মায়ের জন্য পাত্র চেয়ে যুবকের ফেসবুকে পোস্ট নিয়ে তুমুল আলোচনার মধ্যে এবার শাশুড়ির জন্য পাত্র চেয়ে পাত্র-পাত্রীসংক্রান্ত একটি ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট দিয়েছেন পুত্রবধূ।
পোস্ট দেয়ার দুই দিনের মধ্যে বেশ কয়েকজনের সঙ্গে যোগাযোগও হয়েছে এবং তাদের মধ্যে অন্তত দুজনকে ভালো লেগেছে। এখন কথাবার্তা চলছে। তিনি আশা করছেন, চার হাত এক করে দিয়ে শাশুড়ির জীবনের একাকিত্ব ঘোচাতে পারবেন তিনি।
সেই তরুণী জানিয়েছেন, তার শাশুড়ির একাকিত্বের বিষয়টি চিন্তা করে তার স্বামীর সঙ্গে আলোচনা করেই এই পোস্ট দিয়েছেন। আর এর দুই দিন পর তার শাশুড়িকে জানান। শুরুতে তিনি আবার বিয়েতে রাজি ছিলেন না। তবে পরে দুজন মিলে রাজিও করান।
সেই নারী ও পুত্রবধূর মধ্যে পরিচয় ছিল বিয়ের আগেই। জানিয়েছেন, বিয়ের আগেই মেয়েটি তাকে আম্মু বলে ডাকতেন, বলতেন তাকে বিয়ে দেবেন। বিয়ের আট মাসের মাথায় যখন এই উদ্যোগ সত্যি সত্যি পুত্রবধূ নিয়েছে, তখন তিনি আর না করতে পারেননি।
ফেসবুকে পোস্ট দিলেও গণমাধ্যমে আপাতত তার বা শাশুড়ি- কারও নাম প্রকাশ করতে চাইছেন না সেই তরুণী। জানিয়েছেন, এটি তার শাশুড়ির ইচ্ছা। সেটিকেই সম্মান জানাচ্ছেন।
পাত্র-পাত্রী খুঁজতে ইদানীং বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ফেসবুক গ্রুপ ‘বিসিসিবি মেট্রিমনিয়াল: হেভেনলি ম্যাচ’। সেখানে নিজের জন্য, ভাইবোনের জন্য, ছেলেমেয়ের বা অন্য স্বজনের জন্য পোস্ট দেয়া হয় অহরহ।
এর ভিড়ে আগস্টের শুরুতে মায়ের জন্য পাত্রের সন্ধান পেয়ে ব্যাপক আলোচনা তৈরি করেন মোহাম্মদ অপূর্ব নামে এক যুবক। তার বাবা মারা গেছেন বেশ কয়েক বছর আগে। ব্যবসায়িক প্রয়োজনে তিনি ও তার ভাই মাকে সময় দিতে পারেন না। তাই এই নিঃসঙ্গতা কাটাতে মায়ের সঙ্গী চাইছেন তিনি।
শাশুড়ির জন্য পাত্র চেয়ে পোস্টের পেছনেও কারণ অনেকটাই একই রকম। এক যুগেরও বেশি সময় আগে বিচ্ছেদ হয়েছে বর্তমানে ৫১ বছর বয়সী নারীর। একমাত্র ছেলেকে বিয়ে দেয়ার পর তিনি অনেকটাই নিঃসঙ্গ। ছেলে ও পুত্রবধূ দেশের বাইরে চলে যাচ্ছেন, তখন তিনি আরও একা হয়ে পড়বেন।
পরে ছেলে ও পুত্রবধূ মিলে ঠিক করলেন, এই নিঃসঙ্গতা কাটাতে হবে। পোস্টদাতা পুরান ঢাকার বাসিন্দা। গত ১৪ সেপ্টেম্বর তিনি পোস্টটি দেন সেই গ্রুপে।
তখনও তার শাশুড়ি বিষয়টি জানতেন না। শাশুড়িকে জানান দুই দিন পর। সেই তরুণী বলেন, ‘আগে জানালে হয়তো উনি রাজি হতেন না। কারণ আমি আর আমার হাজবেন্ড মিলে তাকে রাজি করাতে অনেক কাঠখড় পোহাতে হয়েছে।’
কোন ভাবনা থেকে এমন উদ্যোগ নিয়েছেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে শুধু বাবারাই দ্বিতীয় বিয়ে করতে পারে। আমরা এটাই স্বাভাবিক ধরে নিই। কিন্তু একজন নারীরও যে একাকিত্ব আছে, একটা সময় গিয়ে তার সঙ্গীর দরকার হয়, সেটা আমরা ভুলে যাই।
‘বেশ কিছুদিন ধরেই খেয়াল করছিলাম আম্মু (শাশুড়ি মা) একটু চুপচাপ থাকেন। ২০০৯ সাল থেকে আমার শ্বশুরের কাছ থেকে তিনি আলাদা। ওনাদের ডিভোর্স হয়ে গেছে। আম্মুর সব কিছুই ছিল ছেলেকেন্দ্রিক। ছেলে ছাড়া অন্য কিছু কখনই ভাবেননি। তার জীবনের অনেকটা সময় ছেলের কথা ভাবতে গিয়ে স্যাক্রিফাইস করেছেন। আমরা চাই না উনি আরও স্যাক্রিফাইস করুক।’
এই ফাঁকে পোস্টদাতা তরুণী জানিয়ে রাখছেন, শাশুড়ির সঙ্গে বিচ্ছেদের পর সেই ব্যক্তি যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে আরেকটি সংসার করছেন।
এই উদ্যোগে পরিবারের অন্য সদস্যের সম্মতি আছে কি না- জানতে চাইলে সেই তরুণী বলেন, ‘মূলত তার ছেলেই সব। প্রথমদিকে ওর একটু সমস্যা ছিল। পরে রাজি হয়েছে।
‘উদ্যোগটা আমিই নিয়েছি। কারণ একটা মেয়ে হয়ে আমি বুঝি, মায়েরা বলতে পারেন না। কিন্তু একাকিত্ব তাদেরও অনেক কষ্ট দেয়।’
শাশুড়ির জন্য কেমন পাত্র চান, সেটিও জানিয়ে দিয়েছেন সেই তরুণী। তিনি লেখেন, ‘সামাজিক মিশুক প্রকৃতির একজন মানুষ, যার সঙ্গে মন খুলে কথা বলা যাবে, বিশ্বাস করা যাবে, আমাকে বুঝবে আর ভুলগুলো শুধরে দেবে। নিজেকে বুঝতে দেবে।’
পাত্রের কেমন পারিবারিক আর্থিক অবস্থা চাইছেন, সে বিষয়ে সেই তরুণী উল্লেখ করেন, ‘পারিবারিক অবস্থান মধ্যবিত্ত হলেও সমস্যা নাই, বেশি ধনী হলেও সমস্যা নাই।
‘সরকারি চাকরি হলে ভালো হয়, তবে বিদেশি সিটিজেনশিপপ্রাপ্ত হলে আরও ভালো হবে।’
কেউ কি যোগাযোগ করেছেন- জানতে চাইলে সেই তরুণী বলেন, ‘অনেকেই যোগাযোগ করছেন। এর মধ্যে দুজনকে আমার ভালো লেগেছে। যতক্ষণ না হচ্ছে, কিছু তো বলা যায় না। তাই এখনই সবটা সামনে আনতে চাই না। আমার এই উদ্যোগ সফল হলে আমি নিজেই সবাইকে জানাব।’
বিয়েটা হয়ে গেলে নাম, ছবি- সবই প্রকাশ করা হবে বলেও জানিয়ে দেন সেই তরুণী।
আপত্তি নেই শাশুড়ির
যার জন্য পাত্র খোঁজা হচ্ছে, সেই নারীর সঙ্গেও কথা হয়েছে নিউজবাংলার। তিনি বলেন, ‘বউ যখন আমার ছেলের গার্লফ্রেন্ড ছিল, তখন থেকেই বলত, আম্মু আপনাকে বিয়ে দেব। আমিও হাসতাম। ছেলেকে বিয়ে করিয়েছি আট মাস। এর মাঝেই ও এই উদ্যোগ নিয়েছে। আমিও বলেছি আচ্ছা বিয়ে দাও। তোমরা যেটা ভালো মনে করো সেটা হবে।’
ব্যাপক প্রশংসা ফেসবুকে
এই প্রতিবেদন লেখার আগ পর্যন্ত দুই দিনে এই পোস্টে কমেন্ট পড়েছে ১৬৩টি। এর মধ্যে প্রত্যেকটি কমেন্টেই এই উদ্যোগের প্রশংসা করা হয়েছে। জিনিয়া রহমান পাপড়ি নামে একজন লিখেন, ‘আমরা যে আস্তে আস্তে সংকীর্ণ মন মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে পারছি, সেটা দেখে ভালো লাগছে। দোয়া করি, আন্টির বাকি জীবনটা সুন্দরভাবে কাটানোর জন্য তার মতই একজন সঙ্গী মিলুক।
‘আমি আমার মাকে তো কোনোভাবেই রাজি করাতে পারলাম না বিয়ের জন্য। এই বয়সে একা একা থাকতে থাকতে আর নেগেটিভ থিংকিং করতে করতে মানসিকভাবে এতটা অসুস্থ হয়ে গেছে যে, তার সঙ্গে থাকা, কথা বলা, কোনোটাই করা যাচ্ছে না। সন্তান, বন্ধু বান্ধবের সঙ্গে এতটা ফ্রি হওয়া যায় না। সঙ্গী লাগে একজন।’