ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বড় হারের পর তৃতীয় ম্যাচে ঘুরে দাঁড়ায় অস্ট্রেলিয়া। চতুর্থ ম্যাচেও জয়ের লক্ষ্যে তারা পাকিস্তানকে ৩৬৮ রানের বড় লক্ষ্য ছুড়ে দেয়। জবাবে ব্যাট করতে নেমে দারুণ শুরু পেয়েছিল বাবর আজমের দল। দুই ওপেনার ইমাম-উল-হক ও আব্দুল্লাহ শফিকের জুটিতে পাকিস্তান ১৩৪ রান করে। বড় লক্ষ্যের পথে তাদের কিছুটা আক্রমণাত্মক খেলার প্রয়োজন ছিল, সেটিই পূরণ করেছেন ওপেনাররা। তবে তাদের বিদায়ের পর ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে যায় দলটি। তারপরও আশা জাগিয়ে ৩০০ রানের মাইল ফলক টপকে সবকটি উইকেট হারিয়ে ৩০৬ রান সংগ্রহ করে। তবে শেষ রক্ষা হয়নি বাবর আজমদের। শেষ পর্যন্ত ৬২ রানে হেরে মাঠ ছাড়ে তারা।
বিশ্বকাপের চলতি আসরে নিজেদের প্রথম দুই ম্যাচে নেদারল্যান্ডস ও শ্রীলংকার বিপক্ষে জয়ে ফুরফুরে মেজাজে ছিল পাকিস্তান। কিন্তু নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের বিপক্ষে স্রেফ উড়ে যায় বাবর আজমরা। নিজেদের চতুর্থ ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে রেকর্ড রান তাড়া করতে নেমে হেরে যায় পাকিস্তান।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জিততে হলে পাকিস্তানকে রেকর্ড গড়তে হতো। অতীতে বিশ্বকাপে শ্রীলংকার বিপক্ষে ৩৪৫ রানের টার্গেট তাড়ায় জয় পেয়েছে পাকিস্তান। জিততে হলে সেই রেকর্ড ভেঙে পাকিস্তানকে করতে হতো ৩৬৮ রান। এমন কঠিন লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ৪৫.৩ ওভারে ৩০৫ রানে অলআউট হয় পাকিস্তান।
এদিন বেঙ্গালুরুতে ব্যাটিংয়ে নেমে উড়ন্ত সূচনা করেন পাকিস্তানের দুই ওপেনার আব্দুল্লাহ শফিক ও ইমাম-উল-হক। উদ্বোধনী জুটিতে ১৩৪ রান করে ফেরেন আব্দুল্লাহ। তার আগে ৬১ বলে ৭টি চার আর দুটি ছক্কায় করেন ৬৪ রান।
এরপর মাত্র ২০ রানের ব্যবধানে ফেরেন আরেক ওপেনার ইমাম-উল হকও। তিনিও মার্কাস স্টয়নিসের শিকার হন। সাজঘরে ফেরার আগে ৭১ বলে ১০টি বাউন্ডারির সাহায্যে করেন ৭০ রান।
তিন নম্বর পজিশনে ব্যাটিংয়ে নেমে ১৪ বলে মাত্র ১৮ রান করে ফেরেন পাকিস্তানের অধিনায়ক বাবর আজম। তার বিদায়ে ২৬.২ ওভারে ১৭৫ রানে ৩ উইকেট হারায় পাকিস্তান।
এরপর সৌদ শাকিল (৩০), ইফতেখার আহমেদ (২৬), মোহাম্মদ রিজওয়ানরা (৪৬) আউট হওয়ার পর ম্যাচ থেকে কার্যত ছিটকে যায় পাকিস্তান। শেষদিকে রীতিমতো উইকেট পতনের কারণে ৪৫.৩ ওভারে ৩০৫ রানেই অলআউট হয় পাকিস্তান। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ৫৩ রানে ৪ উইকেট নেন অ্যাডাম জাম্পা।
শুক্রবার (২০ অক্টোবর) ভারতের বেঙ্গালুরুর এম চেন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপের ১৩তম আসরের ১৮তম ম্যাচে টস জিতে অস্ট্রেলিয়াকে ব্যাটিংয়ে পাঠায় পাকিস্তান।
ব্যাটিংয়ে নেমে ইনিংসের শুরু থেকেই তাণ্ডব চালাতে থাকেন অস্ট্রেলিয়ান দুই ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার ও মিচেল মার্শ। এই জুটিতে তারা ৩৩.৫ ওভারে ২৫৯ রান করেন। বিশ্বকাপের ইতিহাসে এটা রেকর্ড ষষ্ঠ সর্বোচ্চ রানের জুটি।
এর আগে ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের দুই তারকা ব্যাটসম্যান ক্রিস গেইল ও মারলন স্যামুয়েলস জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দ্বিতীয় উইকেটে রেকর্ড সর্বোচ্চ ৩৭২ রানের জুটি গড়েন।
তবে বিশ্বকাপে উদ্বোধনীতে রেকর্ড ২৮২ রানের জুটি গড়েন শ্রীলংকান দুই তারকা ব্যাটসম্যান তিলকারত্নে দিলশান ও উপুল থারাঙ্গা। তারা ২০১১ সালের বিশ্বকাপে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ঘরের মাঠ পাল্লেকেল্লেতে এই রেকর্ড গড়েন। তাদের সেই রেকর্ড আজও অক্ষত আছে।
শুক্রবার ডেভিড ওয়ার্নার ও মিচেল মার্শ উদ্বোধনীতে ২৫৯ রান করার পর অস্ট্রেলিয়া শিবিরে জোড়া আঘাত হানেন পাকিস্তানের তারকা পেসার শাহিন শাহ আফ্রিদি।
পরপর দুই বলে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফেরেন ওপেনার মিচেল মার্শ ও তিন নম্বর পজিশনে ব্যাটিংয়ে নামা গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। মিচেল মার্শ ১০৮ বলে ১০টি চার আর ৯টি ছক্কার সাহায্যে ১২১ রান করে ফেরেন।
এরপর আসা-যাওয়ার মিছিলে অংশ নেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, স্টিভ স্মিথ, ডেভেডি ওয়ার্নার, জশ ইনজিলস, মার্কাস স্টয়নিস, মার্নাস লাবুশেন, মিচেল স্টার্ক ও জশ হ্যাজলউড। দলের হয়ে ১২৪ বলে ১৪টি চার আর ৯টি ছক্কার সহায্যে ১৬৩ রান করেন ডেভিড ওয়ার্নার।
পাকিস্তানের হয়ে ১০ ওভারে ৫৪ রানে ৫ উইকেট নেন শাহিন শাহ আফ্রিদি। বিশ্বকাপে এ নিয়ে দুই ম্যাচে পাঁচ বা তার বেশি উইকেট শিকার করলেন পাকিস্তানের তারকা পেসার।
খুলনা গেজেট/কেডি