সাতক্ষীরায় চলতি মৌসুমে ৫০ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। গত বছরের তুলনায় এবছর আম গাছে মুকুল ফুটেছে কম, তার উপর অসময়ে ঝড়-বৃষ্টির কারণে আমের ফলন নিয়ে শঙ্কায় চাষীরা। যদিও কৃষি বিভাগের বলছে, বৃষ্টিতে আমের মুকুলের সামান্য ক্ষতি হলেও কৃষকদের এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে আমের মূল্য নির্ধারণসহ পরিবহন ও বিদেশে রপ্তানির ক্ষেত্রে সার্বিক সহযোগিত দেওয়া হবে।
জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে জেলায় ৪হাজার ১১৫ হেক্টর জমিতে আমের চাষাবাদ করা হয়েছে। সাতক্ষীরা সদর, তালা, কলারোয়া দেবহাটা ও কালিগঞ্জ এই পাঁচ উপজেলায় জেলার সবথেকে বেশি আম উৎপাদন হয়। প্রতিবছর এসময় সাতক্ষীরার এই অঞ্চলে আমের বাগানগুলো মুকুলে মুকুলে ভরে উঠলেও এবছর যেন চিত্রটা ভিন্ন। সম্প্রতি বৃষ্টির কারণে হিমসাগর ও গোবিন্দভোগ আম গাছে এবার তুলনামূলক মুকুল ফুটেছে কম।
সাতক্ষীরা আম বাগান ব্যবসায়ী ধুলহরের মোকলেছুর রহমান জানান, আমাদের এবছরে আম গাছে মুকুল তেমন দেখা যায়নি। যতটুকু মুকুল হয়েছিল তাও বেশ কয়েকদিন আগের হঠাৎ বৃষ্টি ও কুয়াশার কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে গত দুই বছর আম ব্যবসায় তেমন লাভের মুখ দেখতে পায়নি। সরকার যদি আমাদের পাশে না দাড়ায় বা আমরা কিছু এনজিও এর সাথে কাজ করছিলাম তারা ও যদি আমাদের পাশে না দাড়ায় তা হলে এবার আমরা আম চাষীরা খুবই ক্ষতিগ্রস্থ হব।
সাতক্ষীরার কুখরালী এলাকার আম চাষী জাহিদ হাসান বলেন, এবছর গাছে আমের মুকুল কম। তার উপর আকাশ মেঘাচ্ছন্ন ও ঘন কুয়াশার কারণে আমের মুকুল ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। তাই মুকুল ধরে রাখার জন্য বার বার ঔষধ স্প্রে করতে হচ্ছে। তাছাড়া কিছু কিছু ঔষধের দাম অনেক বেশি যা আমাদের জন্য খুবই ব্যয়বহুল হয়ে পড়েছে।
সাতক্ষীরা গড়েরকান্দা এলাকার আম চাষী মোঃ সাহিদুর রহামন বাবু জানান, এবছর আট থেকে দশ লক্ষ টাকা আম বাগান কিনেছি। সেই হিসাবে গাছে তেমন মুকুল ধরেনি। গোবিন্দ ভোগ আম গাছে কিছু মুকুল ধরেছে তবে হিমসাগর গাছে মোটেও মুকুল ধরেনি। তিনি বলেন, গত বছরের আগের বছরে আম্পান ঝড়ে যে ক্ষতি হয়েছিল সেই ক্ষতি পুষিয়ে উঠার চেষ্টায় ছিলাম। কিন্তু এবছর গাছে তেমন একটা মুকুল হয়নি। তাই সরকার যদি আমাদের স্বল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থা করতো তাহলে আমারা সেই ক্ষতিটা উসুল করে নিতে পারতাম।
সাতক্ষীরা খামার বাড়ির উপ-পরিচালক মোঃ নুরুল হক বলেন, চলতি মৌসুমে জেলায় ৪হাজার ১১৫ হেক্টর জমিতে আমের চাষাবাদ করা হয়েছে। জেলায় আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০ হাজার মেট্রিক টন। বিদেশে রপ্তানির জন্য ৫’শ আম বাগান প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এরমধ্যে প্রায় দুই হাজার মেট্রিক টন আম বিদেশে রপ্তানি যোগ্য। তবে, এবছর অসময়ে বৃষ্টির কারণে আমের মুকুলের সামান্য ক্ষতি হলেও কৃষকরা যাতে এই ক্ষতি পরিমান কাটিয়ে উঠতে পারে সেজন্য কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে আমের মূল্য নিধারণসহ বিদেশে রাপ্তারির সকল প্রকার সহযোগিতা করা হবে।
খুলনা গেজেট/ এস আই