খুলনা, বাংলাদেশ | ২০ আশ্বিন, ১৪৩১ | ৫ অক্টোবর, ২০২৪

Breaking News

  সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী ইন্তেকাল করেছেন

সিএন্ডএফ নির্বাচনে অর্থ বাণিজ্যের অভিযোগ, মনোনয়নপত্র কেনায় পুলিশের বাধা!

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা

সাতক্ষীরায় পুলিশের বাধার মুখে যথাসময়ে মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেননি ভোমরা স্থলবন্দর সিএন্ডএফ এজেন্টস্ অ্যাসোসিয়েশনের কার্যনির্বাহী কমিটির ত্রিবার্ষিক নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে ইচ্ছুক প্রার্থীরা।

ঘোষিত তফশিল অনুযায়ি সোমবার (৯ মে) মনোনয়নপত্র বিক্রির শেষ দিনে প্রার্থীরা কেউ অ্যাসোসিয়েশনের অফিসে নির্বাচন কমিশনের নির্ধারিত কার্যালয়ে ঢুকতে পারেনি। যে কারনে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করতে অ্যাসোসিয়েশনের অফিসের সামনে দীর্ঘ সময় কাটিয়ে হতাশ হয়ে ফিরে যেতে হয়েছে তাদের।

ফলে দুই কোটি টাকা বাণিজ্যের মধ্য দিয়ে সাতক্ষীরায় ফের গঠিত হতে যাচ্ছে ভোমরা স্থলবন্দর সিএন্ডএফ এজেন্টস্ অ্যাসোসিয়েশনের পাতানো নির্বাচনের কমিটি।

স্থানীয় একজন প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধি ও কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তার ছত্রছায়ায় সোমবার অজ্ঞাত স্থানে ব্যবস্থা করা হয় অ্যাসোসিয়েশনের কার্যনির্বাহী কমিটির নয়টি পদের বিপরীতে তাদের পছেন্দের নির্ধারিত নয়জনের মনোনয়নপত্র বিক্রি কার্যক্রম।

সিএন্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা জানান, সোমবার ছিল কমিটির নির্বাচনের ঘোষিত তফশিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র ক্রয়ের দিন। সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হলেও এই সময়ের মধ্যে সিএন্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনে নির্বাচন কমিশনের কোনো সদস্য হাজির হননি। অন্যদিকে সেখানে ছিল পুলিশের উপস্থিতি।

নির্বাচনে আগ্রহী সদস্যরা জানান, তারা যথাসময়ে মনোনয়নপত্র ক্রয়ের জন্য সেখানে উপস্থিত হয়েও কমিশনের কোনো কর্মকর্তার দেখা পাননি। এমনকি মোবাইল ফোনে তাদের সঙ্গে কথাও বলতে পারেননি।

সিএ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশন ভবনে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা কোনো ব্যক্তিকে সেখানে ঢুকতে দেননি। ফলে মনোনয়নপত্র ক্রয়ের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পর হতাশ হয়ে তাদের ফিরে যেতে হয়েছে।

সিএন্ডএফ ভবনে মনোনয়ন কিনতে যাওয়া সদস্যদের প্রকাশ্যে পুলিশ বাধা দিলে সাংবাদিকরা সেই ছবি তুলতে চান। কিন্তু সেখানে সাংবাদিকদের কাজে বাধা দেন সাতক্ষীরা ডিবি পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। পরে সাংবাদিকরা সেখানে থাকা চেয়ারে বসলে একপর্যায়ে অজুহাত দেখিয়ে সাংবাদিকদের চেয়ার থেকে তুলে দেওয়া হয়।

এদিকে নির্বাচন কমিশনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য ভোমরা সিএন্ড এফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের আহবায়ক মিজানুর রহমান প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে একটি বিবৃতি দিয়েছেন।

বিবৃতিতে তিনি বলেন, আমি মিজানুর রহমান গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি যে, আসান্ন ত্রি-বার্ষিক নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মনোনয়ন পত্র সংগ্রহের নির্ধারিত দিনে একটি পাতানো নির্বাচনের নাটক মঞ্চস্ত করা হয়েছে। পুলিশের বাধার মুখে কোন প্রার্থী মনোনয়ন পত্র ক্রয় করতে পারে নি। আজ ৯ মে সোমবার সকাল ৯ টা থেকে দুপুর ১ টা পর্যন্ত মনোনয়ন পত্র বিক্রয়ের সময় নির্ধারণ করা হলেও ঐ সময়ের মধ্যে তিন সদস্য বিশিষ্ট নির্বাচন কমিশনের কোন সদস্যকে ভোমরা সিএন্ড এফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের কার্যালয়ে দেখা যায় নি। অথচ মনোয়য়ন পত্র বিক্রির নির্ধারিত স্থান ছিলো ভোমরা সিএন্ড এফ এজেন্ট এসোসিয়েশন ভবনের নির্বাচন কমিশনারের কার্যালয়। আমি সকাল ৯ টার আগেই ভোমরা সিএন্ড এফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের কার্যালয়ে পৌঁছে দেখতে পাই বিশাল পুলিশ বাহিনী এসোসিয়েশনের ভবন কর্ডন করে রেখেছে। আমি নিজে ভবনের নিজস্ব অফিস কক্ষে অবস্থান করতে থাকি। কিছু সময় পর আহবায়ক কমিটির অন্যতম সদস্য রামকৃষ্ণ চত্রবর্তী এসোসিয়েশন ভবনে আসলে তিনি পুলিশের বাঁধার সম্মুখিন হন। খবর পেয়ে আমি অফিস থেকে বাইরে এসে দেখতে পাই, রামকৃষ্ণ চক্রবর্তী পুলিশের বাধার মুখে পড়ে ভবনের গেটে অবস্থান করছেন। আমি বিষয়টি কর্তব্যরত পুলিশ অফিসারদের জানাই যে, তিনি এসোসিয়েশন একজন সম্মানিত কর্মকর্তা। তাকে ভবনের ভিতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হোক। কিন্ত কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যরা তাকে ভিতরে ঢুকতে দেয়নি। এমনকি পরবর্তিতে আমি নিজেও আমার অফিস কক্ষে যেতে চাইলে আমাকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। পরবর্তিতে দেখতে পাই আসন্ন নির্বাচনে বিভিন্ন পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করার জন্য ভোমরা সিএন্ড এফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের সদস্য আব্দুল মোমেন খান চৌধুরী সান্টু, আবু মুসা, মোস্তাফিজুর রহমান নাছিম, রাইসুল হক টুকু, আক্তার হোসেন পানি, আব্দুল মোমিনসহ বেশ কয়েকজন সম্মানিত সদস্য মনোনয়ন পত্র ক্রয়ে করতে এসে পুলিশী বাঁধার সম্মুখিন হয়ে ফিরে যান।

দিনভর নির্বাচন কমিশনার মোঃ আশরাফুল ইসলাম, সদস্য সচিব জালাল উদ্দিন আকবর ও সদস্য এস এম আব্দুস সালামকে নির্বাচন কমিশনের জন্য নির্ধারিত এসোসিয়েশনের ভবনের রুমে দেখা যায়নি।

কিন্ত সন্ধ্যায় নির্বাচন কমিশনারের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে কার্যনির্বাহী কমিটির ৯টি পদের বিপরীতে ১৮ টি মনোনয়ন পত্র বিক্রির ঘোষনা দেখে আমি বিষ্মিত হয়েছি। তারা অজ্ঞাত স্থানে থেকে কিভাবে ১৮ মনোনয়ন পত্র বিক্রি করলেন তা আমার বোধগম্য নয়।

প্রকৃত ঘটনা এই যে, আসন্ন ত্রি-বার্ষিক নির্বাচনে বিএনপি পন্থী সিএন্ড এফ এজেন্ট কাজী নওশাদ দিলওয়ার রাজু ও নব্য আওয়ামী লীগ নেতা মাকসুদ খান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পদ দখল করার জন্য এক জঘন্য তৎপরতায় লিপ্ত হয়েছেন। তারা নির্বাচন কমিশনকে ম্যানেজ করে যে ১৮ টি মনোনয়ন পত্র ক্রয় করেছেন তা অবিশ্বাস্য। এমনকি সিএন্ড এফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের যে কয়েকজন সদস্যের নামে মনোনয়ন পত্র ক্রয় করা হয়েছে, তারা নিজেরাও জানে না কে বা কারা এবং কোথা থেকে তাদের নামে মনোনয়ন পত্র ক্রয় করা হয়েছে। বিষয়টি খুলনা বিভাগীয় শ্রম আদালদের আদেশের পরিপন্থি’। সুতরাং, নির্বাচন কমিশনের এহেন কর্মকান্ডসহ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য ভোমরা সিএন্ড এফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের সকল সদস্যদের সজাগ থাকার জন্য আহবান জানাচ্ছি।

সিএন্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি আশরাফুজ্জামান আশু, সাবেক আহ্বায়ক এজাজ আহমেদ স্বপন, বর্তমান আহ্বায়ক মিজানুর রহমান এবং সদস্য রামকৃষ্ণ চক্রবর্তীসহ অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তারা অভিযোগ করে বলেন, দুই কোটি টাকা উৎকোচ হিসেবে একজন জনপ্রতিনিধি ও কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। আর তারাই এই নির্বাচনের প্রধান নিয়ামক হিসেবে কমিশনকে হাতের মুঠোয় ফেলে অজ্ঞাত কোনো স্থানে নিয়ে এসে মনোনয়নপত্র বিক্রির ব্যবস্থা করেছেন। আমরা এই পাতানো নির্বাচনের প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং এর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্ততি নিচ্ছি।

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার আশরাফুল ইসলাম খোকনের সঙ্গে তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!