সাতক্ষীরায় যৌতুকের টাকা না পেয়ে ফুটন্ত পানি ঢেলে স্ত্রীকে হত্যার চেষ্টা করেছে পাষান্ড স্বামী। ঘটনার ১০ দিন পর থানায় মমালা হয়েছে। মামলায় শ্বশুর, শ্বাশুড়ি ও স্বামীকে আসামি করা হয়েছে। ভিকটিম আশা রানী মন্ডল সাতক্ষীরা সদর হাসপাতারে
আসামীরা হলেন, গৃহবধূ আশা রানী মন্ডলের স্বামী তালা উপজেলার মাগুরা গ্রামের প্রভাত কুমার দাসের ছেলে বিপ্লব দাস, শশুর প্রভাত কুমার দাস ও শাশুড়ি অনিতা রানী দাস।
এলাকাবাসি সূত্রে জানা গেছে, সাতক্ষীরার তালা উপজেলার তালা মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী আশা মন্ডল ঘোনা গ্রামের প্রদীপ রায়ের মেয়ে। প্রায় তিন বছর আগে কলেজে যাওয়া আসার পথে একই উপজেলার মাগুরা গ্রামের প্রভাত দাসের ছেলে বিপ্লব এর সাথে প্রেমের সর্ম্পকে জড়িয়ে পড়ে প্রেমের সর্ম্পকের কারণে গোপনে তারা বিয়ের সিদ্ধান্ত নেয় । বিয়ের পর বছর খানেক বাইরে থেকে পারিবারিক সমঝোতায় উভয়ে বাড়িতে ফিরে আসে।
দম্পত্য জীবনের শুরুতেই আশার বাবা নগদ টাকা আর বিভিন্ন জিনিসপত্রসহ প্রায় ৩লাখ টাকার মালামাল জামাইকে। এরপর বিপ্লব আরও ৫লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে। দাবিকৃত এই টাকা দিতে না পারায় তাদের সংসারে নেমে আসে চরম অশান্তি। এই নিয়ে স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে প্রায় ঝগড়া হতে থাকে।
১০ নভেম্বর সকালে উভয়ের মধ্যে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে বিপ্লব ফুটন্ত গরম পানি স্ত্রীর শরীরে ঢেলে দেয়। পুড়ে যায় শরীরের অর্ধেক অংশ। এসময় তার মা এবং বোন পাশেই থাকলেও কেউ আশাকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসেনি।
এঘটনার পর আশাকে ঘরের মধ্যে ২দিন আটকে রাখা হলেও তাকে চিকিৎসা দেয়া হয়নি। খবর পেয়ে আশাকে আনতে বাবা ও ভাই গেলে তাদেরও সেখানে লাঞ্ছিত করা হয়। তবুও জোরপূর্বক আশাকে উদ্ধার করে ১১ নভেম্বর সন্ধ্যায় সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আশা রাণী জানান, নেশাখোর যৌতুক লোভী বিপ্লবের সাথে প্রেম করে বিয়ে করা জীবনের ভুল সিদ্ধান্ত ছিল।
আশা’র মা লতিকা রাণী মন্ডল জানান, যৌতুকের জন্য আমার মেয়েকে নানাভাবে চাপ সৃষ্টিসহ বিভিন্ন ষড়যন্ত্র করতে থাকে বিপ্লব। এসব নির্যাতন সয্য করতে না পেরে শ্বশুর বাড়িতে যেতেই নারাজ ছিল আশা। তারপরও আমরা তাকে সেখানে পাঠাতাম।
আশার বাবা প্রদীপ কুমার মন্ডল জানান, আমার মেয়ে সম্পর্ক করে বিয়ে করায় আমরা মেনে নেয়নি। তারপরও আলোচনার মাধ্যমে মেনে নিলেও যৌতুকের চাপে বিভিন্ন সময় তাকে হত্যার চেষ্টা করে আসছিল জামাইসহ তার পরিবার। তিনি এঘটনায় জড়িত দোষীদের শাস্তির দাবি জানান। এবিষয়ে তিনি পুলিশ সুপার সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. শেখ ফয়সাল আহমেদ জানান, নির্যাতিত আশাকে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। তার শরিরের ৪৫ ভাগ পুড়ে গেছে। বর্তমানে তার অবস্থা ভালোর দিকে যাচ্ছে। তবে পুরোপুরি সুস্থ্য হতে আরও সময় লাগবে বলে তিনি জানান।
তালা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) চৌধুরি রেজাউল করিম জানান, অতীতে ৩লাখ টাকা যৌতুক নিয়েছে এবং আরও ৫লাখ টাকা যৌতুকের জন্য চাপ সৃষ্টির এক পর্যায়ে গায়ে ফুটন্ত গরম পানি ঢেলে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। বিষয়টি ভিকটিমের পরিবার পুলিশকে অবহিত করেনি। ফলে পুলিশ এঘটনা জানতো না। শনিবার সন্ধ্যায় খবর পেয়েই পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করে। এবিষয়ে তিনজনকে আসামী করে রাত পৌনে ১১টায় তালা থানায় একটি মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। আসামীদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যহত আছে।