যশোরে আটকে রেখে ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা দাবি ও অঙ্গীকারনামায় সাক্ষর করিয়ে নেয়ার অভিযোগে বাঘারপাড়া থানার ওসি, ইউপি চেয়ারম্যানসহ চারজনের বিরুদ্ধে যশোর আদলতে মামলা হয়েছে। সোমবার (২৬ জুন) বাঘারপাড়ার তেলিধান্যপুর গ্রামের বৃদ্ধ আব্দুল হাই বাদী হয়ে এ মামলা করেছেন।
জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট অবন্তিকা রায় অভিযোগটি গ্রহণ করে পুলিশ সুপারকে আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের নির্দেশ দেন। একই সাথে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিচারক ভিকটিমকে সিভিল সার্জন যশোরের নিকট উপস্থিত হওয়ার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাদীর আইনজীবী মীর্জা সাহেদ আলী চঞ্চল ও সুদিপ্ত কুমার। তারা জানিয়েছেন, ২০১৩ সালের নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারন) আইন এর ১৫(১)/১৩(১) দ:বি: আইনে এ মামলা করা হয়েছে, যা যশোরে এই প্রথম।
মামলার আসামিরা হলো, বাঘারপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহাদৎ হোসেন, খাজুরা পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ অভিজিত সিংহ রায়, বন্দবিলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সবদুল হোসেন খান ও ফরিদপুর সদরের সদরপুর গ্রামের মৃত হাজী রোকনুদ্দিন শরীফের ছেলে সারওয়ার শরীফ।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, গত ২১ জুন বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে খাজুরা পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ বৃদ্ধ আব্দুল হাইয়ের মোবাইলে ফোন করে জানান, বাঘারপাড়া থানার ওসি তাকে দ্রুত বন্দবিলা ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে দেখা করতে বলেছেন। আব্দুল হাই এ সংবাদের ভিত্তিতে দুপুর ১২টার দিকে ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে দেখেন চেয়ারম্যান, ওসি, খাজুরার ইনচার্জ ও অপরিচিত একজন বসে আছেন।
এসময় ওসি শাহাদৎ হোসেন জানান, বৃদ্ধের ছেলে সজিব ইফতেখারের কাছে তার আত্মীয় সরওয়ার শরীফ পাঁচ লাখ টাকা পাবেন এবং তাৎক্ষনিকভাবে এ টাকা দিয়ে দিতে বলেন। এরমধ্যে ওসি ও ইনচার্জ ভয়ভীতি দেখিয়ে বলেন, তার বিরুদ্ধে হয়রাণিমুলক মামলা দেয়া হবে। এরপর তারা আব্দুল হাইকে আটকে রেখে মানষিক নির্যাতন করে সরওয়ার শরীফ টাকা পাবে বলে স্বীকারোক্তি আদায়ের চেষ্টা করতে থাকেন। একপর্যায়ে চেয়ারম্যানের প্যাডে আগে থেকে লেখা, আমার ছেলে সজিব ইফতেখারের নিকট জনৈক সরোয়ার শরীফ চার লাখ ৮৫ হাজার টাকা পাবে। যা আগামী ২১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে পরিশোধ না করলে আব্দুল হাই ও তার ছেলে বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে। আসামিরা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে তাকে ইউনিয়ন পরিষদের ডেকে নিয়ে মানসিক নির্যাতন করে স্বীকারোক্তি আদায়ে অঙ্গীকার নামায় স্বাক্ষর করে নেন। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ছাড়া পেয়ে তিনি বাড়ি এসে অসুস্থ্য হয়ে পড়েন এবং চিকিৎসা গ্রহন করেন। বিষয়টি তিনি সাক্ষীদের জানিয়ে আদালতে এ মামলা করেছেন।
এ বিষয়ে বাঘারপাড়া থানার ওসি শাহাদৎ হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি, এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি। তবে বলেছেন, মামলাতো যে কেউ, যার তার বিরুদ্ধে করতেই পারে। তদন্ত করলেই বোঝা যায় কে মিথ্যা আর কে সত্য।
খুলনা গেজেট/কেডি