বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপের প্রভাবে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’ এর প্রভাবে সোমবার মধ্যরাত থেকে দক্ষিণ উপকূলীয় জেলা খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাটে হালকা ও মাঝারি বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। উপকূলীয় উপজেলাগুলোতে দমকা হাওয়া প্রবাহিত হচ্ছে। অনেক স্থানে বিদ্যুৎ নেই। নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। খুলনার কয়রা, সাতক্ষীরার আশাশুনি ও শ্যামনগরের বেশ কিছু স্থানে নদীর বাঁধ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ থাকায় ভেঙে নোনা পানিতে প্লাবিত হওয়ার শঙ্কায় অধিকাংশ মানুষ নির্ঘুম রাত কাটিয়েছে। এছাড়া পানি সরবরাহের যথাযখ ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টির পানিতে জলাবদ্ধতায় মৎস্যঘের ও বিলের আমন চাষ ক্ষতিগ্রস্তের চরম শঙ্কাও বিরাজ করছে।
এদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগে বার বার বিধ্বস্ত খুলনার কয়রা উপজেলার হরিণখোলা ও গাতিরঘেরী নামক স্থানে বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। দুপুরের জোয়ারের আগে কাজ করতে না পারলে সোনার ফসল, ঘরবাড়ি সব নোনা পানিতে প্লাবিত হবে বলে জানান স্থানীয়রা।
আজ সোমবার সকালে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, সোমবার থেকে সারাদেশেই ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভবনা আছে। বিশেষ করে উপকূল অঞ্চলে বৃষ্টির তীব্রতা বেশি থাকবে।
এছাড়া ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’-এর ফলে দেশের সমুদ্রবন্দরে সতর্ক সংকেত বাড়িয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অফিস। এ পরিস্থিতিতে মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত এবং চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর ও কক্সবাজারকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে
খুলনার কয়রা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এসএম শফিকুল ইসলাম বলেন, কয়রার হরিণখোলা ও গাতিরঘেরীর বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। স্থানীয়দের নিয়ে মেরামতের কাজের প্রস্তুতি চলছে। এছাড়া কয়রায় হোগলা, দোশহালিয়া, মদিনাবাদ লঞ্চঘাট, ঘাটাখালী, গাববুনিয়ার, আংটিহারা, ৪ নং কয়রা সুতির গেট ও মঠবাড়ির পবনা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে । প্রত্যেক ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের বলা হয়েছে স্ব স্ব এলাকার বাঁধের দিকে খেয়াল রাখার জন্য। সাইক্লোন শেল্টারগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী রিপন জানান, ঘূর্ণিঝড়টি এখনো বঙ্গোপসাগরে রয়েছে। তবে সাতক্ষীরায় ইতোমধ্য দমকা হাওয়ার সঙ্গে ভারী বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। উপকূলীয় অঞ্চলে ৪ নম্বর বিপদ সংকেত দেওয়া হয়েছে। নদীর পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাবে।
কয়রা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ হাসানুল বান্না জানান, ঘূর্ণিঝড় মঙ্গলবার ভোরের দিকে উপকূলে আঘাত হানতে পারে। সোমবার ভোর থেকে কয়রায় ৩০/৩৫ কিলোমিটার বেগে বাতাস প্রবাহিত হচ্ছে। মধ্যরাত থেকে বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। তিনি আরও বলেন, বিদ্যুৎ না থাকায় রিপোর্ট প্রদানে সমস্যা হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলায় বেড়িবাঁধ রয়েছে মোট ১ হাজার ৯১০ কিলোমিটার। ষাটের দশকে মাটি দিয়ে তৈরি এই বেড়িবাঁধ ছিল ১৪ ফুট উঁচু ও ১৪ ফুট চওড়া। এখন এই ২৪০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের উচ্চতা ও চওড়ার অর্ধেকও অবশিষ্ট নেই। তবে স্থানীয়দের ভাষ্য ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধের পরিমাপ আরও বেশি।
খুলনা জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, প্রাকৃতিক দূর্যোগে প্রাণহানি এড়াতে জেলার ২ লাখ ৭৩ হাজার ৮’শ ৫০ জনের জন্য ৪০৯ টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্রের মধ্যে দাকোপে ১১৮ টি, বটিয়াঘাটায় ২৭ টি, কয়রায় ১১৭ টি, ডুমুরিয়ায় ২৫ টি, পাইকগাছায় ৩২ টি, তেরখাদায় ২২ টি, রূপসায় ৩৯ টি, ফুলতলায় ১৩ টি ও দিঘলিয়ায় ১৬টি।
খুলনার জেলা প্রশাসক মো. মনিরুজ্জামান তালুকদার বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের বিশেষ কয়রা, পাইকগাছা ও দাকোপের কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। যারা ঝুঁকির মধ্যে আছে, তাদের যাতে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া যায়-সেজন্য সবাইকে সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আজ সোমবারের মধ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পূর্ণ হবে।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ২০ মে সুপার সাইক্লোন আম্ফানের আঘাতে খুলনার কয়রা, পাইকগাছা, সাতক্ষীরার, শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলা এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ২০০৯ সালের ২৫ মে আম্ফান নামক দূর্যোগে খুলনা জেলার দাকোপে ৬৫ জন মৃত্যুবরণ করে। ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর সিডরে জেলার কয়রা, পাইকগাছা, দাকোপ ও বটিয়াঘাটা উপজেলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।