বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমাদের অবস্থান খুবই পরিষ্কার। হাসিনাকে (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) সংসদ থেকে পদত্যাগ করতে হবে, সংসদ ভেঙে দিতে হবে এবং সরকারকে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।
শনিবার বরিশালের বঙ্গবন্ধু উদ্যানে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশে একথা বলেন তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দেশের মানুষ এখন এই সরকারের কবল থেকে মুক্তি চায়। আমাদের অবস্থান পরিষ্কার- বাংলাদেশকে ফিরিয়ে দিন, ফয়সালা হবে রাজপথে।’
‘দেশে দুর্ভিক্ষ হতে পারে’ প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্য প্রসঙ্গে বিএনপি নেতা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী এখন দুর্ভিক্ষের কথা বলছেন কেন? এমনকি কিছুদিন আগেও তারা (সরকার) সর্বত্র উন্নয়নের দাবি করেছেন। মানুষ আর এ ধরনের উন্নয়ন চায় না।’
দেশকে বাঁচাতে সব ধরনের বিভেদকে কবর দিয়ে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা ক্ষমতায় গেলে জাতীয় সরকার গঠন করব। আমরা জনগণের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন নই, আমরা জনগণের সঙ্গে থাকি।’
তিনি অভিযোগ করেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ‘দুঃশাসন ও অপকর্মের’ মাধ্যমে একের পর এক দেশের সব অর্জন ধ্বংস করেছে।
হামলা ও মামলা দায়ের ‘অবৈধ’ সরকারের অস্ত্র বলে অভিযোগ করে এই মির্জা ফখরুল বলেন, ‘প্রথমে হামলা, পরে মামলা।’
দেশের অর্থনীতির করুণ চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘কোটি কোটি টাকা মালয়েশিয়া, কানাডাসহ অন্যান্য দেশে পাচার করে দেশকে ঝুঁকিতে ফেলা হয়েছে।’
জনসভায় উপস্থিত জনতার উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, কোনো কিছুই আজকে আপনাদের দাবিয়ে রাখতে পারেনি। টানটা কোথায়? আমার কলিজার টান। সেই টানটা তৈরি করে দিয়েছেন ৭ নভেম্বর সিপাহী জনতার বিপ্লবের মধ্য দিয়ে যিনি ক্ষমতায় এসেছিলেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান।
তিনি বলেন, ১৪ বছর ধরে আওয়ামী লীগের সরকার নির্যাতন করছে। যারা হামলা করবে তারাই আবার মামলা করবে।
এসময় দলের নিহত এক নেতার ছোট শিশুকে দেখিয়ে তিনি বলেন, আজকে আমরা যে আন্দোলন করছি, এর বলি হচ্ছেন তারা (চলমান আন্দোলনে নিহত ৫ নেতা)।
তিনি বলেন, ১০ টাকা কেজি চাল খাওয়াবে বলেছিল, ক্ষমতায় এসে কি করছে? ঘরে ঘরে চাকরি দেবে বলেছে, আওয়ামী লীগের ছেলেদের চাকরি দিয়েছে। ২০ লাখ করে টাকা নিয়েছে।
বরিশাল মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান খান ফারুকের সভাপতিত্বে সমাবেশে যোগ দিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, বেগম সেলিমা রহমান, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ, এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, আব্দুল আউয়াল মিন্টু, ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, বিএনপির যুগ্ম মহাসচির মজিবুর রহমান সরোয়ার, অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, হাবীব উন নবী খান সোহেল, বিএনপি নেতা জহির উদ্দিন স্বপন, অ্যাডভোকেট মাসুদ আহম্মেদ তালুকদার, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাহ উদ্দিন টুকুসহ অঙ্গ ও সহযোগী দলের নেতারা বক্তব্য দেন। এছাড়া বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন জেলা ও স্থানীয় নেতারা বক্তব্য দেন।
গত ৮ অক্টোবর চট্টগ্রামে প্রথম গণসমাবেশ করে বিএনপি। এরপর ১৫ অক্টোবর ময়মনসিংহে, ২২ অক্টোবর খুলনায়, ২৯ অক্টোবর রংপুরে, আজ (৫ নভেম্বর) বরিশালে এরপর আগামী ১২ নভেম্বর ফরিদপুর, ১৯ নভেম্বর সিলেট, ২৬ নভেম্বর কুমিল্লা, ৩ ডিসেম্বর রাজশাহী এবং ঢাকায় ১০ ডিসেম্বর মহাসমাবেশের মধ্য দিয়ে টানা তৃতীয় দফার কর্মসূচি শেষ হবে।