সাতক্ষীরার কলারোয়ায় শেখ হাসিনার গাড়ী বহরে হামলা মামলায় আরো ৫ জন স্বাক্ষীর স্বাক্ষ্য গ্রহন করেছে আদালত। সাতক্ষীরা চীপ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হুমায়ুন কবিরের আদালতে রবিবার (২২নভেম্বর) দুপুরে স্বাক্ষীদের জবানবন্দী রেকর্ড করা হয়।
আলোচিত এই মামলার অন্যতম স্বাক্ষী তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার সফরসঙ্গী কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা জুবাইদুল হক রাসেল, রমনা থানা যুব মহিলা লীগের সাবেক নেত্রী ফাতেমা জামান সাথি, তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত ফটো সাংবাদিক শহিদুল ইসলাম জীবন, সৈনিক লীগের কেন্দ্রী নেতা সরদার মুজিব এবং সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সভাপতি অধ্যক্ষ আবু আহমেদ আদালতে স্বাক্ষ্য দিয়েছেন। এনিয়ে মামলার ৩০ জন স্বাক্ষীর মধ্যে ১৫ জনের স্বাক্ষ্য গ্রহণ করেছে আদালত। তবে সুপ্রীম কোর্টের এ্যাপিলেট ডিভিশনের চেম্বার জজ আদালতে লিভ টু আপীল শুনানীর জন্য দিন ধার্য্য হওয়ায় সাক্ষীদের জেরা করেননি আসামী পক্ষের আইনজীবীরা।
সাতক্ষীরা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর এড. আব্দুল লতিফ জানান ২০০২ সালের ৩০ আগস্ট সাতক্ষীরার কলারোয়ায় তৎকালিন বিরোধী দলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে হামলা মামলায় ইতিপূর্বে ১০ জন স্বাক্ষীর স্বাক্ষ্য গ্রহন সম্পন্ন হয়। আলোচিত এই মামলায় আরো ৫ জন স্বাক্ষীর স্বাক্ষ্য আজ রেকর্ড করেছেন আদালত। তৎকালীরন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার সফরসঙ্গী ঢাকা থেকে আগত জুবাইদুল হক রাসেল, ফাতেমা জামান সাথি, ফটো সাংবাদিক শহিদুল ইসলাম জীবন, সরদার মুজিব ও সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগ নেতা সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সভাপতি অধ্যক্ষ আবু আহমেদকে রাস্ট্রপক্ষ রবিবার আদালতে উপস্থাপন করলে তাদের জবানবন্দী গ্রহণ করেন আদালত। তবে আসামী পক্ষের আইনজীবীরা জেরা করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। আগামী ৩০ নভেম্বর এই মামলার পরবর্তী দিন ধার্য্য করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, আসামীরা এই মামলার বিচার কার্যক্রম বিলম্বিত করতে অপকৌশলের আশ্রয় নিয়েছে। তারা হাইকোর্টের এ্যাপিলেট ডিভিশনের চেম্বার জজ আদালতে লিভ টু আপীল শুনানীর অজুহাত দেখিয়ে স্বাক্ষির জেরা না করে কালক্ষেপন করছে। কিন্তু উচ্চ আদালতের নির্দেশ ৯০ দিনের মধ্যে নিম্ন আদালতে এই মামলার বিচার কার্যক্রম শেষ করতে হবে। আসামী পক্ষ যতোই কালক্ষেপন করার চেষ্টা করুক না কেন নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই বিচার কার্যক্রম শেষ হবে।
এদিকে আসামীপক্ষের আইনজীবী এড. আব্দুল মজিদ বলেন, মামলাটি সুপ্রীম কোর্টের এ্যাপিলেট ডিভিশনের চেম্বার জজ আদালতে লিভ টু আপীল শুনানীর জন্য দিন ধার্য্য হওয়ায় আমরা সাক্ষী জেরা করতে অস্বীকৃতি জনিয়েছি। আজ ২২ নভেম্বর হাইকোর্টের ফুলবেঞ্চ-এ মামলাটি শুনানি হয়েছে। দুই-এক দিনের মধ্যেই আদালতের সিদ্ধান্ত জানা যাবে। হাইকোর্টে লিভ টু আপীল শুনানীর সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত আমরা আদালতের কাছে সময় চেয়েছি। লিভ টু আপীল শুনানি শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমরা স্বাক্ষীর জেরা করার জন্য প্রস্তুত নই বলে জানিয়েছি। আদালত আমাদের কথা শুনেছে এবং আগামী ৩০ নভেম্বর পরবর্তী দিন ধার্য্য করেছে।
প্রসঙ্গতঃ ২০০২ সালের ৩০ আগস্ট তৎকালিন বিরোধী দলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ধর্ষিতা এক নারীকে দেখতে আসেন। তিনি ঢাকায় ফেরার পথে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কলারোয়া বিএনপি অফিসের সামনে তার গাড়ি বহরে হামলার অভিযোগ উঠে তৎকালিন ক্ষমতাসীন জোট সরকারের জামায়াত-বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। এঘটনায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোসলেম উদ্দীন বাদী হয়ে উপজেলা যুবদলের সভাপতি আশরাফ হোসেনসহ ২৭ জনের নাম উল্লেখ পূর্বক অজ্ঞাত ৭০/৭৫ জনের নামে থানায় ব্যর্থ হয়ে আদালতে মামলা দায়ের করেন। পরে উচ্চ আদালতের নির্দেশে এক যুগ পর ২০১৪ সালের ১৫ অক্টোবর কলারোয়া থানায় মামলাটি রেকর্ড করা হয়।
মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা শেখ সফিকুর ইসলাম ২০১৫ সালের ১৭ মে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাতক্ষীরা ১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ ৫০জনের নাম উল্লেখ করে এবং ৩০ জনকে স্বাক্ষী করে আদালতে সম্পূরক অভিযোগপত্র জমা দেন। মামলার বিচার কার্যক্রম শুরু হলে সাতক্ষীরা চীপ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৯জন স্বাক্ষীর স্বাক্ষ্য গ্রহণের পর ২০১৭ সালের ২১ সেপ্টেম্বর আসামীপক্ষের আপীল আবেদনে মামলার কার্যক্রম স্থগিতের আদেশ দেন উচ্চ আদালত। এরপর রাস্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের আবেদনের প্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত চলতি বছরের ২২ অক্টোবর মামলাটির স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে নথি পাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে মামলাটি নিষ্পত্তি করতে চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতকে নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশ অনুযায়ী মামলাটি বিচারিক কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
খুলনা গেজেট/এ হোসেন