খুলনা, বাংলাদেশ | ২৪ আশ্বিন, ১৪৩১ | ৯ অক্টোবর, ২০২৪

Breaking News

  ড. শেখ আব্দুল রশিদকে মন্ত্রিপরিষদ সচিব হিসেবে ২ বছরের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ
  দেশে ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৫ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৯৮১
  ছয় মামলায় সাবের হোসেনের জামিন, কারামুক্তিতে বাধা নেই
  বাংলাদেশী ৫ জেলেকে ধরে নিয়ে গেছে আরকান আর্মি
খুলনা জেলার ওয়েবিনারে সুলতানা কামাল

‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বৈষম্যহীন শিক্ষাব্যবস্থায় নতুন প্রজন্মকে গড়ে তুলতে হবে’

নিজস্ব প্রতিবেদক

আজ মঙ্গলবার ২২ জুন বিকেল সাড়ে ৩টায় একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি খুলনা জেলা শাখার উদ্যোগে কবি, লেখিকা ও আধুনিক বাংলাদেশের নারী প্রগতি আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব বেগম সুফিয়া কামালের ১১০তম জন্মদিন উপলক্ষে ‘সমকালীন সাম্প্রদায়িকতা ও সুফিয়া কামালের নারী মুক্তি চিন্তা’ শীর্ষক এক আন্তর্জাতিক ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত হয়।

ওয়েবিনারে নির্মূল কমিটি খুলনা জেলা শাখার সভাপ্রতি ডাঃ শেখ বাহারুল আলমের সভাপতিত্বে ও নির্মূল কমিটি খুলনা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক মহেন্দ্র নাথ সেনের সঞ্চালনায় বক্তব্য প্রদান করেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও কবি সুফিয়া কামালের কন্যা এডভোকেট সুলতানা কামাল, নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ আমজাদ হোসেন, নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আবদুর রশীদ (অবঃ), নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সমাজকর্মী কাজী মুকুল, নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় নেতা ব্যারিস্টার ড. তুরিন আফরোজ, নির্মূল কমিটির আইটি সেলের সভাপ্রতি শহীদসন্তান আসিফ মুনীর তন্ময় ও নির্মূল কমিটির খুলনা জেলার সহসভাপতি সাংবাদিক গৌরাঙ্গ নন্দী, জাসদ খুলনা মহানগরের সভাপতি খালিদ হোসেন, নির্মূল কমিটির ডুমুরিয়া শাখার সভাপতি অধ্যক্ষ এমবিএম শফিকুল ইসলাম ,প্রজন্ম-৭১ এর মফিদুল ইসলাম টুটুল, শরিফুল ইসলাম সেলিম, মোংলা উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান নূর আলম সহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিভিন্ন সংগঠনের জেলা নেতৃবৃন্দ।

এডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, ‘’৪৭-এর  আগে ও পরে  সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাবিরোধী বিভিন্ন কর্মকান্ডে সাহসিকতার সঙ্গে যুক্ত থেকে তিনি বিভিন্ন দল গঠন করেছিলেন এবং দাঙ্গা প্রতিরোধে গুরুত্বপূণ অবদান রেখেছেন। বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডে অনেক নারী নেত্রী সহ বিভিন্ন স্তরের, বিভিন্ন ধর্মের এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের মানুষ কবি সুফিয়া কামালকে কেন্দ্র করে সংগঠিত হয়েছেন। যার ফলে বিভিন্ন সংগঠন গড়ে উঠেছে এবং একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তোলার দর্শন তৈরি হয়েছে। তিনি অসাম্প্রদায়িক শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলার আন্দোলন করেছেন। তিনি তাঁর জীবনের বিভিন্ন প্র্রতিবন্ধকতা দূর করে নিদর্শন তৈরি করে নারী সমাজকে সামাজিক বৈষম্য প্র্রতিরোধের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি সাংস্কৃতিক আন্দোলনের প্রতি গুরুত্ব দিয়েছেন। বর্তমান সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থান প্রতিরোধে সাংস্কৃতিক আন্দোলনের গুরুত্ব সর্বাধিক। সমাজ, রাজনীতি, শিক্ষা সর্বক্ষেত্রে ইসলামীকরণ সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গীবাদকে প্র্রতিষ্ঠিত করছে। মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় থাকাকালীন বিভিন্ন ক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, বঙ্গবন্ধুর দর্শন প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে কিন্তু আবার অনেক ক্ষেত্রে অসাম্প্রদায়িক চেতনার বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক, নারীবিদ্বেষী বিভিন্ন অসদাচরণ লক্ষ্য করছি, যা আমাদের জন্য হতাশাজনক।মুক্তিযুদ্ধের স্ব-পক্ষের মানুষ হিসেবে কবি সুফিয়া কামাল নির্মূল কমিটির সঙ্গে আন্দোলন করেছেন। আমরাও অসাম্প্রদায়িকতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠা করার জন্য নির্মূল কমিটির আন্দোলনের সাথে যুক্ত হয়েছি। শুধু ব্যক্তি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নয় বরং যুদ্ধাপরাধীদের যে দর্শন, ধর্ম এবং রাজনীতি তা প্রতিরোধেই আমরা নির্মূল কমিটির আন্দোলনে থেকেছি।’

তিনি কবি সুফিয়া কামালের সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে মানসিক দৃঢ়তার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘মৃত্যুশয্যায়ও কবি সুফিয়া কামাল বায়তুল মোকাররমে তাঁর জানাজার জন্য নিষেধ করেন, কারণ বায়তুল মোকাররমের তৎকালীন খতিব যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত ছিলেন এবং তিনি আরও নির্দেশ দিয়ে যান কোনও যুদ্ধাপরাধী বা মৌলবাদীর কবরের পাশে যেন তার কবর না দেওয়া হয়।’
যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ আমজাদ হোসেন বলেন, ‘কিছুদিন পূূর্বে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সংসদীয় কমিটির বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মৃত্যুর প্রর রাষ্ট্রীয়ভাবে গার্ড অব অনারে নারী কর্মকর্তার উপস্থিতি সম্পর্কে আপত্তি জানানোর ঘটনা খুবই বেদনাদায়ক। সমাজের বিভিন্ন স্তরের নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে নারীরা যখন বর্তমানে সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছেনÑ তখন এ ধরনের সংকীর্ণ মানসিকতার প্রস্তাব মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে আমাদেরকে পেছনে ঠেলে দেয়। এরকম সময়ে কবি সুফিয়া কামালের কর্ম ও জীবন থেকে আমাদের অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য নতুন প্রজন্মকে প্রগতিশীল, বিজ্ঞানমনস্ক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।’

মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আবদুর রশীদ (অবঃ) বলেন, ‘কবি সুফিয়া কামাল তার বিভিন্ন সাহিত্যকর্মে সমাজ উন্নয়নের বার্তা দিতেন। তিনি সমাজ সংস্কারের একজন কর্মী ছিলেন। তিনি নারী মুক্তির আন্দোলন করতেন। সবকিছু নিয়ে তিনি বাংলাদেশের জন্য অসাম্প্রদায়িকতার একটি দর্শন তৈরি করেছেন। কবি সুফিয়া কামাল তাঁর বলিষ্ঠ ভূমিকার মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি প্রতিরোধে যে দর্শন তৈরি করেছেন তা অনুসরণ করে আমরা বর্তমানে অসাম্প্রদায়িক সমাজ গঠনে নিজ নিজ ভূমিকা প্রালন করতে পারি।’

নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সমাজকর্মী কাজী মুকুল বলেন, ‘সময়ের প্রয়োজনে সমাজে কিছু মানুষের জন্ম হয়। বাংলাদেশে বাঙালিদের প্রয়োজনে কবি সুফিয়া কামালের জন্ম হয়েছে। সমাজের বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতাকে অগ্রাহ্য করে মানুষকে নিয়ে প্রগতিশীলতার দিকে তিনি এগিয়ে গেছেন।’

তিনি বলেন, ‘নির্মূল কমিটির উদ্যোক্তাদের অন্যতম কবি সুফিয়া কামাল। নির্মূল কমিটি প্রতিষ্ঠার সময় আহ্বায়ক হিসেবে তিনি শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নাম প্রস্তাব করেন। নির্মূল কমিটির ১০১ জন প্রতিষ্ঠাতা সদস্যের প্রথম নামটি হচ্ছে কবি সুফিয়া কামাল। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আন্দোলনে আমাদের অনুপ্রেরণা ছিলেন কবি সুফিয়া কামাল।’

ব্যারিস্টার ড. তুরিন আফরোজ বলেন, ‘ব্যক্তি কবি সুফিয়া কামাল আমাদের সামনে এগিয়ে চলার পথ তৈরি করেছেন। প্রগতিশীল নারী হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ তৈরির আন্দোলনে তিনি আমাদের পথিকৃত। সাধারণ জীবনযাপন ও প্রগতিশীল আন্দোলনে তাঁর বলিষ্ঠ ভূমিকা আমাদেরকে ভবিষ্যতে করণীয় সম্পর্কে দিক নির্দেশনা দেয়।’

সভায় অন্যান্য বক্তারা বাংলাদেশে কবি সুফিয়া কামালের অসাম্প্রদায়িকতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে গুরুত্বপ্রূর্ণ অবদানের কথা স্মরণ করেন এবং বর্তমানে দেশে সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গীবাদের উত্থান প্রতিরোধে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক-বিজ্ঞানভিত্তিক-বৈষম্যহীন শিক্ষাব্যবস্থায় নতুন প্রজন্মকে গড়ে তোলার আহ্বান জানান। সূত্র: প্রেস বিজ্ঞপ্তি।

খুলনা গেজেট/ টি আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!