যশোর জেলা পরিষদ মেধাবি শিক্ষার্থীদের প্রায় কোটি টাকা শিক্ষাবৃত্তি দিয়েছে। গত সাত বছরে তারা প্রায় দু’হাজার শিক্ষার্থীর হাতে এ টাকা তুলে দিয়েছে। এতে উপকৃত হয়েছে শিক্ষার্থীসহ অভিভাবকরা। তাদের মুখে হাসি ফুটেছে ও শিক্ষার পথ সুগম হয়েছে।
যশোর জেলা পরিষদ সূত্র জানায়, শিক্ষা ক্ষেত্রে উৎসাহিত করতে প্রতি বছরই তারা মেধাবি ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করে থাকে। এর মাধ্যমে গরীব ও প্রকৃত মেধাবিদের শিক্ষা গ্রহণের পথ সুগম হয়। এ টাকায় তারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ব্যয় নির্বাহ করতে সক্ষম হয়। চলতি বছরে যশোর জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ ৩৪০ মেধাবি শিক্ষার্থীকে শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করেছে। গত ১৩ জুন জেলা পরিষদের প্রশাসক সাইফুজ্জামান পিকুল আনুষ্ঠানিকভাবে মেধাবিদের হাতে এ শিক্ষাবৃত্তির চেক তুলে দেন। মোট ৩৪০ জন মেধাবি শিক্ষার্থীকে পাঁচ হাজার টাকা করে এ চেক প্রদান করা হয়। যার মোট পরিমান ১৭ লাখ টাকা। প্রতি বছরই বিপুল পরিমান এ টাকা শিক্ষাখাতে ব্যয় করে জেলা পরিষদ। এ বছর বৃত্তিপ্রাপ্তদের মধ্যে যশোর সদর উপজেলা এলাকায় ১৫১ জন। শার্শায় ২৪ জন, ঝিকরগাছায় ২৩ জন, চৌগাছায় ৪২ জন, বাঘারপাড়ায় ১৬ জন, অভয়নগরে ১৯ জন, মণিরামপুরে ৩৩ জন ও কেশবপুরে ৩২ জন রয়েছে।
এদিকে, গত সাত বছরে জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ মোট এক হাজার সাতশ’ ৭৯ জন মেধাবিকে এ শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করেছে। এ খাতে প্রদানকৃত মোট টাকার পরিমাণ ৭৯ লাখ ৮২ হাজার ৫শ’ টাকা। ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে মোট ৬ লাখ ৭৭ হাজার ৫শ’ টাকার শিক্ষবৃত্তি প্রদান করা হয়। দুই হাজার টাকা হারে মোট ৩১৮ জন শিক্ষার্থীকে এ টাকা দেয়া হয়। ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে মোট ১৬ লাখ টাকা শিক্ষবৃত্তি প্রদান করা হয়। পাঁচ হাজার টাকা হারে মোট ৩২০ জন শিক্ষার্থীকে এ টাকা দেয়া হয়। ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে মোট ১৬ লাখ টাকা শিক্ষবৃত্তি প্রদান করা হয়। পাঁচ হাজার টাকা হারে মোট ৩২০ জন শিক্ষার্থীকে এ টাকা দেয়া হয়। ২০১৯-২০ অর্থ বছরে মোট ১০ লাখ টাকা শিক্ষবৃত্তি প্রদান করা হয়। পাঁচ হাজার টাকা হারে মোট ২শ’ জন শিক্ষার্থীকে এ টাকা দেয়া হয়। ২০২০-২১ অর্থ বছরে মোট ১৪ লাখ পাঁচ হাজার টাকা শিক্ষবৃত্তি প্রদান করা হয়। পাঁচ হাজার টাকা হারে মোট ২৮১ জন শিক্ষার্থীকে এ টাকা দেয়া হয়। সর্বশেষ ২০২১-২২ অর্থ বছরে মোট ১৭ লাখ টাকা শিক্ষবৃত্তি প্রদান করা হয়। পাঁচ হাজার টাকা হারে মোট ৩৪০ জন শিক্ষার্থীর হাতে এ টাকার চেক তুলে দেয়া হয়।
সূত্র জানায়, প্রতিষ্ঠাকালিন সময় থেকে জেলা পরিষদ শিক্ষার উন্নয়নে মেধাবি শিক্ষার্থীর মাঝে এককালিন শিক্ষাবৃত্তি, অনুদান ও আর্থিক সহায়তা প্রদান করে আসছে। যার ধারাবাহিকতা পরিষদের বর্তমান প্রশাসক সাইফুজ্জামান পিকুল আজো অব্যাহত রেখেছেন। চলতি বছরে পরিষদের বাজেটের নিজস্ব তহবিলের শিক্ষাখাত থেকে এ বৃত্তি প্রদান করা হয়েছে। এ তালিকায় ৪ জন অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা ও ২ জন প্রতিবন্ধিও রয়েছেন। এ বছর শিক্ষাবৃত্তি পাবার জন্য নির্ধারিত সময়ে মোট ৫৮৭টি আবেদন জমা হয়। এরমধ্যে ২৪৭টি আবেদন বাতিল হয়। বৈধ আবেদন থাকে ৩৬০টি, এরমধ্যে যাচাই-বাছাই শেষে ৩৪০ জনকে এ বছর শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করা হয়। যা পেয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মুখে হাসি ফুটেছে। এ টাকায় তাদের সন্তানদের শিক্ষাখাতে কিছুটা হলেও স্বস্তি জোগাবে। কলেজের বেতন নিয়ে তাদের কিছুদিনের জন্য কোন চিন্তা করতে হবে না।
এ ব্যাপারে যশোর জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফ-উজ-জামান বলেন, চলতি বছরে এসএসসি, সম্মান ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে এ বৃত্তি প্রদান করা হয়েছে। সবদিক বিবেচনা করে সর্বোচ্চ সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে এ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। যাতে তারা শিক্ষাক্ষেত্রে আরো বেশি উৎসাহিত হতে পারে।
বিষয়টি নিয়ে জেলা পরিষদের প্রশাসক সাইফুজ্জামান পিকুল বলেন, বরাবরের মত মেধাবি শিক্ষার্থীদের তাদের পড়াশুনায় আরো বেশি উৎসাহিত করতে আমরা এ খাতে সর্বোচ্চ টাকা ব্যয় করেছি। যাতে আমাদের মেধাবি সন্তানরা কিছুটা হলেও তাদের পড়াশুনার টাকা নিয়ে চিন্তা না করে। অভিভাবকরাও যাতে তাদের ছেলেমেয়েদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বেতন নিয়ে দুশ্চিন্তায় না থাকে। যশোরের শিক্ষাখাতের উন্নয়নে জেলা পরিষদের এ ধারা অব্যাহত থাকবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।