যশোর সদর উপজেলায় গত দু’দিনে মুক্তিযোদ্ধাদের কাগজপত্র যাচাই-বাছাইয়ে ৮ জন অমুক্তিযোদ্ধা প্রমাণিত হয়েছেন। একইসাথে গেজেটভুক্ত ৩৩ জন মুক্তিযোদ্ধা কমিটির সামনে হাজির হননি। তারা রয়েছেন অন্ধকারে। মিথ্যা স্বাক্ষীতে ৬ মাসের ভাতা বন্ধের ঘোষণায় স্বাক্ষীর অভাবে ওই ৩৩ জনই ছিলেন অনুপস্থিত। অবশ্য এদের কয়েকজন দেশের বাইরে রয়েছেন। এ ৩৩ জনের ব্যাপারে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল চূড়ান্ত ব্যবস্থা নেবেন বলে জানিয়েছেন বাছাই কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী আব্দুস সবুর হেলাল। বাছাই কমিটির সকল সদস্যের স্বাক্ষর সম্বলিত যাচাই বাছাইয়ের প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো প্রস্তুতি চলছে।
২০১০ সালের আগ পর্যন্ত যেসব মুক্তিযোদ্ধা গেজেটভুক্ত হয়েছেন তাদের ব্যাপারে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল জামুকার পক্ষে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ে নেতিবাচক নানা তথ্য যায়। অনেক মুক্তিযোদ্ধার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলায় সর্বশেষ মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় থেকে ২৩৫ জন মুক্তিযোদ্ধাকে যাচাইয়ের আওতায় আনতে পত্র আসে যশোরে।
এ ব্যাপারে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের সাথে দফায় দফায় বৈঠক করে যশোর জেলা প্রশাসক ও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে পত্র প্রেরণ করা হয়। সে মোতাবেক যশোরের ২৩৫ জন গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধার কাছে এ চিঠি পৌঁছে দেয়া হয়। এরমধ্যে ৪৭ জনের ব্যাপারে জামুকার সুপারিশ থাকা, লাল মুক্তিবার্তায় নাম থাকায় তাদের বাদ রেখে সর্বশেষ ১৮৮ জনকে চিঠি দিয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে হাজির হতে বলা হয়। ৩০ জানুয়ারি ও ৩১ জানুয়ারি সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত এ যাচাই বাছাই কার্যক্রম চলে। গত দু’দিনে মন্ত্রণালয় ও জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের নির্দেশনা ও বাছাই বিধি মোতাবেক শান্তিপূর্ণ পরিবেশে বাছাই সম্পন্ন করেছে গঠিত কমিটি।
যাচাই বাছাই কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী আব্দুস সবুর হেলাল জানান, নির্ধারিত দু’দিনে ৩৩ জন মুক্তিযোদ্ধা বাছাই বোর্ডে হাজির হননি। তারা না আসার কোন কারণও উপস্থাপন করেননি। এছাড়া স্বাক্ষী প্রমাণ ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র উপস্থাপনে ব্যর্থ হওয়া ও ৩৩ প্রকার ক্যাটাগরির প্রশ্নের সদুত্তোর দিতে ব্যর্থ হওয়ায় ৮ জন গেজেটভুক্ত ব্যক্তি অমুক্তিযোদ্ধা বলে প্রমাণিত হয়েছেন। এছাড়া অনুপস্থিত ৩৩ জনকে ধরে নেয়া হচ্ছে তারা বেশিরভাগই অমুক্তিযোদ্ধা হওয়ায় বোর্ডের সামনে হাজির হননি। তারা স্বাক্ষী ও কাগজপত্র যোগাড় করতে পারেননি। অবশ্য এদের কয়েকজন দেশের বাইরে বা অসুস্থ থাকতে পারেন। ওই ৩৩ জনের ব্যাপারে মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। এছাড়া ২০১৭ সালের বাছাইয়ে বাদ পড়া অনেকেই এবারের যাচাই বাছাইয়ে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা বলেও প্রমাণ মিলেছে।
এদিকে, বাছাই কমিটিতে জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি ছিলেন বৃহত্তর যশোর জেলা মুজিব বাহিনী কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী হোসেন মনি, যশোর-৩ সদর আসনের এমপি কাজী নাবিল আহমেদের মনোনীত জামুকার প্রতিনিধি ছিলেন যশোর জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা রাজেক আহমেদ। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি ও সদস্য সচিব ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুজ্জামান।
এ ব্যাপারে যশোর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও কমিটির সদস্য সচিব কামরুজ্জামান বলেন, যাচাই-বাছাই তালিকায় আনা ১৮৮ জনের মধ্যে বেশিরভাগই উপস্থিত ছিলেন। স্বচ্ছতার সাথে বাছাই কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। কমিটির সভাপতি ও সদস্যরা মিলে এ ব্যাপরে চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠাবেন। এরপর মন্ত্রণালয় যাচাই বাছাই কার্যক্রমের ফলাফলের উপর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন।
খুলনা গেজেট/ টি আই