খুলনা, বাংলাদেশ | ১১ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৬ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  কুমিল্লায় ট্রেনের ধাক্কায় অটোরিকশার ৫ যাত্রী নিহত
  মানবতাবিরোধী অপরাধ : চিফ প্রসিকিউটর দেশে না থাকায় ফখরুজ্জামান ও সাত্তারের জামিন শুনানি ২ সপ্তাহ পেছাল আপিল বিভাগ

সাতক্ষীরা সিটি কলেজের অধ্যক্ষসহ পাঁচ শিক্ষকের নামে দুদকের মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা

পরস্পর যোগসাজসে জাল কাগজপত্র সৃষ্টি করে প্রতারণার মাধ্যমে শিক্ষকদের এমপিওভুক্তিকরণ শেষে ২০ লাখ ৫৭ হাজার ৩৯৬ টাকা সরকারি অর্থ বেতন হিসেবে উত্তোলন ও আত্মসাতের অভিযোগে সাতক্ষীরা সিটি কলেজের অধ্যক্ষ আবু সাঈদসহ পাঁচ শিক্ষকের নামে মামলা দায়ের করেছে দুদক।

দুর্নীতি দমন কমিশন দুদক এর প্রধান কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক প্রবীর কুমার দাস দীর্ঘ তদন্ত শেষে দ-বিধির ৪০৯/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১ ও ১০৯ ধারায় এই মামলার আবেদন করলে দুদক এর সমন্বিত জেলা কার্যালয় খুলনার সহকারি পরিচালক বিজন কুমার রায় ৯ মার্চ মামলা রেকর্ড করেন। মামলা নং-০৩/২০২২ এবং দুদক তদন্ত নং-০১। আলোচিত এই মামলাটি দুদক নিজেই তদন্ত করবেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছেন।

আলোচিত এই মামলার অন্যান্য আসামিদের মধ্যে ১নং আসামি সাতক্ষীরা জেলার দেবহাটা উপজেলার উত্তর পারুলিয়া গ্রামের দেলবার মৃধার ছেলে সিটি কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক মোঃ মনিরুল ইসলাম, ২নং আসামি জেলার আশাশুনি উপজেলার নাকতাড়া গ্রামের আব্দুল হামিদ সরদারের ছেলে সিটি কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক এসএম আবু রায়হান। তিনি বর্তমানে সাতক্ষীরা শহরের রসুলপুর গ্রামের বাসিন্দা। ৩নং আসামি সাতক্ষীরা সদরের নেবাখালী গ্রামের আব্দুল কাদির এর ছেলে সিটি কলেজের দর্শণ বিভাগের প্রভাষক শেখ নাসির আহমেদ, ৪নং আসামি সদরের গোপিনাথপুর গ্রামের মৃত ধীরেন্দ্র নাথ সরকারের ছেলে সিটি কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক অরুণ কুমার সরকার এবং এমামলার ৫নং ও অন্যতম আসামি জেলার আশাশুনি উপজেলার কচুয়া গ্রামের মৃত নুর আলী সরদারের ছেলে বর্তমানে শহরের পলাশপোল মধুমল্যারডাঙ্গীর বাসিন্দা সাতক্ষীরা সিটি কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ আবু সাঈদ।

দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র জানায়, সাতক্ষীরা সিটি কলেজের অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ বেশ কয়েক বছর ধরে চলে আসছিল। এরমধ্যে অন্যতম ছিল, তথ্য জালিয়াতি ও তথ্য গোপন করে শিক্ষকদের নিয়োগ ও এমপিও ভূক্তকরণ। জ্যেষ্টতার বিধি লংঘন পূর্বক জুনিয়ার শিক্ষকদের নিয়োগ সংক্রান্ত তথ্য জালিয়াতি করে সিনিয়র শিক্ষক বানিয়ে এমপিও ভুক্ত করা হয়েছে। আবার অনার্স শাখায় নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের তথ্য জালিয়াতি করে ডিগ্রি স্তরের শিক্ষক বানিয়ে এমপিও ভূক্ত করার অভিযোগ রয়েছে।

সম্প্রতি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক কলেজ-২ ও উপ-সহকারি পরিচালক কলেজ-৩ স্বাক্ষরিত ৭৭০ জন তৃতীয় শিক্ষকের তালিকায় সাতক্ষীরা সিটি কলেজের ১২টি বিষয়ে অনার্স শাখায় নিয়োগপ্রাপ্ত ১২ জন শিক্ষকের নাম তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।

তালিকা প্রকাশিত হওয়ার পর এক অভিযোগের ভিত্তিতে মাউশির মহা পরিচালকের নির্দেশে খুলনা আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মোঃ মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গত পহেলা ফেব্রুয়ারি সিটি কলেজে আলোচিত এসব অভিযোগের তদন্তে আসেন। এসময় অধ্যক্ষ আবু সাঈদ নিজের ভুল স্বীকার করে তদন্তকারি কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমানের কাছে জানিয়েছিলেন রাজনৈতিক চাপে তিনি এই অনৈতিক কার্যক্রম করেছেন। একই সময়ে অভিযুক্ত ১২ জন শিক্ষক বলেন আমাদের প্রকৃত নিয়োগ ও যোগদান জালিয়াতি করে কলেজ প্রশাসন আমাদের ডিগ্রি স্তরের তৃতীয় শিক্ষক হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছেন। আর এই তালিকাভুক্তির নামে কোটি কোটি টাকার অর্থ বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে।

পাশাপাশি কলেজের অভ্যন্তরিণ তহবিল তছরুপ, ছাত্র ছাত্রীদের ভর্তি ও রেজিস্ট্রেশন ফি বর্ধিতকরণ, উন্নয়ন তহবিল বাবদ গৃহীত অর্থ, ছাত্র ছাত্রীদের সরকারি উপবৃত্তি আত্মসাৎ, তাদের সেশন চার্জসহ নানাখাত থেকে বিপুর পরিমান অর্থ উত্তোলন ও আত্মসাত করার অভিযোগ রয়েছে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে। যার তদন্ত কার্যক্রম অব্যহত আছে। এছাড়াও দুর্নীতির গহবরে ডুবে থাকা এই কলেজের বর্তমান ম্যানেজিং কমিটি নিয়েও রয়েছে নানা বিতর্ক।

মামলার বাদি দুদকের সহকারি পরিচালক, প্রধান কার্যালয়ের প্রবীর শিকদার জানান, সাতক্ষীরা সিটি কলেজের নানাবিধ দুর্নীতির ঘটনার অসংখ্য অভিযোগ জমা আছে দুদকে। তার দুই একটির তদন্ত করা হয়েছে। বিগত ২০২০ সালের আগস্ট মাস থেকে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত তদন্ত করা হয়। এরপর করোনার কারণে কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়। সবকিছু স্বাভাবিক হওয়ার পর পুনরায় কার্যক্রম শুরু হয়েছে।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!