‘ভোলা সাইক্লোন’ এর ৫১ বর্ষপূর্তি, ঘূর্ণিঝড়ে প্রয়াত উপকূলবাসীর স্মরণ এবং প্রস্তাবিত উপকূল দিবস পালন উপলক্ষে ‘উপকূলের জন্য হোক একটি দিন, জোরালো হোক উপকূল সুরক্ষার দাবি’ এই শ্লোগানকে সামনে রেখে শুক্রবার সাতক্ষীরার শ্যামনগরের কাশিমাড়ি সংলগ্ন খোলপেটুয়া নদীতে এক অবরোধ কর্মসূচী পালিত হয়।
ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিস ও স্টুডেন্ট সলিডারিটি টিম এর বাস্তবায়নে অনুষ্ঠিত কর্মসুচিতে জলবায়ু সুবিচার ও উপকূলবাসীর স্বার্থ সুরক্ষায় ১২ নভেম্বরকে উপকূল দিবস হিসেবে রাষ্ট্রীয়ভাবে ঘোষণার দাবি জানানো হয়।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের উপকূলে অফুরন্ত সম্ভাবনা রয়েছে। উপকূলের বিপুল জনগোষ্ঠী জাতীয় অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখছে। তা সত্ত্বেও উপকূলের প্রায় ৫ কোটি মানুষ চরম ঝুঁকিতে রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এই ঝুঁকি দিন দিন বাড়ছে। উপকূলের বহু এলাকা অরক্ষিত থেকে যাচ্ছে যুগের পর যুগ।
বক্তারা আরও বলেন, উপকূলবাসীর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় রাষ্ট্রীয়ভাবে একটি দিবস ঘোষণা এখন সময়ের দাবি।
উপকূল দিবস ঘোষণা করা হলে সরকারের নীতিনির্ধারণী মহল, উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠান, সংবাদ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মহলে উপকূলের গুরুত্ব বাড়বে। এর মাধ্যমে উপকূলের সুরক্ষা ও সেখানকার জনগোষ্ঠীর অধিকার ও ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠিত হবে। বক্তারা অবিলম্বে ১২ নভেম্বরকে উপকূল দিবস ঘোষণা দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
স্টুডেন্ট সলিডারিটি টিমের সাধারণ সম্পাদক রাইসুল ইসলামের সভাপতিত্বে অবরোধ কর্মসূচীতে বক্তব্য রাখেন, জাহাঙ্গীর, আব্দুর রহমান, শারমিন, হুমাইরা, জাকারিয়া, সুমন প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, ১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বর বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ‘ভোলা সাইক্লোন’ উপকূলে আঘাত হানে। জাতিসংঘের বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার (ডব্লিউএমও) মতে ভোলা সাইক্লোন পৃথিবীর ইতিহাসে ভয়ঙ্করতম প্রাণঘাতী একটি ঝড়।
এদিকে উপকূলবাসীর জীবনমান উন্নয়নসহ উপকূল সুরক্ষার লক্ষ্যকে সামনে রেখে শ্যামনগর উপজেলা জলবায়ু অধিপরামর্শ ফোরাম, সুন্দরবন প্রেসক্লাব এবং বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা লিডার্স যৌথভাবে শুক্রবার উপকূলবর্তী শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ সুন্দরবন প্রেসক্লাব চত্তরে এক মানববন্ধন সহ আলোচনা সভার আয়োজন করে।
সুন্দরবন প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি মোঃ আবদুল হালিম এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মোঃ আব্দুর রউফ, সুন্দরবন প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোঃ বিলাল হোসেন, সাংবাদিক আব্দুল্যাহ আল মামুন, মোঃ সাহেব আলী, যুব ফোরামের সদস্য মোঃ আমিনুর রহমান, লিডার্স এর মনিটরিং অফিসার রনজিৎ কুমার মন্ডল ও কৌশিক রায় প্রমূখ।
বক্তারা বলেন, ১৯৭০ সালের ১২ই নভেম্বর এই দিনে প্রলঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ের তান্ডবে লন্ডভন্ড হয়ে যায় দেশের উপকূলীয় অঞ্চল। নিশ্চিহ্ন হয় বহু পরিবার। অনেকে আত্মীয়স্বজন, বাবা-মা, ভাই-বোন হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যায়। বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে ভয়াল এ ঘূর্ণিঝড় এবং জলোচ্ছ্বাসে প্রায় ১০ লক্ষাধিক লোক মৃত্যুবরণ করে (বেসরকারী হিসাবে)। ভয়াবহ সেদিনের ৫১ বছর অতিবাহিত হলেও আজও সে দুর্বিসহ স্মৃতি তাড়িয়ে বেড়ায় উপকূলের বাসিন্দাদের। বক্তারা ১২ নভেম্বর উপকূল দিবস হিসাবে ঘোষণা করার দাবি জানিয়ে কপ-২৬ এ যেন উপকূলবাসীর এই দুর্ভোগ তুলে ধরে জীবন মান উন্নয়নে ব্যবস্থা গ্রহণের আহবান জানান।
খুলনা গেজেট/এনএম