একতরফাভাবে নৌযান শ্রমিকদের বেতন ৬০ শতাংশ বৃদ্ধির করার প্রতিবাদে মালিকদের ৭ দিনের আল্টিমেটাম দিয়েছে খুলনা বিভাগীয় অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন মালিক গ্রুপ। অন্যথায় ১০ মার্চ রাত ১২ টা থেকে নৌযান বন্ধ রাখার হুশিয়ারি দিয়েছেন নৌযান মালিকরা।
বুধবার (১ মার্চ) রাত সোয়া ৮টার দিকে মালিকগ্রুপের সভাকক্ষে সংবাদ সম্মেলনে এই হুশিয়ারি দেওয়া হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন খুলনা বিভাগীয় অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন মালিক গ্রুপের মহাসচিব ওয়াহিদুজ্জামান খান পল্টু। এসময় নৌযান মালিকরা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, গত ৩১ জানুয়ারি নৌযান শ্রমিকদের মজুরী স্কেল পুনঃনির্ধারনকল্পে প্রস্তাবনা প্রণয়ন কমিটির চতুর্থ সভা অনুষ্ঠিত হয়। ইতিপূর্বে অনুষ্ঠিত প্রথম সভা থেকে ৪র্থ সভায় আমরা নৌ সেক্টরে বিরাজমান সমস্যাসমূহ নিয়ে আলোচনা করেছি। এরমধ্যে বিভিন্ন শ্রেণির নৌযান শ্রমিকদের মজুরী নির্ধারণ করা, চট্টগ্রাম বন্দর ও মোংলা বন্দরে সিরিয়াল অনুযায়ী পণ্য বোঝাই এবং গন্তব্যস্থলে সিরিয়াল অনুযায়ী পণ্য খালাস করার নিশ্চয়তা, শ্রম আইন অনুযায়ী প্রতিষ্ঠান হিসাবে রেজিষ্টিকৃত আন্দোলনরতঃ শ্রমিক সংগঠনগুলো দেশব্যাপী ধর্মঘট করার অধিকার নেই। তারপরও কিভাবে নৌযান শ্রমিক ধর্মঘট পালিত হচ্ছে?
এছাড়া ডিজি শিপিং কর্তৃক নিষিদ্ধ বাল্কহেড চট্টগ্রাম বন্দর ও মোংলা বন্দরে প্রবেশ বন্ধ করা ও সরকার ঘোষিত জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি বিবেচনা করা হয়।
এসব বিষয়ের উপর আলোচনা পর এবং ১ম, ২য় ও ৩য় সভায় নৌযান মালিকদের তুলে ধরা সমস্যা এবং নৌযান মালিকদের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ৪র্থ সভার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সেই সভায় বাংলাদেশ বেসরকারী খাতের অভ্যন্তরীণ নৌযানে নিয়োজিত বিভিন্ন শ্রেণির শ্রমিকদের মজুরী কাঠামো পুনঃনির্ধারণের বিষয়ে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রীর আয়োজনে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীরা এবং অন্যান্য অংশীগনসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সমন্বয়ে একটি আজ্ঞ মন্ত্রণালয় সভা আয়োজনের বিষয়ে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রীর সাথে আলোচনায় পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
ওই সিদ্ধান্তকে উপেক্ষা করে গত ২০ ফেব্রুয়ারি শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মনোয়ারা বেগম স্বাক্ষরিত চিঠির মাধ্যমে ২২ ফেব্রুয়ারি শ্রম ভবনে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ এহসানে এলাহীর সভাপতিত্বে এক সভা আহ্বান করা হয়।
সভায় সরকার পক্ষ নৌ পরিবহন সেক্টরের বিভিন্ন শ্রেণির নৌযানের মালিকের সক্ষমতা এবং বর্তমান বিশ্বব্যাপী মন্দা অবস্থা এবং পরিবহনযোগ্য পণ্যের অভাবের বিষয়টি বিবেচনা না করে ঢালাও একতরফাভাবে ২০১৬ সালে প্রকাশিত গেজেটে উল্লেখিত মূল বেতনের উপর ৬০ শতাংশ বৃদ্ধি করে নৌযান শ্রমিকদের বেতন স্কেল ঘোষণা করেন।
খুলনা বিভাগীয় অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন মালিক গ্রুপ, বাংলাদেশ কার্গো ভেসেল ওনার্স এসোসিয়েশন, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল সংস্থা, কোষ্টাল শীপ ওনার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, পেট্রোলিয়াম ট্যাংকার্স ওনার্স এসোসিয়েশন, বাংলাদেশ অয়েল ট্যাংকার ওনার্স এসোসিয়েশন অযৌক্তিক প্রস্তাবে সম্মত হয়ে নৌযান পরিচালনা করা সম্ভব নয় বলে সভায় জানানো হয়।
নৌযানের প্রকারভেদে যেমন যাত্রীবাহী, পণ্যবাহী, তেলবাহী নৌযান আছে এবং এগুলোর ধারণ ক্ষমতা বিভিন্ন রকম। নৌযানের প্রকারভেদে বড় ছোট হিসেবে মালিকদের আয়/সক্ষমতা এক রকম নয়। কাজেই ঢালাওভাবে শতকরা হিসেবে বেতন-ভাতা নির্ধারণের কোন সুযোগ নেই।
একজন সরকারী কর্মকর্তা বেসিকের উপর ৬০ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না বিধায় এই প্রস্তাব প্রত্যাখান করছি। একইসঙ্গে আগামী ৭ দিনের মধ্যে সকল অংশীগণসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সমন্বয়ে একটি সভা আহ্বান করে আলোচনার মাধ্যমে ২২ ফেব্রুয়ারির ঘোষিত প্রস্তাব প্রত্যাহার করে নতুনভাবে সিদ্ধান্ত ঘোষণা আহবান জানানো হয়।
এ ব্যাপারে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় খুলনা বিভাগীয় অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন মালিক গ্রুপের সভা কক্ষে সাধারণ সভার
মাধ্যমে নৌযান মালিকরা শ্রমিকদের ৬০ শতাংশ মজুরী বৃদ্ধি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক বলে প্রত্যাখান করেন। যদি শ্রমিকদের ৬০ শতাংশ মজুরী বৃদ্ধির ঘোষণা আগামী ৭ দিনের মধ্যে পুনঃবিবেচনা না করা হয় তাহলে আগামী ১০ মার্চ রাত ১২টা থেকে নৌযান মালিকরা তাদের নৌযান চলাচল সম্পূর্ণরূপে বন্ধ রাখতে বাধ্য হবেন।