খুলনা, বাংলাদেশ | ৪ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৯ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  রাজধানীর উত্তরা থেকে সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম গ্রেপ্তার
  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৬ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১০৮৩
  ১৬ ডিসেম্বর ঘিরে কোনো ধরণের হামলার শঙ্কা নেই : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

রূপসায় ব্রিধান-৮৭ এর বাম্পার ফলন : দারুণ খুশি কৃষক

মো: আবদুর রহমান

ব্রিধান-৮৭ চাষে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছে খুলনার রূপসা উপজেলার কৃষকরা। এবার এই ধানের বাম্পার ফলনে দারুন খুশি তারা।

ধান বাংলাদেশের প্রধান খাদ্য শস্য। আমাদের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় ক্যালোরির শতকরা প্রায় ৮০ ভাগই আসে ভাত থেকে। এ দেশের মাটি ও আবহাওয়া ধান চাষের জন্য বিশেষ উপযোগী। এক্ষেত্রে ব্রিধান-৮৭ অধিক ফলনশীল জাতের একটি রোপা আমন ধান। এ জাতটির জীবনকাল কম হওয়ায় ধান কর্তনের পর একই জমিতে অনায়াসে রবি ফসল বিশেষ করে সরিষা ও মসুর চাষ করা যায়। ব্রিধান-৮৭ জাতের ধানের চাল লম্বা ও চিকন হওয়ায় বিদেশে রপ্তানিযোগ্য। এ জাতের ধানের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এটি অধিক ফলনশীল এবং এর জীবনকাল কম।

পূর্ণ বয়স্ক ধান গাছ ১২২ সেঃ মিঃ পর্যন্ত লম্বা হয়। ব্রিধান-৮৭ জাতের ধানের ডিগ পাতা খাড়া, লম্বা ও চওড়া এবং পাতার রং হালকা সবুজ। এ জাতের ধান গাছের কান্ড শক্ত তাই গাছ লম্বা হলেও ঢলে পড়ে না। ধানের ছড়া লম্বা ও ধান পাকার সময় ছড়া ডিগ পাতার উপরে থাকে। ধান পাকার সময় কান্ড ও পাতা সবুজ থাকে। বিধায় সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকে ফলে শিষের গোড়ার ধানও পুষ্ট হয়। এর গড় জীবনকাল ১২৭ দিন। হেক্টর প্রতি ৬.৫ টন ফলন পাওয়া যায় এই ধান। তবে উপযুক্ত পরিচর্যা পেলে ব্রিধান-৮৭ জাতটি প্রতি হেক্টরে ৭.০ টন পর্যন্ত ফলন দিতে সক্ষম। এ ধানের চালের আকার ও আকৃতি লম্বা ও চিকন এবং রং সাদা। এক হাজার পুষ্ট ধানের ওজন প্রায় ২৪.১ গ্রাম। চালে অ্যামাইলোজের পরিমাণ শতকরা ২৭ ভাগ । এ ধানের চালের ভাত ঝরঝরে।

মোঃ আঃ কাদের শেখ (৬০)। রূপসা উপজেলার আলাইপুর গ্রামের একজন আদর্শ কৃষক । তিনি এবছর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহায়তায় ধান, গম ও পাট বীজ উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিতরণ প্রকল্পের আওতায় এক একর জমিতে ব্রিধান-৮৭ জাতের একটি রোপা আমন ধান বীজ উৎপাদন প্রদর্শনী বাস্তবায়ন করেন। সম্প্রতি এ প্রদর্শনীর নমুনা কর্তন করে হেক্টর প্রতি সাড়ে ছয় মেট্রিকটন ধানের ফলন পাওয়া গেছে। বিঘা প্রতি ফলন হয়েছে ২৩ মণ । ধানের এ বাম্পার ফলন পেয়ে দারুণ খুশি কৃষক আঃ কাদের।


আঃ কাদের জানান, বীজতলায় বীজবপণ ও চারা রোপণের পর মাত্র ১৩০ দিনের মধ্যে তিনি এ ধান কর্তন করে বিঘা প্রতি ২৩ মণ ফলন পেয়েছেন। অল্প সময়ে অধিক ফলন হওয়ায় এলাকার অন্যান্য কৃষকদের মাঝেও এ জাতের ধান চাষে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। ইতিমধ্যে এ গ্রামের অনেক কৃষক তার নিকট বীজের জন্য এ ধান ক্রয় করতে চেয়েছেন। তিনি এধান বীজ হিসেবে সংরক্ষণ করে তা আগ্রহী কৃষকদের মাঝে বিক্রি করবেন। যাতে আগামীতে আলাইপুর গ্রামে ব্রিধান-৮৭ ধানের ব্যাপক চাষ হয়।

একই গ্রামের মোঃ আবুল হাসান, মোঃ আনোয়ার হোসেন, লুৎফর রহমান শেখ ও ইসলাম সরদারসহ বেশ কয়েকজন কৃষক এবছরই প্রথম ব্রিধান-৮৭ জাতের ধান চাষ করেছেন। ভালো ফলন পাওয়ায় তারা খুব খুশি। কৃষকরা জানান, এ জাতের ধানে পোকামাঁকড় ও রোগবালাইয়ের আক্রমণ অনেক কম। বিশেষ করে ক্ষতিকর বাদামি গাছ ফড়িং (কারেন্ট পোকা) আক্রমণ হওয়ার আগেই এ ধান কর্তণ শুরু হয়।

রূপসা উপজেলার কৃষি অফিসার মোঃ ফরিদুজ্জামান বলেন, ধান, গম ও পাট বীজ উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিতরণ প্রকল্প এবং বীজ সহায়তা কর্মসূচির আওতায় এ উপজেলায় মোট ১৭৩ হেক্টর জমিতে ব্রিধান-৮৭ জাতের ধান চাষ হয়েছে। এ জাতটি স্বল্প সময়ে অধিক ফলন দেয়। এ জাতের ধান চাষ ও বীজ উৎপাদনে কৃষকদের আগ্রহী করতে এ উপজেলায় ৫ টি এসএমই কৃষক মাঠ স্কুল ও বীজ উৎপাদন প্রদর্শনী বাস্তবায়িত হচ্ছে।

তিনি আরো জানান, ইতিমধ্যে আমন ধান বীজ উৎপাদন প্রদর্শনীর কয়েকটি নমুনা শস্য কর্তন করে আশানুরূপ ফলন পাওয়া গেছে। এসব প্রদর্শনীতে উৎপাদিত ধান বীজ হিসেবে ব্যবহৃত হবে। আগামীতে এ ধানের চাষ আরও বাড়বে বলে তিনি আশা করেন।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!