খুলনা, বাংলাদেশ | ৫ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ | ১৯ মে, ২০২৪

Breaking News

  করোনায় একজনের মৃত্যু, শনাক্ত ১১
  তিন জেলায় বজ্রপাতে প্রাণ গেল ৭ জনের
  রাঙামাটিতে সশস্ত্র হামলায় ইউপিডিএফ সদস্যসহ নিহত ২

সন্তানদের হারিয়ে শো‌কে স্তব্ধ মোজাম্মেল ও শহীদুল

নিজস্ব প্রতিবেদক

শোকে স্তব্ধ হয়ে পড়েছেন মোজম্মেল ও শহীদুল দু’ভাই। নিশ্চুপ হয়ে ঘরের এক কোনে বসে আছেন তারা। কারও সাথে কোন কথা বলছেন না। শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছেন মানুষের মুখের দিকে। পরিচিত কাউকে পেলে জড়িয়ে ধরে অনবরত চোখের পানি পড়ছে এ সহোদরের। পাশের ঘর থেকে দু’জন মহিলার কান্নার আওয়াজ কানে ভেসে আসে। সেই কান্নার সুর আশপাশের নিরবতাকে ভেঙ্গে দিচ্ছে। তাদের শান্তনা দিতে প্রতিবেশীরা ছুটে আসছেন।

মোজাম্মেল এবং ছোট ভাই শহীদুলের ছেলে যোবায়ের ও শাহরিয়ার গত হয়েছে বৃহস্পতিবার বিকেলে। রাত সাড়ে ১০ টার দিকে যোবায়ের ও আব্দুল্লাহ আল শাহরিয়ারয়ের মরদেহ পূর্ব বানিয়াখামার নিয়ে আসে পরিবারের সদস্যরা। লাশ আনার সাথে সাথে সেখানে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতরণা হয়। এলাকার মানুষ ছুটে আসেন তাদের দু’ভাইয়ের লাশ দেখতে। দেখে তারাও কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। রাত সাড়ে ১১ টার দিকে স্থানীয় যুবকেরা তাদের দু’ভাইয়ের মরদেহের গোসল করান। পরে পাশাপাশি রাখা হয় তাদের দু’জনের।

শুক্রবার শহীদুলের বড় ছেলের বিয়ের কথা ছিল। আগেরদিন গায়ে হলুদের জন্য যোবায়ের ও চাচাতো ভাই আব্দুল্লাহ আল শাহরিয়ার গোপালপঞ্জ পাটগাতী গ্রামের রহমতপুর এলাকায় যান। সেখান থেকে বিকেলে খুলনার উদ্দেশ্যে রওনা হয় এ দু’ভাই। বিকেল ৪ টার দিকে তারা খুলনা-মাওয়া মহাসড়কের রাজপাট নামক স্থানে পৌছালে ঢাকাগামী রাজিব পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস তাদের ধাক্কা দেয়। ধাক্কা দেয়। এ‌তে গাড়ি বাসের নীচে চলে যায়। প্রায় ১শ’ গজ তাদের টেনে নেয় ঘাতক বাস। পরে বাসটি রেখে ড্রাইভার ও হেলপার পালিয়ে যায়।

বাসের চাপায় যোবায়েরের মাথায় ভেঙ্গে যায়। ঘটনাস্থলে তার মৃত্যু হয়। শাহারিয়ারও বেঁচে ছিলেন। কিন্তু যোবায়েরের মৃত্যু খবর জানার পর তিনিও মারা যান। এর আগে তিনি চাচীর মোবাইল নম্বর স্থানীয়দের জানিয়ে যান। পরবর্তীতে তারা ফোন দিলে পরিবারের সদস্যরা সেখানে যান।

স্থানীয়দের মাধ্যমে জানা গেছে, যোবায়ের সবেমাত্র উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে আযমখান কমার্স কলেজে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। সকলের সাথে সদভাব বজায় রেখে চলতেন। কাউকে মনে কখনও আঘাত দেননি। তার মৃত্যুতে এলাকার মানুষের ঢল নামে বাড়ির সামনে।

নিহত যোবায়েরের পিতা মোজাম্মেল হক শোকে স্তব্ধ হয়ে পড়েছেন। খবর জানার পর থেকে কাঁদতে কাঁদতে তার চোখের পানি শুকিয়ে গেছে। তিনি শুধু আল্লাহকে ডাকছেন। ছেলের মৃত্যুর জন্য আল্লার কাছে বিচার চাইছেন। তিনি জীবনে কারও কোন ক্ষতি করেননি। তার কেন এতবড় সর্বনাশ হল। ছেলের লাশ বাবার কাধে ভারী এই বলে বিলাপ করছিলেন। পাশের রুম থেকে যোবায়েরর মায়ের কান্নার আওয়াজ আসছিল। সেই কান্নায় যেন আশপাশের পরিবেশ আরও ভারী করে তুলছিল। মায়ের কান্নায় আশপাশের কেউ চোখের পানি ধরে রাখতে পারেনি।

খুলনা গে‌জেট/ টি আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!