দ্রুত লিফট স্থাপন, দুর্নীতিগ্রস্ত শিক্ষক-কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণসহ ১২ দফা দাবিতে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) উপাচার্য প্রফেসর ড. আনোয়ার হোসেনকে পাঁচঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। শনিবার দুপুর থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা তাকে অবরুদ্ধ রাখা হয়। এ সময় ছাত্র-ছাত্রীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে বিক্ষোভ করে। পরে যবিপ্রবি ছাত্রলীগও এ কর্মসূচিতে যোগ দেয়।
যবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা জানান, শনিবার দুপুর ১২টার দিকে সেমিস্টার ফি কমানো, নবনির্মিত ভবনের লিফট লাগানো, দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি বিকৃতি মামলায় চূড়ান্ত অভিযুক্তদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অব্যাহতিসহ ১২ দফা দাবিতে তারা বিক্ষোভ করে। এ সময় যবিপ্রবি ছাত্রলীগও আন্দোলনে এসে যুক্ত হয়। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা যবিপ্রবি উপাচার্যের কার্যালয়ের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেনকে প্রায় ৫ ঘন্টা অবরুদ্ধ করে রাখে। পরবর্তীতে আন্দোলনকারীরা উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেয়।
শিক্ষার্থীদের ১২ দফা দাবিগুলো, শিক্ষার্থীদের ক্লাস পরীক্ষার সুবিধার্থে অনতিবিলম্বে স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু একাডেমিক ভবনের লিফট লাগনো, বিশ^বিদ্যালয়ের ক্যালেন্ডারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি বিকৃত মামলায় অভিযুক্তদের চূড়ান্ত রায় না হওয়া পর্যন্ত বিশ^বিদ্যালয়ে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা, সুষ্ঠু তদন্ত ব্যতীত কোনো শিক্ষার্থীর উপর শাস্তি আরোপ বা সরাসরি বহিষ্কার না করা ও বহিষ্কৃত সকল শিক্ষার্থীর উপর আরোপিত বহিষ্কারাদেশ প্রতাহার, বিশ^বিদ্যায়ের যে সকল উন্নয়নমূলক কাজে দুর্নীতি রিপোর্ট এসেছে সেখানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচ্চতর তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে, দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত ও দুর্নীতি দমন কমিশনে তদন্তাধীন সকল শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে সাময়িক বহিষ্কার এবং তদন্ত শেষ না হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা, ফায়ার ফাইটার স্থাপনের কাজ দ্রুত শেষ করা এবং উক্ত কাজে আর্থিক লেনদেনের দুর্নীতির অভিযোগ খতিয়ে দেখা। এছাড়া সেমিস্টার ফি কমানো, প্রথমবার রিকেট (অকৃতকার্য) ফি মওকুফ এবং দ্বিতীয় রিটেক (অকৃতকার্য) ফি প্রতি ক্রেডিট বাবদ সর্বোচ্চ ২৫ টাকা নির্ধারণ, বিভাগ উন্নয়নের নামে অবৈধ টাকা নেওয়া বন্ধ, শিক্ষকদের স্বেচ্ছাচারিতা বন্ধে কিউআরকোড সম্পর্কিত খাতা প্রদান ও ইমপ্রুভমেন্ট সিস্টেম চালু করার দাবি জানানো হয়।
সূত্র জানায়, এ দাবি নিয়ে যবিপ্রবি ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল রানা ও সাধারণ সম্পাদক তানভীর ফয়সালসহ নেতৃবৃন্দ উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেনের সাথে দেখা করতে গেলে সেখানে তুমুল বাক-বিতন্ডাও হয়। দুপুর ১২টা থেকে ৫টা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যায়। এরপর তারা দাবি আদায় না হলে পরবর্তীতে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণার কথা বলে অবস্থান তুলে নেয়।
এ প্রসঙ্গে যবিপ্রবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর ফয়সাল বলেন, লিফট স্থাপনসহ ১২ দফা দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করলে ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ একাত্মতা ঘোষণা করে আন্দোলনে শামিল হন। ১২ দফা দাবি নিয়ে উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করলে তিনি শিক্ষার্থীদের সাথে দুর্ব্যবহার করেছেন। এ দাবি আদায়ে প্রয়োজনে তারা বৃহত্তর আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করবে বলে জানায়।
এ ব্যাপারে যবিপ্রবি উপাচার্য ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, শিক্ষার্থীদের যে দাবিগুলো তার এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে, সেগুলো তিনি দেখবেন। কিছু দাবি রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ারাধীন। সেই দাবি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পাঠিয়ে দেয়া হবে। আর লিফট স্থাপনের বিষয়টি টেন্ডার প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে। লিফট বুঝে নেয়া কমিটি সেটি বুঝে নেয়ার পর স্থাপনের নির্দেশ দেয়া যেতে পারে। তার আগে কিছু করার নেই।
উপাচার্য ড. আনোয়ার হোসেন আরও বলেন, শিক্ষার্থীর দাবি দাওয়া আন্দোলন থাকবে। কিন্তু উপাচার্যের অফিসের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা ও অবরুদ্ধ করা অনাকাক্সিক্ষত।
খুলনা গেজেট/এসজেড