যশোরে রিকশাচালক ইউনুস আলী একটি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তার বাড়ি শহরের রায়পাড়া সার গোডাউন এলাকায়। রোববার (২৪ ডিসেম্বর) বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত তার ওপর নির্যাতন চালানো হয়। অসুস্থ ইউনুস সোমবার দুপুরে প্রেসক্লাব যশোরে এসে নির্যাতনের রোমহর্ষক বর্ণনা দেন। তবে নির্যাতনের বিষয়টি অস্বীকার করেছে সংস্থাটি।
প্রেসক্লাবে নির্যাতনের বর্ণনায় রিকশাচালক ইউনুস আলী (৩৫) বলেন, রোববার বেলা ৩টার দিকে তার বাড়িতে অপরিচিত চারজন যান। এরপর তাকে নাম ঠিকানা জিজ্ঞাসা করেন। তারা ঘরে ঢুকে বলেন, আমরা র্যাবের লোক। এরপর ঘরের এদিকে-ওদিকে একটু তাকিয়েই তাদের মধ্যে থেকে একজন আমাকে বলেন, মালডা কই? বুঝতে না পারায় আমি বললাম, কী জিনিস স্যার? তখন একজন বলেন, বুঝবি, যখন হাত-পা বেঁধে ঝুলাবো!
ইউনুস বলেন, ঘরে তারা কিছু না পেয়ে আমার হাতে হ্যান্ডকাফ লাগান। চেয়ারে পড়ে থাকা মেয়ের হিজাব দিয়ে আমার মুখ বেঁধে ফেলেন। এরপর তাদের কাছে থাকা লাঠি দিয়ে এলোপাতাড়িভাবে পেটাতে থাকেন। বিকেল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত তাদের বেধড়ক মারপিট চলে। মুখ বাঁধার কারণে আমি চিৎকারও করতে পারিনি। পরে তারা তাকে ছেড়ে দেয়। ইউনুস যশোর শহরের রায়পাড়া সার গোডাউন এলাকায় একটি ভাড়া বাড়িতে স্ত্রী, দুই সন্তান ও বয়স্ক মাকে নিয়ে বসবাস করেন। নির্যাতনের বিষয়টি নিয়ে তিনি পুলিশের কাছে গেলেও তারা কোনো প্রতিকার দেয়নি। শেষমেষ সোমবার দুপুরে প্রেসক্লাবে এসে সাংবাদিকদের কাছে বিষয়টি জানান ইউনুস আলী।
ইউনুস আরো বলেন, আমি রিকশা চালিয়ে সংসার চালাই। প্রতিদিনের মতো রোববার শহরে রিকশা চালিয়ে দুপুরের ভাত খেতে বাড়ি যাই। ভাত খাওয়ার পরই র্যাবের লোকজন আসে। এসে অস্ত্রের কথা জিজ্ঞাসা করে। তারা অভিযান চালিয়ে কোনো অস্ত্র পাননি। তিনি বলেন, আমি কখনো অস্ত্রই দেখেনি। তারপরও আমাকে এভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। র্যাবের সদস্যরা যখন আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন, তখন আমি কোরআন শরিফ ও আমার মায়ের মাথায় হাত রেখে বলেছি, আমার কাছে কোন অস্ত্র নেই। তারপরও তারা বিশ্বাস করেননি। হাতে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে, মুখে হিজাব দিয়ে বেঁধে নির্যাতন করেছেন। আমি এখন অসুস্থ ও আতঙ্কিত অবস্থায় দিনাতিপাত করছি।
ইউনুসের মা রাবেয়া বেগম বলেন, আমরা অনেক গরিব মানুষ। আমার ছেলে রিকশা চালিয়ে সংসার চালায়। কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত না। কোনো মামলাও নাই। তারপরও মিথ্যা অভিযোগে আমার ছেলেটারে র্যাব এসে নির্যাতন করেছে। আমরা তাদের কতবার বুঝিয়েছি, তারপরও তারা কোনো কথা শোনেনি। ছেলেটা এখন অসুস্থ।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ইউনুস আলী গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর গ্রামের মৃত শাহাদাত মোল্লার ছেলে। প্রায় এক দশক ধরে তিনি পরিবার নিয়ে যশোর শহরের রায়পাড়া সার গোডাউন এলাকায় বসবাস করেন। নিয়মিত রিকশা চালানোর পাশাপাশি সার গোডাউনেও কাজ করেন তিনি। নির্যাতনে অসুস্থ অবস্থায় তিনি বর্তমানে যশোর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এ ব্যাপারে র্যাব দাবি করেছে, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তারা জানতে পারেন রিকশাচালক ইউনুসের বাড়িতে অস্ত্র রাখা রয়েছে। এ জন্য তারা অভিযান চালায়। তবে অভিযানে অস্ত্রের সন্ধান পাওয়া যায়নি।
বিষয়টি নিয়ে র্যাব-৬ যশোরের কোম্পানি অধিনায়ক মোহাম্মদ সাকিব হোসেন বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিকে ইউনুসের বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। আমাদের কাছে তথ্য ছিল তার বাড়িতে অস্ত্র রাখা আছে। জিজ্ঞাসাবাদে অস্ত্র রাখার কথা ইউনুস ও তার মা স্বীকার করেছেন। তবে অভিযানের আগেই অস্ত্রটি যিনি রেখেছিলেন তিনি নিয়ে গেছেন। অভিযানে তাকে কোনো নির্যাতন করা হয়নি। তার অভিযোগ মিথ্যা।
খুলনা গেজেট/কেডি