যশোরে বাসের মধ্যে স্বামী পরিত্যক্তা তরুণীকে (২৫) ধর্ষণ, ধর্ষণ চেষ্টা ও মারপিটের ঘটনায় মামলা হয়েছে। এতে ধর্ষকসহ আটক ৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। এরা সবাই পরিহবন শ্রমিক। এ ঘটনায় প্রথমে গণধর্ষণ প্রচার হলেও পুলিশি তদন্তে উঠে আসে ধর্ষণকারী একজন ও অন্যরা সংঘবদ্ধ ধর্ষণের চেষ্টা ও মারপিটে অভিযুক্ত।
কোতয়ালি মডেল থানা সূত্র জানিয়েছে, রাজশাহী শহরের লক্ষীপুর এলাকার জিপিও প্রাইভেট হাসপাতালের পরিছন্নতাকর্মী বাঘাপাড়া উপজেলার বন্দবিলা মির্জাপুর গ্রামের ওই তরুণী ৮ অক্টোবর বিকেল ৫টার দিকে যশোরে আসার জন্য রাজশাহীর বহদ্দার মোড় থেকে বাসে ওঠেন। এমকে পরিবহনের যাত্রীবাহী বাসে (যশোর-ব-১১-০১২৪) তিনি রাত সাড়ে ১১ টার দিকে যশোরে পৌছান।
এসময় তার গ্রামের বাড়িতে যাবার কোন ব্যবস্থা ছিল না। এক পর্যায়ে তিনি পূর্ব পরিচিত ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার কাশিপুর পশ্চিমপাড়ার ওহিদুল ইসলামের ছেলে এমকে পরিবহন বাসের হেলপার মনিরুল ইসলাম মনিরের কাছে রাত্রি যাপনের জন্য সহায়তা চান। মনিরুল তাকে জানায় বাসের মধ্যে রাত্রি যাপনের পরিবেশ তৈরি করে দেবে। তার কথায় বিশ^াস করে ওই মহিলা মনিরুলের সাথে যান। এরপর রাত দেড়টার দিকে বকচর কোল্ডস্টোর মোড়ে ওই বাসে মনিরুল তাকে ধর্ষণ করে। বিষয়টি জানাজানি হলে আরো ৬ বাস শ্রমিক চড়াও হয় তরুণীর ওপর। তারাও ধর্ষণের জন্য তরুণীর ওপর চড়াও হয় ও ধস্তাধস্তি করে। ধর্ষণে বাধা দেয়ায় বেধড়ক মারপিট করা হয় তাকে। এ খবর ওই রাতে থানায় পৌঁছালে পুলিশ ধর্ষক মনিরুলসহ চেষ্টাকারী ৬ জনকে আটক করে।
আটক ৬ জন হচ্ছে, যশোরের বারান্দী মোল্লাপাড়ার শফিকুল ইসলাম বাবুর ছেলে শাহিন আহমেদ জনি, সিটি কলেজপাড়ার রনজিতের ছেলে কৃষ্ণ বিশ^াস, মৃত সমরের ছেলে শুভাশীষ সিংহ, বারন্দীপাড়ার জবেদুল ইসলাম জাবেদের ছেলে রাকিবুল ইসলাম রাকিব, কাজী আব্দুস সামাদের ছেলে কাজী মুকুল ও বেজপাড়ার গোলাম মাওলার ছেলে মাইনুল ইসলাম।
সন্ধ্যায় আটককৃতদের মধ্যে মনিরুলের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ, বাকি ৬ জনের বিরুদ্ধে ধর্ষণচেষ্টা ও মারপিটের অভিযোগে মামলা করেন ভুক্তভোগী ওই তরুণী। এ মামলা রেকর্ড হবার পর সন্ধ্যায় আটক সবাইকে আদালতে চালান দেয়া হয়।
এদিকে, ধর্ষণের শিকার ওই তরুণী বর্তমানে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। হাসপাতালের চিকিৎসক জাহিদ হাসান হিমেল তার চিকিৎসা দেন। তিনি জানান, বর্তমানে ভুক্তভোগীর অবস্থা অনেকটা ভালো। তাকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার আরিফ আহমেদ জানান, আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে পরীক্ষার পর বোঝা যাবে আসলে তার সাথে কি হয়েছে।
ভুক্তভোগী তরুণী সকাল থেকে পুলিশ ও সাংবাদিকদের সাথে অসংলগ্ন কথাবার্তা বলছিলেন। প্রথমে তিনি জানান, বাসের মধ্যে তাকে একটি জুস খেতে দেয় হেলপার মনিরুল। এটি খাওয়ার পর তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। জ্ঞান ফেরার পর তিনি বুঝতে পারেন তাকে সংঘবদ্ধরা ধর্ষণ করেছে। আবার পরে জানান, বাসের হেলপার মনিরুল একা তাকে ধর্ষণ করেছে। অন্য ৬ জনের মধ্যে ৩ জন ধর্ষণের চেষ্টা করেছে। অন্য ৩ জন মারপিট করে। আবার কখনও জানায়, মনিরুল তার পূর্ব পরিচিত। নিজের নাম ঠিকানা নিয়েও সারাদিন লুকোচুরি করেন তরুণী। প্রথমে নিজের একটি নাম বলেন। জানান বাড়ি মাগুরার শালিখা উপজেলার হাজরাকাটি ইউনিয়নের শতপাড়া গ্রামে। পরে জানান তার অন্য একটি নাম। বাড়ি যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার মির্জাপুর গ্রামে।
এ বিষয়ে যশোর জেলা পরিবহন সংস্থা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোর্তজা হোসেন ও সাবেক সভাপতি আজিজুল আলম মিন্টু, সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ হারুন অর রশিদ ফুলু জানান, মূলত ধর্ষণে মনিরুল একাই জড়িত। এছাড়া মিউচ্যুয়াল ঘটনাও হতে পারে। এরপরও মনিরুল দোষী। তবে অন্য ৬ জন নিদোর্ষ। তারা জানিয়েছেন এমকে পরিবহনের গাড়িটি ছিল বিসিএমসি কলেজ এলাকায়। রাতে গাড়িটি হেলপার মনিরুল নিয়ে চলে যায় কোল্ডস্টোর মোড়ে। গাড়িটি নিদির্ষ্ট স্থানে না থাকায় চুরি হয়েছে বলে খবর চলে যায় মালিকের কাছে। মালিকের কথায় বাস খোঁজাখুঁজি শুরু হয় ওই রাতে। ওই ৬ শ্রমিক গভীররাতে বাসটি দেখতে পান কোল্ডস্টোর এলাকায়। তারা দেখেন সেখানে মনিরুল বাসের মধ্যেই অনৈতিক কাজ করেছে মহিলার সাথে। এসময় তারা মনিরুলকে মারপিট করে।
এ ব্যাপারে যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার অফিসার ইনচাজ মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, এ ঘটনায় মূলত স্থানীয়রা পুলিশকে খবর দেয়। স্থানীয়রা ধর্ষকসহ সহযোগিদের আটকে রেখে গণধোলাই দেয়। পুলিশের একটি টহল দল ঘটনাস্থল থেকে ভিকটিমকে উদ্ধার করে যশোর হাসপাতালে ভর্তি করে। বিষয়টি নিয়ে পুলিশের কাছে নানামুখি বক্তব্য এসেছে। আপাতত মহিলার বক্তব্য, ডাক্তারের বক্তব্য ও স্থানীয়দের তথ্যে পর্যালোচনা করে মামলা রেকর্ড করা হয়েছে।
খুলনা গেজেট/কেএম