খুলনা, বাংলাদেশ | ৬ কার্তিক, ১৪৩১ | ২২ অক্টোবর, ২০২৪

Breaking News

  শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে রাজশাহীর সারদায় পুলিশের ২৫০ এসআইকে অব্যাহতি
  নিবন্ধন ফিরে পেতে জামায়াতে আপিল পুনরুজ্জীবিত করলেন আপিল বিভাগ, এ আদেশের ফলে জামায়াতের আইন লড়াইয়ের পথ খুলে গেল

শিশুর কাঁন্নায় রক্ষা পেল হাজাম পাড়ার শতাধিক পরিবার

নিজস্ব প্রতিবেদক

নগরীর খালিশপুর মুজগুন্নী এলাকার হাজাম পাড়া বাটা জুতার গোডাউনের পাশে শুয়ে ছিল সাড়ে তিন বছরের শিশু তাসিন। বিকাল সাড়ে ৩ টার দিকে জুতার গোডাউনের দরজার সামনে ঘুম পাড়িয়ে পাশে একটি কাজে যায় শিশুটির মা। পৌনে চারটার দিকে হঠাৎ করে তাসিন চিৎকার করে ওঠে। তার চিৎকারে ছুটে আসে স্থানীয় হাজাম পাড়ার বাসিন্দারা। তারা এসে দেখেন গোডাউন থেকে ধোয়া ও আগুনের লেলিহান শিখা দেখা যাচ্ছে। দ্রুত শিশু তাসিনকে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যায় সেখানে থাকা আবুল হাসান। এরপরই শুরু হয় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার দৌড়ঝাপ। কারণ গোডাউনের পাশে রয়েছে হাজাম পাড়া বস্তি। স্থানীয় জনতা, স্কাউটের সদস্য ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা প্রায় ২ ঘন্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে এ ঘটনায় কোন হতাহত হয়নি। আগুন পাশ্ববর্তী কোন ঘরেও ছড়াতে পারেনি। শিশুটির কাঁন্নায় যেন আশির্বাদ হয়ে আগুন থেকে হাজাম পাড়ার শতাধিক পরিবারকে রক্ষা করল। খুলনা গেজেটের এ প্রতিবেদককে এমনটাই জানালেন স্থানীয় দিনমজুর আবুল হাসান।

হাজাম পাড়ার বাসিন্দা আবুল হাসান খুলনা গেজেটকে বলেন, বিকালে চা আনতে পাশ্ববর্তী দোকানে যাচ্ছিলাম। এমন সময় তাসিনের কান্নার শব্দ ভেসে আসে। তাকিয়ে দেখি বাটা জুতার গোডাউন থেকে আগুন দেখা যাচ্ছে। আগুনের তীব্রতা সহ্য করতে না পেরে ঘুমন্ত শিশুটি জেগে চিৎকার শুরু করে। দৌড়ে শিশুটিকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যায়। আগুনের লেলিহান শিখা দেখে আমি রীতিমোতো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। যেন আগুন সর্বত্র ছড়িয়ে না পড়ে। তখন চিৎকার করলে পাশের লোকজন ছুটে এসে আগুন নেভানোর চেষ্টা চালায়। তাদের সাথে যুক্ত হয় স্থানীয় স্কাউটস সদস্যরা। সবাই মিলে পাশের মাদ্রাসা থেকে পানি এনে আগুন নেভানোর চেষ্টা চালায়। এরই মধ্যে ঘটনাস্থলে চলে আসে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা। বয়রা ও খালিশপুশের মোট ছয়টি ইউনিট দু’ঘন্টা সময় নিয়ে আগুনের লেলিহান শিখাকে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়।

ঘটনাস্থানের পাশের চায়ের দোকানদার জামিলা খাতুন জানান, ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা না এলে হাজাম পাড়া আজ শেষ হয়ে যেত। অগ্নিকান্ডের পরপর ফায়ার সর্ভিস ও পুলিশ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল ও তার পাশের এলাকার বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। তারা নতুন রাস্তার মোড় থেকে বয়রা মোড় পর্যন্ত সব ধরনের যানবহন চলাচল বন্ধ করে। যার ফলে উভয় পাশের রাস্তায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।

বয়রা ফায়ার স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন কর্মকর্তা মোঃ সাইদুজ্জামান বলেন, আগুনের যে কুন্ডলী সৃষ্টি হয়েছিল তাতে এলাকাটা পুড়ে শেষ হয়ে যেত। আগুনের সূত্রপাত এবং কি পরিমান ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তার সঠিক হিসেব এখন দেওয়া সম্ভব নয়। তদন্ত সাপেক্ষে জানানো সম্ভব হবে।

খুলনা ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স এর উপ-পরিচালক মো. আকরাম হোসেন বলেন, খবর পেয়ে খুলনা সদর, খালিশপুর ও দৌলতপুরের দুটি করে মোট ৬টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করেছে। কীভাবে আগুন লেগেছে তা তদন্ত না করে বলা যাবে না।

খালিশপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাক আহমেদ বলেন, ওই অগ্নিকান্ডে হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি। তবে জুতার গুদামের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

বাটা কোম্পানীর সেলস্ ম্যানেজার শেখ মিরাজ হোসেন বলেন, মার্কেটিংয়ের কাজে আমি বাইরে ছিলাম। ডিপো ম্যানেজার মোবাইলের মাধ্যমে জানান ডিপোতে আগুন লাগছে; এসে দেখি ভয়াবহ অবস্থা। অন্তত ৪ থেকে ৫ কোটি টাকার জুতা পুড়ে শেষ। আগামী ঈদ উপলক্ষে নতুন মডেলের বিপুল পরিমাণ মাল ডিপোতে আনা হয়েছিল।

ডিপো ম্যানেজার মোঃ আরিফ হোসেন বলেন, কিভাবে আগুন লাগলো বুঝতে পারছি না। প্রায় পাঁচ কোটি টাকা মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। খুলনার এই প্রধান ডিপোটি ঢাকা থেকে সরাসরি পরিচালিত হয়।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!