সাতক্ষীরায় হঠাৎ করে শিশুদের নিউমোনিয়ার প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। চলতি মাসের প্রথম ১৯ দিনে সরকারিভাবে সদর হাসপাতালে ৫০৯ জন শিশু ভর্তি হয়েছে। হাসপাতালের মাত্র ২৬টি শিশু শয্যার বিপরীতে ১৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯৩ জন শিশু ভর্তি ছিল। যা গড়ে প্রায় প্রতিদিন ২৭ জন করে শিশু ভর্তি হচ্ছে।
এসময়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১২ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। আবহাওয়া পরিবর্তন জনিত কারণে সাতক্ষীরায় হঠাৎ করে শিশুদের নিউমোনিয়ার প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে দাবি চিকিৎসা সংশ্লিষ্টদের।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে মাত্র একজন বিশেষজ্ঞ শিশু চিকিৎসক দিয়ে খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের শিশু বিভাগ। মাত্র একশ’ শয্যার সদর হাসপাতালে শিশু বেড রয়েছে ১১টি, কেএমপি বেড ৩টি ও কর্তৃপক্ষের চেষ্টায় আরও ১২টি বেড বৃদ্ধিতে মোট ২৬টি বেডের বিপরিতে ৯৩ জন শিশুকে এখন চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে। বর্তমানে হাসপাতালের একটি বেডে ২/৩ জন শিশু দেখা গেছে।
শুধু ওয়ার্ড নয়, যেখানেই ফাঁকা সেখানেই কাঁথা বালিশ আর বিছানা পেতে শিশু রোগির চিকিৎসা চলছে। হাসপাতালের বারান্ডা, সিড়ির ঘর ও বেডের নিচে অসুস্থ্য শিশুদের রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। সঙ্গে অভিভাবকদের চাপ তো আছেই।
৮দিন ১০দিন করে বসে থেকে অতিরিক্ত চাপের কারণে অনেক বাচ্চা সুস্থ হচ্ছেনা বলে জানান অভিভাবকরা। একজন মাত্র চিকিৎসক ওয়ার্ডে রোগি দেখে অতিরিক্ত চাপে আউটডোরে রোগি দেখার সময়ই পাচ্ছেন না।অভিভাবকরা বলছেন, বিদ্যুৎ সংকট, সাথে সবস্থানে ফ্যান না থাকায় অতিরিক্ত গরমে শিশু রোগি ও অভিভাবকরাও নাকাল হয়ে পড়ছেন। ফলে জরুরীভাবে হাসপাতালে আরও শিশু চিকিৎসক যুক্ত করার দাবী ভুক্তভোগিদের।
তবে কর্তৃপক্ষ বলছেন চিকিৎসক ও জনবল সংকটের পরও সেবা প্রদানের সর্বাত্মক চেষ্টা অব্যাহত আছে। প্রতিমাসে শিশু চিকিৎসক চেয়ে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন প্রেরণ করা হলেও তা কোন ভাবেই কাজে আসছে না।
এবিষয়ে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের একমাত্র শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. অসীম কুমার সরকার জানান, ঋতুজনিত কারণে এখন শিশুদের নিউমোনিয়ার প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২৬ থেকে ৩০ জন করে শিশু ভতি হচ্ছে। এরফলে বেডে জায়গা সংকুলান হচ্ছেনা। রোগি ও রোগির স্বজনরাও কষ্ট পাচ্ছেন।
তবে তিনি রোগির অভিভাবকদের প্রতি আহবান জানিয়ে বলেন, শিশুরা অসুস্থ্য হলেই দ্রুত চিকিৎসকের কাছে আনার প্রয়োজন। তা না হলে পরিস্থিতি জটিল হচ্ছে। আর একারণেই অতীতের তুলনায় বেড়েছে মৃত্যুর হারও।
সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শাফায়েত হোসেন বলেন, ‘শিশু রোগি যেমন বেড়েছে, তেমনি রয়েছে চিকিৎসক ও জনবল সংকট। এরই মধ্যে মানুষকে সেবা প্রদানের কার্যক্রম অব্যাহত আছে। অতিরিক্ত শিশু চিকিৎস্যকের জন্য উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে বারবার বলা হচ্ছে কিন্ত দ্রুত কোন আশার আলো দেখতে পাচ্ছি না।’
তিনি আরও বলেন, শুধু সদর হাসপাতাল নয়, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও শিশু হাসপাতালেও শিশুদের চিকিৎসার ব্যবস্থা আছে। কোন শিশু নিউমোনিয়া রোগে আক্রান্ত হলে শুধুমাত্র সদর হাসপাতালে না এনে সেসব স্থানেও নেওয়ার আহবান জানান তিনি।