যশোর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসকের অবহেলায় রোগী মৃত্যুর পাঁচদিন পরে তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের নির্দেশে সার্জারি বিশেষজ্ঞ ডা. আব্দুর রহিম মোড়লকে প্রধান করে তিন সদস্যের এ কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন, হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. তৌহিদুল ইসলাম ও আবাসিক মেডিকেল অফিসার আব্দুস সামাদ। আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক বরাবর প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
৯ অক্টোবর ঝিকরগাছা উপজেলার খাসখাল গ্রামের আমীর আলীর ছেলে আব্দুল মান্নান (৫০) অসুস্থ অবস্থায় শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ডা. এফএম মঞ্জুর হোসেনকে দেখান। তিনি তাকে দ্রুত আইসিইউতে ভর্তি হতে বলেন। কিন্তু রোগীর পরিবার গরীব হওয়ার কারণে ৯ অক্টোবর রাতে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। যার রেজিস্ট্রেশন নম্বর-৬০০১৭/২০২।
স্বজনরা রাত সাড়ে ১০টার দিকে হাসপাতালের আইসিইউতে রোগীকে নিতে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক স্বজনদের জানান, রোগীর অবস্থা ভালো আছে। এখানে রাখার কোনো প্রয়োজন নাই। এই বলে ওয়ার্ডের সামনে থেকে রোগীকে বাড়িতে নিয়ে যেতে বলেন। পরে জেলার শীর্ষ স্থানীয় নেতা তত্ত্বাবধায়ককে মোবাইল ফোনে রোগীর উন্নত চিকিৎসার কথা জানালেও কোন কাজ হয়নি।
রাত সাড়ে ১১টার দিকে আইসিইউ এর করিডোরে আব্দুল মান্নানের মৃত্যু হয়। এ সময় ডা. প্রসেনজিৎ চৌধুরীর রোগীকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনা গত ১০ অক্টোবর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন জেলা আইন-শৃঙ্খলা সভায় এ বিষয়টি অভিযোগ আকারে জেলা প্রশাসকের কাছে জানান। তারপরও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোন প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। পরে বিভিন্ন মহলের চাপে পড়ে ও মৃতের অভিভাবক লিখিত অভিযোগ দিলে তত্ত্বাবধায়ক শনিবার এ তদন্ত কমিটি গঠন করেন।
উল্লেখ, ২০২০ সালে শহরতলীর পালবাড়ি এলাকার সোনালী ব্যাংক কর্মকর্তা হাসপাতালে একইভাবে চিকিৎসা না পেয়ে মৃত্যুবরণ করলেও পরিবার কোন বিচার পাননি। বিভিন্ন কৌশলে মৃতের স্ত্রীকে দিয়ে অভিযোগ উঠিয়ে নিয়েছেন তত্ত্বাবধায়ক আক্তারুজ্জামান।
এ ব্যাপারে মৃতের স্বজন রেজওয়ানুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, জীবন ও মৃত্যু আল্লাহর হাতে। মৃত্যু হতেই পারে, তাই বলে কি চিকিৎসক রোগীকে না দেখেই রোগী সুস্থ আছে বলে চিকিৎসা না দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দিবেন। এ ঘটনা অত্যন্ত দু:খজনক।
এ ব্যাপারে তদন্ত বোর্ডের সদস্য ডা. আব্দুস সামাদ জানান, তদন্তের বিষয় শুনেছি। চিঠি পেলে তদন্ত কার্যক্রম শুরু হবে।
বিষয়টি নিয়ে জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আক্তারুজ্জামান বলেন, অভিযোগ পেয়ে তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছি। রবিবার (১৬ অক্টোবর) নির্দেশনায় স্বাক্ষর করা হবে। অপরাধী যে হোক প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে কঠোর প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
খুলনা গেজেট/এসজেড