা। আর ৪১ জন পুরুষ। কে যেন বলে উঠল, “ও শাপলা আপা আপনার টাওয়ার।” আমরা পুকুরের ডানপাশ দিয়ে হাঁটা শুরু করলাম। কিছু দূর যেতে তিতাশের ছেলে আরিয়ানের সাথে ছবি তুললাম। বনের মধ্যে দিয়ে এক গজ চওড়া পুল। পুলের দুপাশ দিয়ে নানা রকম গাছ। পুলের দুপাশ দিয়ে রেলিং। বাঘ সহজে আক্রমণ করতে পারবে না। কাঁচা মাটিতে হরিণের পায়ের ছাপ দেখা যাচ্ছে। আমরা হাঁটতে হাঁটতে পুকুরের পশ্চিম পাশে চলে এলাম। অনেকেই পুকুরে গোসল করছে, আমরা কেউ কেউ বনের মধ্যে যাচ্ছিল। গার্ড জানালো একঘন্টা আগে বাঘ হেঁটে গেছে। ভিতরে যেতে নিষেধ করলেন। আমরা টাওয়ারের উপরে উঠলাম। টাওয়ারে উঠলে বনের অনেক দুর পর্যন্ত দেখা যায়। তিনটার দিকে সবাই নৌকায় চলে এলাম। নৌকা চলতে শুরু করল। আসার সময় আমরা বাগেরহাটের পাশ দিয়ে এসেছিলাম এবার খুলনার পাশে নৌকা নিতেই হরিণ দেখতে পেলাম। নৌকা থামিয়ে হরিণ দেখে দেখে ভাত খেতে থাকলাম। হরিণেরা ঘাস খাচ্ছে আর আমাদের দিকে তাকাচ্ছে।

বাড়ি থেকে আম্মা, রাজু, মুকুল ও সাথী মোবাইল করে খোঁজ নিয়েছে। আমি শুধু আম্মার কাছে মাঝে মাঝে ফোন করেছি। মাঝির কাছ থেকে বাঘ দেখার গল্প শুনলাম। সুন্দরবনের বৈশিষ্ট্য জলে কৃমির আর ডাংগায় বাঘ। এ দুটি ভয়ংকর প্রাণীর সাথে দেখা হল না। ঢাকা চিড়িয়াখানায় কুমির ও বাঘ দেখেছি কিন্তু সুন্দরবনের বাঘ না দেখার দুঃখ নিয়ে ফিরতে হল।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!