খুলনা, বাংলাদেশ | ২৪ আশ্বিন, ১৪৩১ | ৯ অক্টোবর, ২০২৪

Breaking News

  ড. শেখ আব্দুল রশিদকে মন্ত্রিপরিষদ সচিব হিসেবে ২ বছরের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ
  দেশে ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৫ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৯৮১
  ছয় মামলায় সাবের হোসেনের জামিন, কারামুক্তিতে বাধা নেই
  বাংলাদেশী ৫ জেলেকে ধরে নিয়ে গেছে আরকান আর্মি

রাইস ট্রান্সপ্লান্টারে চারা রোপনে ব্যর্থ কৃষক, ফিরেছে সনাতন পদ্ধতিতে

শেখ নাদীর শাহ্, পাইকগাছা

পাইকগাছায় রবি মৌসুমে ২০২১-২২ অর্থ বছরে কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় সমলয় পদ্ধতিতে রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের মাধ্যমে বোরো ধান রোপনের শুরুতেই দেখা দিয়েছে নানা সমস্যা। বীজতলা তৈরীতে জার্মিনেশন-ট্রে ও পলিথিন ব্লকে চারা উৎপাদন হলেও মেশিনে চারা রোপন করা যাচ্ছেনা। বাধ্য হয়ে কৃষকরা ফিরে গেছেন শ্রমিক নিয়ে সেই সনাতন পদ্ধতিতে।

পাইকগাছা কৃষি অধিদপ্তর চলতি বোরো মৌসুমে কৃষি প্রনোদনা কর্মসূচীর আওতায় উপজেলার কপোতাক্ষ তীরবর্তী সোনাতনকাটি এলাকায় ৫০ একর জমি চিহ্নিত করে সেখানকার ৫২ জন কৃষককে সমলয় বোরো আবাদের আওতায় নেয়।

শুরুতে ১৮ ডিসেম্বর ‘২১’ চিহ্নিত ব্লকে কৃষি অধিদপ্তরের সার্বিক তত্ত্বাবধায়নে প্রায় আড়াই হাজার জার্মিনেশন ট্রে ও বিকল্প পলিথিন বেডে বীজতলা তৈরীর পর গত ১৮ জানুয়ারী থেকে রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের মাধ্যমে চারা রোপন শুরু করা হয়েছে। তবে এ পদ্ধতিতে চারা রোপনের উপযুক্ত মাটির অভাবে শুরতেই দেখা দেয় নানা বিপত্তি।

কৃষকরা খুলনা গেজেটকে জানান, এ পদ্ধতির আওতায় বেলে-দোআঁশ মাটির প্রয়োজন হলেও সেখানকার মাটি ভিন্ন। একারনেই রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের মাধ্যমে চারা রোপন সম্ভব হচ্ছেনা বলে জানিয়েছেন কৃষি অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। যদিও বীজতলা থেকে চারা সংগ্রহ ও জমিতে চারা রোপনের জন্য শ্রমিক খরচ বিঘা প্রতি ১ হাজার ২ শ’ টাকা হারে কৃষি অফিস থেকে বহন করা হবে বলে কৃষকদের আশ্বস্থ করা হয়েছে।

ঐ ব্লকের কৃষক মো: জামিরুল ইসলাম গাজী খুলনা গেজেটকে জানায়, সেখানে তাদের ৪ বিঘা জমি রয়েছে। কৃষি কর্মকর্তাদের কথায় তিনিও সায় দিয়েছিলেন এ পদ্ধতির বোরো আবাদে। তাদেরকে বলা হয়, এ পদ্ধতির আবাদে সনাতন পদ্ধতি থেকে অর্থ এবং সময় দুই সাশ্রয় হবে। শুধুমাত্র কৃষকদের পক্ষে নাঙ্গল ও সেচ খরচ বহন করতে হবে বাকি খরচ কৃষি অফিস থেকেই বহন করবে।

তিনি আরও জানান, প্রতি বিঘা জমিতে বোরোর আবাদ করতে তাদের রোপনের জন্য শ্রমিক বাবদ ২ হাজার, বীজতলা থেকে চারা সংগ্রহ করতে ৫ শ’ ও চাষের জন্য নাঙ্গল খরচ বাবদ ১ হাজার টাকাসহ সর্বমোট সাড়ে ৩ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। যদিও কৃষি অফিস থেকে তাদেরকে বিঘা প্রতি ১ হাজার ২ শ’টাকা হারে সরবরাহ করা হবে বলে জানানো হয়েছে।

এব্যাপারে ব্লকের আরেক কৃষক জি,এম আব্দুস সাত্তার খুলনা গেজেটকে জানান, ওই বিলে তার ৯০ শতক জমি রয়েছে। সমলয় আবাদে বীজতলা তৈরী করতে তাদের ৫০ একর জমির জন্য ৩ শ’কেজি এসএল-৮এইচ (বোরো হাইব্রিড) জাতের বীজ সরবরাহ করা হয়। এছাড়া একর প্রতি ৫০ কেজি এমওপি ও ৬০ কেজি ডিএপি সরবরাহ করা হয়েছে। এরপর একর প্রতি ৯০ কেজি ইউরিয়া সার সরবরাহ করা হবে।

তবে রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের মাধ্যমে চারা রোপন করতে না পারায় কৃষকরা ফিরে গেছেন সেই পুরাতন পদ্ধতিতে।

যদিও কৃষি অধিদপ্তরের পক্ষে এলাকায় সমলয়ে চাষাবাদে রাইস ট্রান্সপ্লাান্টারের মাধ্যমে ধান রোপন এটাই প্রথম উল্লেখ করে বলা হয়, এ পদ্ধতিতে আবাদ করলে প্রতি ঘন্টায় ১ জন শ্রমিকের মাধ্যমে ১বিঘা জমি চাষ করা যায়। এভাবে প্রতিদিন ৮ঘন্টায় ৮ বিঘা জমি চাষ করলে খরচ ও অর্থ উভয়ের অপচয় কমে যাবে। সনাতন পদ্ধতিতে ৮ বিঘা জমিতে সেখানে শ্রমিক লাগবে ৩৫ জন। খরচও হবে প্রায় তিনগুন বেশি। তবে নানা সংকটে কৃষি অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের আশার বাণী শেষ পর্যন্ত নিরাশায় পরিণত হয়েছে বলেও মনে করেন কৃষকদের অনেকে।

এব্যাপারে পাইকগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ জাহাঙ্গীর আলম খুলনা গেজেটকে বলেন, সমলয় পদ্ধতিতে রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের মাধ্যমে ধানের চারা রোপন পদ্ধতি এ এলাকায় এটাই প্রথম। তবে শেষ পর্যন্ত মাটির কারণে মেশিনে চারা রোপন করা সম্ভব হয়নি। তবে সাড়ে ৪ হাজার জার্মিনেশন ট্রে প্রদানের কথা থাকলেও আড়াই হাজার ট্রে-প্রদানের ব্যাপারে সদুত্তর মেলেনি তার কাছ থেকে।

প্রসঙ্গত, গত ১৮ জানুয়ারী সকাল ১০ টায় উপজেলার হরিঢালী ইউনিয়নের সোনাতনকাটিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মমতাজ বেগমের সভাপতিত্বে রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের মাধ্যমে ধান রোপনের উদ্বোধন করেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (খুলনা অঞ্চল) অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ মোঃ ফজলুল হক।

খুলনা গেজেট/ এস আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!