খুলনা, বাংলাদেশ | ২৮ মাঘ, ১৪৩১ | ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

Breaking News

  নোয়াখালীতে ট্রাকচাপায় বাইসাইকেলে থাকা স্কুলগামী দুই ছাত্র নিহত
  ঢাকায় প্লাস্টিক কারখানায় আগুন, নিয়ন্ত্রণে ৭ টি ইউনিট

যশোরে ঝুঁকি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বঙ্গবন্ধুর বিধ্বস্ত ম্যুরাল, আতংকিত মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক, যশোর

যশোর শহরের বকুলতলায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিধ্বস্ত ম্যুরালটি ঝুঁকি নিয়ে দাড়িয়ে রয়েছে। শহরবাসীর আশংকা যে কোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে ম্যুরালটি। এতে প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে প্রথমে গণক্ষোভের শিকার হয় ম্যুরালটি। সেসময় একদফা ভাংচুর করা হয়। এরপর গত বৃহস্পতিবার ভারতে পালিয়ে থাকা শেখ হাসিনার অনলাইনে ভাষণের পর প্রতিবাদে ক্ষোভে ফেটে পড়ে যশোরের ছাত্র-জনতা।

এ ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশের অংশ হিসেবে দ্বিতীয় দফা ছাত্র-জনতা দেশের সর্ববৃহৎ ম্যুরালটি স্কেভেটর দিয়ে প্রায় ৮০ শতাংশ ভেঙে দেয়। তবে সেটি পুরোটা না গুড়িয়েই তারা চলে যান। সেই থেকে গত তিন দিন বিধ্বস্ত ম্যুরালটি সেখানে ঝুঁকি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পাশ দিয়ে ভারী যানবাহন চলাচলের সময় প্রতিনিয়ত কেঁপে উঠছে দাঁড়িয়ে থাকা ম্যুরালের অবশিষ্ট অংশটুকু। এ কারণে শহরবাসীর আশংকা যে কোন সময় ভেঙে পড়তে পারে ম্যুরালটি। এ জন্য দুর্ঘটনা এড়াতে তারা দ্রুত এটি পূর্ণাঙ্গভাবে অপসারণের দাবি জানিয়েছেন। এ দাবি যশোরের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের।

জানা গেছে, ১৬ ফুট উচ্চতার এ ম্যুরালটি ২০১২ সালের শেষের দিকে ২৯ লাখ ৯ হাজার ৯৫ টাকায় নির্মিত হয়। শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকা বকুলতলা মোড়ে এটি নির্মাণ করা হলেও সে সময়ে অধিকাংশ মানুষের আপত্তি ছিল স্থান নির্ধারণ নিয়ে। কিন্তু শহরবাসী ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পাননি।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভুত্থানের পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের এই ম্যুরালটি আংশিক ভাংচুর করে সেখানে কালেমা খচিত স্টিকার দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। এ অবস্থায় গত ৬ মাসে ম্যুরালটি সেখানে দাড়িয়ে থাকলেও সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার রাতে দ্বিতীয় দফা ছাত্র-জনতার আক্রোশে পড়ে ম্যুরালটি। ভারতে পালিয়ে থাকা শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি ভাষণ দেওয়ার পরই শাবল-কোদাল ও স্কেভেটর দিয়ে ভাংচুর করা হয় ম্যুরালটি। পরদিন শুক্রবার দিনভর ভাঙা হয় ম্যুরালটি। কিন্তু এটি শতভাগ ভাঙা সম্ভব না হওয়ায় ওই অবস্থায় ফেলে রেখে চলে যান ছাত্র-জনতা।

স্থানীয়রা জানান, স্কেভেটর দিয়ে ম্যুরালটির প্রায় ৮০ শতাংশ ভেঙে দেয়া হয়েছে। এখন শুধুমাত্র কয়েকটি বড় বড় রডের ওপর ম্যূরালটি দাঁড়িয়ে আছে। এটি যে কোনো সময় ভেঙে পড়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

শহিদুল ইসলাম নামে এক ইজিবাইক চালক বলেন, গভীর রাতে শহরের পালবাড়ী এলাকা থেকে ভারী যানবাহন শহরে প্রবেশ করে। এসব যানবাহন যাওয়ার সময় আশপাশের স্থাপনা কেঁপে উঠতে থাকে। এ অবস্থায় যে কোনো সময় বিধ্বস্ত ম্যুরালটি ভেঙে পড়তে পারে। এতে মানুষের ক্ষতি হতে পারে।

পাশের টেইলার্স ব্যবসায়ী রহমত আলী জানান, বিধ্বস্ত ম্যুরালটি নিয়ে তিনি আতংকে রয়েছেন। এটি ভেঙে তার দোকানে পড়লে প্রাণহানি ও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শংকা রয়েছে। এ অবস্থায় অরক্ষিতভাবে এটি এখানে রাখা ঠিক নয়। দ্রুত এটি অপসারণ করা প্রয়োজন।

ইসলামী ছাত্র মজলিসের যশোর শহর সেক্রেটারি আবু দারদা নাঈম বলেন, আমরা বাংলাদেশে কোনো ফ্যাসিবাদের আইকন রাখতে চাই না। এই ম্যুরালকে চেতনায় লালন করে যশোরে আওয়ামী লীগ সব অপকর্ম করেছে। শেখ মুজিবর রহমান এই বাংলাদেশের শত্রু ছিলো। বাবার মতো মেয়েও স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থা কায়েম করেছে। আমরা আওয়ামী লীগকে উৎখাত করেছি, এই জাতির সামনে আওয়ামী লীগ আর মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে না। সেই বিষয়টি লক্ষ্য করে আমরা অনেকদিন ধরে চেষ্টা করেছি যশোরে এই ম্যুরালটি গুড়িয়ে দিতে। আমরা দুই দফায় শতভাগ না ভাঙতে পেরে ফেলে রেখে গেছি। আমাদের দাবি মানুষের আতংক দূর করতে পৌরসভা দ্রুত যেনো বিধ্বস্ত ম্যুরালটি সরিয়ে ফেলে।

একই সাথে এই স্থানে ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে নিহত যশোরের দুইজন শহীদ ইমতিয়াজ আহমেদ জাবির ও শহীদ আবদুল্লাহর নামে স্মৃতি ম্যুরাল নির্মাণ করার দাবি জানান তিনি।

এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যশোরের সমন্বয়ক রাশেদ খান বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমরা যশোর পৌরসভার প্রশাসকের সাথে দেখা করে দ্রুত এটি অপসারণ করার কথা বলেছি। যেহেতু এটি ভারী এক্সেভেটর ছাড়া অপসারণ সম্ভব নয়। আমাদের বিশ্বাস পৌর কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

এ বিষয়ে যশোর পৌরসভার প্রশাসক রফিকুল হাসান বলেন, ম্যুরালটি ভাংচুর হয়েছে শুনেছি। বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা এটি করেছে। তবে আসলে এটির অবস্থা বর্তমান কী আছে সেটি এখনো পরীক্ষা করে দেখা হয়নি। ছাত্রদের পক্ষ থেকে আমাকে এ বিষয়ে জানানো হয়েছে। এ অবস্থায় কী করা যায় সে বিষয়ে আমার বলার মতো কিছু নেই। সবার সাথে আলাপ করে যা করা উচিৎ সেটি করা হবে।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!