সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে পুঁজি হারিয়েছেন যশোরাঞ্চলের চামড়া ব্যবসায়ীরা। ঈদুল আজহা পরবর্তী শনিবার দেশের অন্যতম বৃহত্তম রাজারহাটের চামড়ার হাটে আসেননি ঢাকার পাইকাররা। এ কারণে তারা চামড়ার যথাযথ মূল্যপ্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। হতাশ হয়ে অশ্রæসিক্ত নয়নে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ছাগলের চামড়া ভৈরব নদে ফেলে দিয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
লাভের আশায় বাগেরহাট থেকে গরুর সাড়ে ৩শ’ পিছ চামড়া নিয়ে যশোরের রাজারহাটে এসেছিলেন পরিতোষ হালদার। কিন্তু লাভতো দূরের কথা, ১৫ হাজার টাকা পুঁজি হারিয়েছেন তিনি। এ কারণে দিশেহারা হয়ে পড়েন পরিতোষ। কীভাবে মহাজনের ঋণ শোধ করবেন, সেই চিন্তায় তিনি হাটে বসে সময় পার করছেন। কেবল পরিতোষ নয়, এই অবস্থা রাজারহাটে আসা বেশিরভাগ চামড়া বিক্রেতার। তাদের বক্তব্য, সিন্ডিকেটের কবলে পড়েছেন তারা। আসেননি বাইরের ব্যাপারিরা। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা সেই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে পানির দামে চামড়া কিনেছেন।
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চামড়ার মোকাম রাজারহাটে এদিন সকাল নয়টার মধ্যে ২৫ থেকে ৩০ হাজার চামড়া ওঠে। ক্ষুদ্র বিক্রেতারা লাভের আশায় তাদের কেনা চামড়া নিয়ে হাটে আসেন। কিন্তু দুপুর পর্যন্ত তেমন কোনো ক্রেতা পাননি তারা। স্থানীয় দু’ একজন ব্যবসায়ী কারো কারো চামড়া নাড়াচাড়া করে চলে যান। অর্ধেক দামে কিনতে চান দু’ একজন ব্যবসায়ী। কোনো কোনো ব্যবসায়ী দরদাম চূড়ান্ত করার পর ঠুনকো অজুহাতে চামড়া না কিনে চলে যান।
যশোরের কচুয়া গ্রাম থেকে গরুর ১শ’ চামড়া নিয়ে হাটে আসেন পাগল চাঁদ নামে এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। সাথে ছিল ছাগলের ৫০টি চামড়া। স্থানীয় ক্রেতারা ছাগলের চামড়ার দাম এতটাই কম বলেন, তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে ৫০টি চামড়া ভৈরব নদে ফেলে দেন।
গরুর ১৩৩ পিছ চামড়া নিয়ে হাটে আসেন মণিরামপুরের স্বদেব। তিনি বলেন, বাইরের কোনো ব্যাপারি নেই। স্থানীয় ক্রেতারা কেনা দামের অর্ধেক দামে চামড়া কিনতে চাচ্ছেন। অবস্থা যা তাতে অর্ধেক পুঁজিই থাকবে না। একই কথা বলেন নড়াইলের সুজিত, গোপালগঞ্জের রমনী বিশ্বাস ও সুকুমার বিশ্বাস, মোংলার নিতাই দাস ও আনন্দ মন্ডল, কলারোয়ার জিয়ারুল, বাগেরহাটের রুস্তমসহ অনেক ব্যবসায়ী।
ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বলেন, এদিনের হাটে ঢাকাসহ অন্যান্য স্থানের পাইকাররা আসেননি। ফলে হাটে গরু ছাগলের চামড়ার কোন দাম ছিল না। স্থানীয় ক্রেতারা সরকার নির্ধারিত দামের অর্ধেকে চামড়া কেনার চেষ্টা করেন। ফলে হাটে পানির দামেই চামড়া বেচাকেনা হয়েছে। সিন্ডিকেটের কারণে ক্ষোভ ও কষ্টে ব্যবসায়ীরা হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
জিয়ারুল নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, গরুর চামড়া কিনে লবণ দিয়ে হাটে আনা পর্যন্ত তার খরচ হয়েছে ১২শ’ টাকা। হাটে সেই চামড়ার দাম বলেছেন ৪শ’ থেকে ৫শ’ টাকা। ছাগলের চামড়ায় তার খরচ পড়ে ৮০-৯০ টাকা। ছাগলের চামড়ার দাম ওঠে মাত্র ১০ টাকা। এ কারণে অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ছাগলের চামড়া পার্শ্বকর্তী ভৈরব নদে তাদের চামড়া ফেলে দিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। ক্ষুদ্র বিক্রেতারা বলেন, রাজারহাটের যে অবস্থা তাতে আগামীতে বাইরের ব্যাপারিরা আর আসবেন না।
বৃহত্তর যশোর চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন মুকুল বলেন, হাটে ব্যাপক পরিমাণ চামড়া উঠলেও বাইরে থেকে কম সংখ্যক ব্যাপারি আসায় দাম একটু কম ছিল। তবে সব চামড়া বিক্রি হয়ে যাবে। কেউ খালি হাতে বাড়ি ফিরবে না।
হাটের ইজারাদার চামড়া ব্যবসায়ী হাসানুজ্জামান হাসু বলেন, হাটে কমপক্ষে ২৫ থেকে ৩০ হাজার চামড়া উঠেছে। তবে বাইরের ব্যাপারির সংখ্যা কম। এ কারণে বিক্রেতারা আশানুরূপ লাভ করতে পারবেন না।