যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে ফের গোলযোগের ঘটনা ঘটেছে। শনিবার রাতে সেখানে অবস্থানরত কিশোর বন্দিরা কেন্দ্রটি ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়েছে। এসময় একজন পুলিশ কর্মকর্তা ও এক বন্দি আহত হয়েছেন। রাতেই ঘটনাস্থলে একাধিক কর্মকর্তা ও ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। মধ্যরাতে সেখানে যান জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান।
বন্দিরা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে যথারীতি স্বেচ্ছাচারিতা এবং চৌর্যবৃত্তির অভিযোগ করে। যদিও কেন্দ্রের কর্মকর্তারা বলেছেন, তাদের অভিযোগ পুরোপুরি সঠিক নয়।
যশোরের চাঁচড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইন্সপেক্টর রোকিবুজ্জামান বলেন, রাত সাড়ে ১১টার দিকে তারা খবর পান, যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের বন্দিরা বিভিন্ন দাবিতে ভাঙচুর শুরু করেছে। তারা ভবনের গ্লাস ভাঙচুর ছাড়াও ভেতরে আগুন ধরিয়েছে। তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের খবর দেন। এরপর কেন্দ্রে যান এডিএম কাজী সায়েমুজ্জামান, এনডিসি এ এম মামুনুর রশিদ। রাত একটার দিকে যান জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান। তার সাথে ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) জাহাঙ্গির আলম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিলাল হোসেনের নেতৃত্বে বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য।
ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ কর্মকর্তারা শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের বন্দি বিক্ষোভ ও অসন্তোষের কারণ বোঝার চেষ্টা করেন। এসব কর্মকর্তারা কেন্দ্রের বন্দি কিশোর রাকিব, সাব্বির ও শাকিল তিন প্রতিনিধিকে ডেকে নিয়ে কথা বলেন। ওই তিন বন্দি ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছে অভিযোগ করে, তাদের ঠিকমত পেটপুরে খেতে দেয়া হয় না। দুপুরে হাফ প্লেট ভাত, রাতে এক পিছ রুটি দেয়া হয়। এতে তাদের ক্ষুধা নিবারণ হয় না। স্বজনরা এসে টাকা বা খাবার দিয়ে গেলে কর্তৃপক্ষ তা বন্দিদের না দিয়ে নিজেরা খেয়ে ফেলেন। এ কারণে তারা খাদ্যের পরিমাণ বৃদ্ধি ও মান উন্নয়নের দাবি জানায়।
ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ কর্মকর্তারা বন্দি এই তিন প্রতিনিধির কথা শোনেন ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন। এরপর রাত ২টার দিকে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
এনডিসি এ এম মামুনুর রশিদ জানান, পরিবেশ শান্ত করা হয়েছে। বন্দিদের প্রতিনিধিদের বোঝানো হয়েছে, সমস্যার স্থায়ী সমাধান করা হবে।
তবে সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক অসিত কুমার সরকার বলেন, বন্দিদের অভিযোগ পুরোপুরি ঠিক না। পুলিশ এসেছে, তারা বিষয়টি দেখছে। এর বেশি কিছু বলতে তিনি রাজি হননি।
শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক জাকির হোসেন বলেন, গোলযোগে একজন বন্দি আহত হওয়ায় তাকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তবে তিনি ওই বন্দির নাম জানাননি। এছাড়া ভাঙচুর ঠেকাতে গিয়ে মফিজুল ইসলাম নামে ডিবির একজন এসআই আহত হয়েছেন।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কাজী সায়েমুজ্জামান সাংবাদিকদের ব্রিফিংযে জানান, কোনো রকম রক্তপাত ছাড়াই সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান হয়েছে। বন্দিদের দাবি যদি ন্যায্য হয়, তবে তা সমাধান করা হবে। খতিয়ে দেখা হবে তাদের অভিযোগগুলোও। কেন্দ্রের যেসব বাতি ভাঙচুর হয়েছে, রাতেই তা পুনঃস্থাপনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
খুলনা গেজেট/এনএম