করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সারাদেশে সরকার ঘোষিত সর্বাত্মক লকডাউন চলছে। এতে করে গরুর হাট না বসায় বিপাকে পড়েছেন সাতক্ষীরা জেলার পশু খামারীরা। বিপাকে পড়া জেলার খামারীদের কথা চিন্তা করে বুধবার (৭ জুলাই) থেকে শুরু হয়েছে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে অনলাইন পশুরহাট।
তবে এক্ষেত্রে ব্যবসায়ী ও পশু বিক্রেতাদের অনলাইনে নিবন্ধন করতে হবে। জেলায় লকডাউন ভঙ্গ করে পশুর হাট বসানো চেষ্টা করলে সংশ্লিষ্ঠদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিবে প্রশাসন। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এমনটি জানানো হয়েছে।
এদিকে সরকার ঘোষিত লকডাউন উপেক্ষা করে ভিন্নকৌশলে জেলার কোথাও কোথাও বসছে গরুর হাট। মঙ্গলবার (৬ জুলাই) সাতক্ষীরা সদর উপজেলার আবাদেরহাট বিক্ষিপ্তভাবে এ হাট বসানোর অভিযোগ ওঠে বাজার কমিটি ও হাট ইজারাদারদের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে এলাকার সচেতন মহলের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তবে বাজার ও হাট ইজারাদার কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে আনিত সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, স্থানীয় কিছু জনপ্রতিনিধি ও সরকার দলীয় নেতাদের ইন্ধনে এই হাট বসানোর চেষ্টা চলছে।
দেবহাটা উপজেলার কোমপুরের খামারি আসাদুজ্জামান বলেন, এবার কোরবানির আশায় ১৬টি গরু লালন-পালন করেছি। এখন করোনা নিয়ে খুব আতঙ্কের মধ্যে আছি। তাছাড়া প্রতিদিন খামারে প্রায় কয়েক হাজার টাকা খরচ হয়। যদি এবার ঈদে গরু বিক্রি না হয় তাহলে ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হবে তাকে।
একই উপজেলার খামারি দেবপ্রসাদ ঘোষ দেবু বলেন, গরু মোটাতাজাকরণ করে আতঙ্কে আছি। উপজেলায় আমরা যারা খামারি আছি, তারা সবাই সারাবছর গরু মোটাতাজাকরণ করে কোরবানির ঈদের অপেক্ষায় থাকি। ৩-৪ লাখ টাকা বিক্রির আশায় গরু পালন করি। যদি সেগুলো কোরবানিতে বিক্রি না হয় তাহলে আমরা এবার নিঃস্ব হয়ে যাবো।
এদিকে খুলনা বিভাগের অন্যতম বৃহৎ পারুলিয়া গরু হাটের ইজারাদার জেলা পরিষদ সদস্য আলফেদৌস আলফা জানান, করোনায় কারণে এবার গরুহাট বন্ধ রয়েছে। এতে প্রতি হাটে আমার লক্ষাধিক টাকা লোকসান হচ্ছে। এলাকার প্রান্তিক কৃষক বা অসহায় নারীরা সারা বছর ধরে ১/২টি করে গরু পালন করে ঈদেরহাটে বিক্রি করে লাভবান হয়। কিন্ত করোনার কারণে প্রশাসন হাট বন্ধ করে রাখায় আমরা উভয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।
এবিষয়ে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ন কবির বলেন, জেলায় কোনপ্রকার গরুর হাট বসবে না। তবে কোন জনপ্রতিনিধি, বাজার কর্তৃপক্ষ, হাট ইজারাদারসহ যেকোন রাজনৈতিক দলের নেতারা যদি হাট বসানোর চেষ্টা করেন তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি গরু খামারীসহ ব্যবসায়ীদের ধৈর্য্য ধরার আহ্বান জানিয়ে বলেন, বুধবার (৭ জুলাই) থেকে জেলা প্রশাসকের ব্যবস্থাপনায় ‘সাতক্ষীরা হাট’ নামে অনলাইন হাটে পশু ক্রয় বিক্রি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এখন তারা অনলাইনের মাধ্যমে গরু বিক্রির নিবন্ধন করতে পারবেন। তাই আতঙ্কের কারণ নেই। হাট বন্ধ থাকলেও অনলাইনে এবার পশুর কেনাবেচার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এতে খামারিদের বাড়তি খরচ কমবে। অনলাইনে পশু কিনতে ফেসবুক পেইজে বিভিন্ন দামের পশুর বিবরণ দেওয়া আছে। পছন্দ মতো পশু কেনা বেঁচা করা যাবে। জেলার সাতটি উপজেলা প্রশাসন এবং প্রাণিসম্পদ অফিসের উদ্যোগে এই অনলাইনে কোরবানীর পশুর হাট ক্রয় বিক্রি শুরু হয়েছে।
খুলনা গেজেট/ টি আই