খুলনা, বাংলাদেশ | ২ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৭ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  দেশ টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ হাসানের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর
  সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস
  দুর্নীতি ও আমলাতন্ত্র দেশে ব্যবসায় পরিবেশ নিশ্চিতের অন্যতম বাধা : সিপিডি
  সাবেক স্পিকার শিরীন শারমিন ও তার স্বামীর পাসপোর্টের আবেদন স্থগিত
দাম বেড়েছে কেজিতে চাল ৬ টাকা, তেল ১২

যশোরে চাল ও তেলের উত্তাপে দিশেহারা মানুষ

জাহিদ আহমেদ লিটন, যশোর

যশোরের বাজারে চাল ও তেলের দামের উত্তাপে দিশেহারা সাধারণ মানুষ। কোনভাবেই এ দুটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য মূল্যের লাগাম টানা যাচ্ছে না। মানুষের জীবন ধারণের জন্য অতিপ্রয়োজনীয় পণ্য দুটির দাম বেড়েই চলেছে। গত দু’মাসের ব্যবধানে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি চালের দাম বেড়েছে ৬ থেকে ৮ টাকা। আর ভোজ্য তেলের দাম কেজি প্রতি ১২ থেকে ১৫ টাকা বেড়েছে। এ কারণে নাভিশ্বাস উঠছে সাধারণ মানুষের। কেন, কী কারণে চাল, তেলের দাম ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে সেটা মানুষ জানতে পারছে না। এ ক্ষেত্রে খানিকটা নিরব রয়েছে জেলা প্রশাসনের বাজার মনিটরিং কমিটি।

বাজার ঘুরে দেখা যায়, চাল, তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সকল পণ্যের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। এসব মালামালের দাম শুনেই মানুষের নাভিশ্বাস উঠছে। দিশেহারা মানুষ বাজারে গিয়ে দিক-বিদিক ছুটাছুটি করছে। কোন দোকানে গেলে তারা একটু কম দামে জিনিষপত্র কিনতে পারবেন সেটা নিয়েই তাদের এ ছুটাছুটি।

বাজারে গরীব মানুষের জীবন বাঁচানোর মোটা স্বর্ণা চাল প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪২ থেকে ৪৪ টাকা। গত আগষ্ট মাসে এ চাল বিক্রি হয়েছে ৩৬ থেকে ৩৮ টাকা কেজি। এছাড়া, ধণি শ্রেণির মানুষের খাবারের চাল বাসমতি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫৬ থেকে ৫৮ টাকায়। মিনিকেট চালের প্রতি কেজি ৫২ থেকে ৫৪ টাকা। কাজল লতা চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৯ থেকে ৫১ টাকা কেজি ও বি-আর-২৮ মানের চালের প্রতি কেজি ৪৮ থেকে ৫০ টাকা। দু’মাসের ব্যবধানে চালের এ ধারাবাহিক মূল্য বৃদ্ধির কারণ জানতে পারছেন না সাধারণ মানুষ। তারা দোকানে গিয়ে ব্যবসায়ীর হাঁকা দরেই চাল কিনে বাড়ি ফিরছেন। কেন, কী কারণে চালের এ মূল্যবৃদ্ধি সেটা জানাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা।

তারা বলছেন, বেশি দামে তারা অটো রাইসমিল ও আড়ত থেকে চাল কেনেন। এ কারণে তারা বেশি দামেই বিক্রি করছেন। তবে চালের মূল্য বৃদ্ধির নেপথ্যে কুষ্টিয়া কেন্দ্রিক অটো রাইসমিল সিন্ডিকেট জড়িত বলে ব্যবসায়ীদের একটি পক্ষ জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, অটো রাইসমিল মালিকরা চালের মূল্য নিয়ন্ত্রণ করেন। তাদের বেধে দেয়া দামেই চাল বিক্রি করতে হয়। নতুবা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের তারা মিল থেকে চাল সরবরাহ করেন না।

এসব ব্যাপারে যশোরের পাইকারি চাল ব্যবসায়ী ও আড়তদার রফিকুল ইসলাম চৌধুরী মুল্লুক চাঁদ বলেন, দেশে মানুষের চাহিদা অনুযায়ী গত মৌসুমে চাল উৎপাদন কম হয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে বাজারে। এ কারণে বর্তমানে চালের বাজার চড়া। এছাড়া, তিনি চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারিভাবে চাল আমদানীর দাবি জানান। তবেই দেশে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে থাকবে। নতুবা আমদানীর কাজটি ব্যবসায়ীর হাতে ছেড়ে দিলে তারা এ সুযোগটি গ্রহণ করবে।

এছাড়া, সরকার কৃষক বাঁচাতে ধানের মূল্য বৃদ্ধি করায় এর প্রভাব পড়েছে চালের ওপর। বাজারে ধানের দাম বেড়ে গেলে চালের দাম বাড়বে এটাই স্বাভাবিক। এসব কারণে বর্তমানে বাজারে চালের দাম উর্ধ্বমুখী। এ মৌসুমের ধান উঠলে বাজার কিছুটা স্বাভাবিক হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

এদিকে, ভোজ্য তেলের বাজারেও বেসামাল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সেখানেও তেলের মূল্য ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি খোলা সোয়াবিন (ব্যারেলের) তেল বিক্রি হচ্ছে ১০২ থেকে ১০৫ টাকা কেজি। সুপার সয়াবিন তেল প্রতিকেজি ৯৭ থেকে ১শ’ টাকা, পাম ওয়েল ৯৩ থেকে ৯৬ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া কনটেইনারে প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের মূল্য ১১০ টাকা ও ৫ লিটারের মূল্য ৪৯০ থেকে ৫২০ টাকা। এখানেও মানুষ নিরুপায়, তাদের কিছু বলার নেই। অথচ গত আগষ্ট মাসে যশোরের বাজারে খোলা সয়াবিন তেল ৯০ থেকে ৯২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। অথচ কোন কারণ ছাড়াই দু’ মাসের ব্যবধানে এ তেলের দাম কেজি প্রতি ১২ থেকে ১৫ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। বাধ্য হয়ে মানুষকে বেশি দামেই ভোজ্য তেল কিনতে হচ্ছে। অথচ এ দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে জেলা বাজার মনিটরিং কমিটির পদক্ষেপ নেই বললেই চলে। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার মাধ্যমেই এ কমিটির কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রয়েছে বলে সাধারণ মানুষ অভিযোগে জানিয়েছে।

শহরের হাটখোলা সড়কের দু’জন পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী জানান, বর্তমানে চীন সোয়াবিন তেলসহ অন্যান্য তেল সিঙ্গাপুর থেকে কিনছে। এ কারণে এশিয়া অঞ্চলের দেশগুলোতে তেলের বাজার অস্তির ও মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদেরকে বেশিদামে সিঙ্গাপুর থেকে তেল কিনে আনতে হচ্ছে। অথচ এক সময়ে এ বাজার ছিল মালয়েশিয়ায়। তখন বিশ্বে সোয়াবিন তেলের এতো চাহিদা ছিল না। তবে আগামী এক সপ্তাহ পরে সোয়াবিন তেলের দাম কমতে পারে বলে ব্যবসায়ীরা মন্তব্য করেন।

এ ব্যাপারে যশোরের জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান বলেন, যশোরের বাজার নিয়ন্ত্রণে জেলা প্রশাসন আন্তরিকভাবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে বাজারে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনাসহ বিভিন্ন সময়ে ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের সাথে বৈঠক করা হয়ে থাকে। এসব বৈঠকে অযৌক্তিকভাবে মুনাফা আদায় না করার জন্য ব্যবসায়ীদের আহবান জানানো হয়। পাশাপাশি বাজার নিয়ন্ত্রণে প্রতিনিয়ত মনিটরিং করা হয়ে থাকে বলে তিনি জানান।

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!