খুলনা, বাংলাদেশ | ২২ আশ্বিন, ১৪৩১ | ৭ অক্টোবর, ২০২৪

Breaking News

  সাবেক পরিবেশমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সাবেক সিনিয়র সচিব আমিনুল ইসলাম খান গ্রেপ্তার
  দেশে ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৪ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১২২৫
  পোল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত হিসেবে খোরশেদ আলমের নিয়োগ বা‌তিল : পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
  সাবেক মন্ত্রী আব্দুর রহমানের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
ফুল থেকে পাকা পর্যন্ত ৫ বার রং পাল্টায়

সুগন্ধী ধান ‘তুলশীমালা’ পদ্মার এপারে প্রথম চাষ বটিয়াঘাটায়

নিজস্ব প্রতিবেদক

ধানের নাম তুলশীমালা। স্থানীয় প্রজাতির বিলুপ্ত প্রায় অত্যন্ত উচ্চমানের সুগন্ধী ধানের জাত এটি। ময়মনসিংহের বিভাগের শেরপুর জেলা ও আশপাশের কিছু এলাকায় চাষীরা শখের বসে জামাই বা আত্মীয়-স্বজন আপ্যায়নে এই সুগন্ধী ধান চাষ করে থাকেন।

কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের হিসাব মতে, দেশে মাত্র ২০-২৫ হাজার হেক্টর জমিতে এই ধান চাষ হয়। এর শতকরা ৫০ ভাগই আবাদ হয় শেরপুর জেলায়। উচ্চফলনশীল না হলেও এই ধানের চালের কদর এখনও বেশি। সুগন্ধী কালোজিরা ধানের চালের চেয়েও আকারে ছোট সুগন্ধী তুলশীমালা ধানের চালের যে কোনো পদের খাবার অত্যন্ত সুস্বাদু হয়। ধান, ধানের খড় থেকে শুরু করে মাঠময় সুগন্ধ ছড়ায়। পল্লীকবি জসীম উদ্দীন তার কবিতায় শালি, বিন্নি ধানসহ যে কয়টি প্রাচীন সুগন্ধী উন্নতমানের ধানের উল্লেখ পাওয়া যায় তুলশীমালা তারই একটি বলে ধারণা কৃষি বিশেষজ্ঞদের।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ময়মনসিংহ অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক জানান, গত আমন মৌসুমে এ অঞ্চলে ২১ হাজার ৩০৩ হেক্টর জমিতে তুলশীমালা চাষ হয়। এর মধ্যে শেরপুর জেলায় সর্বোচ্চ ১২ হাজার ১৬ হেক্টর জমিতে চাষ হয়। হেক্টর প্রতি চালের উৎপাদন ১.৫৭ মেট্রিক টন।

পদ্মার এপার ২০টি জেলার মধ্যে তুলশীমালা ধানের এই জাতটি গত আমন মৌসুমে প্রথম চাষ হয় বটিয়াঘাটা উপজেলার দাউনিয়াফাদ গ্রামে। পাশের গুপ্তমারী গ্রামের রণজিৎ মন্ডল ৫ শতক জমিতে এই ধান চাষ করেন। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ বিভাগের পরিচালক এস এম আতিয়ার রহমান শখের বশে শেরপুর থেকে এই ধানের মাত্র ২ কেজি বীজ সংগ্রহ করে ওই কৃষককে দেন এবং চাষ তত্ত্বাবধান করেন।

তিনি জানান, এই ধানটি লবণাক্ত ঊপকূলীয় এলাকায় হবে কিনা সে বিষয়ে সন্দেহ ছিলো। কিন্তু বাস্তবে ভালো হয়েছে। বটিয়াঘাটার স্থানীয় রানী স্যালুট, হরকোচ, কাচড়া জাতের ১টি ধানের আকার ও ওজনের সমান তুলশীমালা ধানের ৩টি ধান। তুলশীমালা এতোটাই ছোট আকারের এবং রং পাকলে ধানের ছড়া দেখে সত্যিই মনে হয় তুলশীর কাঠ দিয়ে গাঁথা মালার মতো।

তিনি আরও জানান, এই ধানের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য ধানের ফুল আসার পর থেকে পাকা পর্যন্ত ৫ বার রং পাল্টায়। প্রথমে হালকা সবুজাভ, এরপর কিছুটা অ্যাশ, এরপর হালকা জাম রং, এরপর গাড় জাম রং এবং শেষে কালো ও অ্যাশ মিলিয়ে নতুন একটি রং ধারণ করে। ধানের গাছের উচ্চতা ৫০-৫২ ইঞ্চির মতো। ধানের আয়ুষ্কাল ১১০-১২০ দিন। একটি শীষে ৯০-১২০টি ধান পাওয়া যায়। ৫ শতক জমিতে দেড় মণ ধান পাওয়া গেছে। সে হিসেবে একর প্রতি ৩০ মণ ধানের ফলন হয়েছে। সবটুকু ধানই বীজ হিসেবে আগামী আমন মৌসুমে লাগানোর জন্য সংরক্ষণ করা হয়েছে। তুলশীমালা ধান দেখে অনেকেই চাষ করতে বীজের চাহিদা জানিয়েছেন। এর মধ্যে এ বছর ৫-১০ জনকে কিছু বীজ দিয়ে চাষ সম্প্রসারণে সহযোগিতা করা হবে বলে তিনি জানান। মূলত বিলুপ্তপ্রায় স্থানীয় জাতের তুলশীমালা ধানকে টিকিয়ে রাখা, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে চাষ সম্প্রসারণ এবং উন্নতমানের চাল ব্যবহারকারী সৌখিন ক্রেতাদের জন্য এই ধানের চাষ করা হয় বলে তিনি জানান। অত্যন্ত প্রাচীন জাতের স্থানীয় জলবায়ু সহিষ্ণু এই ধানের চাল অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। এছাড়াও মূল্যবান ভিটামিন ও মিনারেলসহ অন্যান্য গুণ রয়েছে। বাজারে তুলশীমালা ধানের চাল খুব কম পাওয়া যায়। তবে ঢাকা ময়মনসিংহ বিভাগে পাওয়া যায় বেশি। প্রতিকেজি চাল ১২০-১৪০ টাকা দরে বিক্রি হয়। তুলশীমালা ধানের চালই দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ দামে বিক্রি হয়।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালযের এগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিনের প্রফেসর ড. মোঃ মনিরুল ইসলাম তাঁর ল্যাবে এই ধান নিয়ে অধিকতর গবেষণা করে চালের কিছু বৈশিষ্ট্য অন্য কোনো জাতে প্রবেশ করানো যায় কিনা সে ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছেন। ইতোমধ্যে তিনি এই ধানের বীজ সংগ্রহে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন এবং আগামী মৌসুমে গবেষণার জন্য তা লাগাবেন এবং টিস্যুকালচারও করবেন বলে জানান।

খুলনা গেজেট/ এস আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!