যশোরে সোনা চোরাচালান মামলায় দু’জনের যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড ও অর্থদন্ড দিয়েছেন আদালত। একইদিনে একটি দুর্নীতি মামলায় অপর এক ব্যক্তির ১০ বছরের কারাদন্ড ও অর্থদন্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। সাজাপ্রাপ্ত তিন আসামির মধ্যে দু’জন আটক ও একজন পলাতক রয়েছেন।
আদালত সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ ইখতিয়ারুল ইসলাম মল্লিক একটি সোনা চোরাচালান মামলায় দুই আসামির যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড ও প্রত্যেকের ৫০ হাজার টাকা জরিমানার আদেশ দিয়েছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আদালতের পিপি এম ইদ্রিস আলী।
সোনা চোরাচালান মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা হলো, রাজবাড়ী সদর উপজেলার হোগলাডাঙ্গী গ্রামের আব্দুল গণি মিজির ছেলে হোসেন মিজি ও একই জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার খালখোলা গ্রামের বাহাদুর মন্ডলের ছেলে আক্তার হোসেন মন্ডল।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালের ২০ মার্চ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে যশোর সদর উপজেলার বাহাদুরপুর এলাকায় তল্লাশি চালায় ৪৯ বিজিবির একটি টহলদল। দুপুর ২টায় শরীয়তপুর থেকে বেনাপোলগামী ফেম পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস থামিয়ে তল্লাশি চালিয়ে হোসেন মিজি ও আক্তারকে আটক করা হয়। পরে তাদের পায়ের স্যান্ডেলে লুকানো অবস্থায় ১৩টি সোনারবার উদ্ধার হয়। যার ওজন চার কেজি ৫৪০ গ্রাম। বাজারমূল্য তিন কোটি ১৭ লাখ ৮০ হাজার টাকা। এ ঘটনায় যশোর বিজিবি ব্যাটালিয়নের নায়েক সোহাগ হোসেন বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন। মামলাটি তদন্ত করে কোতোয়ালি থানার এসআই আবু হেনা মিলন ২০২১ সালের ২১ এপ্রিল আদালতে চার্জশিট জমা দেন। বৃহস্পতিবার ওই দুই আাসমির উপস্থিতিতে এ মামলার রায় ঘোষণা করেন আদালত। আটকের পর থেকেই আসামিরা যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি রয়েছেন।
এদিকে, একটি দুর্নীতি মামলায় স্পেশাল জজ (জেলা ও দায়রা জজ) সামছুল হক এক আসামির ১০ বছরের সশ্রম কারাদন্ড ও ২০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ডের আদেশ দিয়েছেন। একই সাথে দুর্নীতির মাধ্যমে আত্মসাৎ করা ১৬ লাখ ১৪ হাজার ৮শ’৬০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুদকের পিপি সিরাজুল ইসলাম।
সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি প্রশান্ত মন্ডল খুলনা জেলার আড়ংঘাটা উপজেলার রংপুর গ্রামের কালীপদ মন্ডলের ছেলে। প্রশান্ত মন্ডল নড়াইল গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক সিনিয়র কেন্দ্র ব্যবস্থাপক ও দ্বিতীয় স্বাক্ষরকারী।
আদালত সূত্র জানায়, তিনি গ্রামীণ ব্যাংকে চাকরিরত অবস্থায় তার বিরুদ্ধে ব্যাংকের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে। বিষয়টি নজরে আসে দুদকের। প্রাথমিকভাবে এ ঘটনার সত্যতা যেয়ে আত্মসাতের অভিযোগে ২০১৫ সালের ৩০ মার্চ নড়াইল সদর থানায় মামলা করেন সমন্বিত জেলা কার্যালয় যশোরের সহকারী পরিচালক হাফিজুল হক। পরে মামলাটি তদন্ত করেন সহকারী পরিচালক শহীদুল ইসলাম মোড়ল। তদন্তে উঠে আসে নড়াইল শাখা থেকে বিভিন্ন আমানতকারীদের কাছ থেকে ডিপোজিট পাস বইয়ের মাধ্যমে তিনি টাকা আদায় করেন। এছাড়া জাল ঋণ প্রস্তাব বিতরণ সংক্রান্ত রেকর্ডপত্র তৈরি করে কৌশলে ঋণ অনুমোদন করে ওই টাকাও আত্মসাৎ করেন। সেই হিসেবে সর্বমোট তিনি ১৬ লাখ ১৪ হাজার ৮শ’৬০ টাকা আত্মসাত করেছেন বলে দুদকের তদন্তে উঠে আসে। ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর প্রশান্ত মন্ডলের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দেন দুদক কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম মোড়ল। বৃহস্পতিবার আদালত এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। আসামি পলাতক থাকায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানার আদেশ দেয়া হয়।
খুলনা গেজেট/ টি আই