বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে যুক্তরাজ্যে তিনজনের ডিএনএ ব্যবহার করে একটি শিশুর জন্ম দেয়া হয়েছে। শিশুটির অধিকাংশ ডিএনএ এসেছে তার বাবা ও মায়ের কাছ থেকে। মোট ডিএনএর প্রায় ০.১ শতাংশ এসেছে তৃতীয় একজন দাতা নারীর কাছ থেকে।
ভয়ানক মাইটোকন্ড্রিয়াল রোগ নিয়ে শিশুর জন্ম প্রতিরোধ করার জন্য এই পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়েছে।
সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে এমনটি উঠে এসেছে।
এরকম অন্তত পাঁচটি শিশু জন্ম নিয়েছে। তবে এর বেশি কিছু আর জানানো হয়নি।
বংশগত রোগ নিয়ে শিশুর জন্ম নেয়া রোধে বাবা-মা ছাড়াও তৃতীয় আরেকজনের সুস্থ ডিএনএ ব্যবহারের অনুমোদন রয়েছে যুক্তরাজ্যে। ২০১৮ সালের শুরুতে এ সিদ্ধান্তটিকে যৌথভাবে অনুমোদন দেয় ইউকে ফার্টিলিটি রেগুলেটর ও দ্য হিউম্যান ফার্টিলাইজেশন অ্যান্ড এমব্রায়োলজি অথরিটি (এইচএফইএ)।
নিউক্যাসল ফার্টিলিটি সেন্টারের চিকিৎসকেরা এই পদ্ধতি নিয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
মাইটোকন্ড্রিয়াল রোগ নিরাময়ের যোগ্য নয়। মাইটোকন্ড্রিয়াল রোগ বংশগত রোগ। জন্মের কয়েক ঘণ্টা পরপরই অথবা জন্মের কয়েকদিনের মধ্যে এ রোগ শিশুর প্রাণ কেড়ে নিতে পারে। বেশ কিছু পরিবারে এ রোগে একাধিক শিশুর মৃত্যু হয়। এসব পরিবারে সুস্থ শিশুর জন্ম দেয়ার একমাত্র উপায় হিসেবে দেখা হচ্ছে এ পদ্ধতিকে।
অতি ক্ষুদ্র মাইটোকন্ড্রিয়া শরীরের প্রায় প্রত্যেক কোষের ভেতরে রয়েছে। এরা (মাইটোকন্ড্রিয়া) খাদ্য থেকে শক্তি উৎপাদন করতে সহায়তা করে।
ত্রুটিপূর্ণ মাইটোকন্ড্রিয়া খাদ্যকে শক্তিতে রূপান্তর করতে পারে না। এর ফলে মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত, পেশি ক্ষয়, হৃদযন্ত্রের কার্যকারিতা নষ্ট এবং অন্ধত্বও দেখা দেয়।
শিশু ত্রুটিপূর্ণ মাইটোকন্ড্রিয়া পায় শুধু মায়ের ডিএনএ থেকে। এ কারণে মাইটোকন্ড্রিয়াল ডোনেশন চিকিৎসা হচ্ছে এক ধরনের আইভিএফ যাতে কোনো সুস্থ দাতার ডিম্বাণুর মাইটোকন্ড্রিয়া ব্যবহার করা হয়।
মাইটোকন্ড্রিয়াল ডোনেশনের দুটি পদ্ধতি রয়েছে। একটি পদ্ধতিতে দান করা হয় বাবার শুক্রাণু মায়ের ডিম্বাণুকে নিষিক্ত করার পর; আর দ্বিতীয় পদ্ধতিতে দান করা হয় নিষিক্ত করার আগে।
এ পদ্ধতিতে ডিএনএর প্রত্যাশিত পরিবর্তন হয়, যা প্রজন্মের পর প্রজন্ম স্থায়ী হবে।
এ পদ্ধতি প্রয়োগের ফলে দুরারোগ্য কিছু বংশানুক্রমিক রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে। মায়ের কাছ থেকে সন্তানের শরীরে জটিল জিনগত রোগ নির্মূল করতেই মূলত এ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন ব্রিটিশ চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা। সূত্র: বিবিসি।
খুলনা গেজেট/এনএম