খুলনা, বাংলাদেশ | ৭ পৌষ, ১৪৩১ | ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ২ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১৬৫
  গাজীপুরের শ্রীপুরে বোতাম তৈরির কারখানায় আগুনে নিহত ১

মধু ছেড়ে মাংস খাওয়া শিখছে মৌমাছি!

গেজেট ডেস্ক

ফুলের সঙ্গে মৌমাছির অবিচ্ছেদ্য সম্পর্কের কথা সবাই আমরা জানি। ফুল মধুর বিনিময়ে মৌমাছির গায়ে জড়িয়ে দেয় রেণু, সেই রেণু ছড়িয়ে যায় দূরের কোনো ফুলে, এভাবেই ঘটে পরাগায়ন। তবে হাজারো বছরের এমন স্বাভাবিকতার মাঝে সবার অগোচরেই ঘটছে ছন্দপতন। গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে, ফুলের ওপর নির্ভরতা কাটিয়ে উঠছে মৌমাছির কিছু প্রজাতি। এরা নিরামিষ জীবন ছেড়ে পুরোপুরি মাংসাশী প্রাণীতে পরিণত হয়েছে। আবার নিরামিষ-আমিষ দুই খাবারে আসক্ত মৌমাছিও পাওয়া গেছে। পঁচা মাংস ছিড়ে খেতে কিছু মৌমাছির মুখে গজিয়েছে দাঁত, এমনকি হজমে গণ্ডগোল এড়াতে এদের পরিপাকতন্ত্রও প্রস্তুত।

গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে সম্পূর্ণ মাংসাশী মৌমাছির খোঁজ পেয়ে রীতিমতো বিস্মিত বিজ্ঞানীরা। তারা বলছেন, মধু সংগ্রহের প্রবল প্রতিযোগিতা এড়াতেই সম্ভবত এমন বিবর্তন। এ ধরনের মৌমাছির মুখে মধু শুষে নেয়ার ব্যবস্থাপনার পরিবর্তে গজিয়েছে তীক্ষ্ণ দাঁত।

প্রাণিবিজ্ঞানের প্রচলিত ধারণায়, কর্মী মৌমাছি ফুলে ফুলে ঘুরে ঘুরে ‌মৌ-রস সংগ্রহ করে। এই মৌ-রসকে ইংরেজিতে বলে নেকটার। নেকটার হলো ফুলের রেণুতে থাকা মিষ্টি তরল। মৌমাছির শরীরে দুটি পাকস্থলি রয়েছে। একটিতে সে মৌ রস জমা করে, আর অন্যটিতে স্বাভাবিক ভাবে খাবার পরিপাক হয়।

কর্মী মৌমাছি পেটে মৌ-রস নিয়ে এসে মৌচাকে জমা করে। মৌচাকের প্রকোষ্ঠে মধু ঢালার আগে এরা পেট থেকে মধু মুখে নিয়ে আসে। মধু প্রকোষ্ঠে ভরার পর ডানা ঝাপটে বাড়তি পানি বাষ্পীভূত করে দেয়া হয়। এরপর দীর্ঘদিন মধু ভালো রাখার জন্য মৌমাছি নিজের পেট থেকে মোম বের করে প্রকোষ্ঠের মুখ বাতাসরোধী করে আটকে দেয়।

তবে মাংসাশী মৌমাছির বেলায় এই রুটিনের কোনো বালাই নেই। এরা মাংস চিবিয়ে খেতে দক্ষ প্রাণীতে পরিণত হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া, রিভারসাইড (ইউসিআর) এর কীটতত্ত্ববিদ ডগ ইয়ানেগা বলছেন, ‘এরা এমন ধরনের মৌমাছি যারা উদ্ভিদজাত খাদ্য উৎসের বাইরে সম্পূর্ণ আলাদা উৎস ব্যবহারের জন্য বিবর্তিত হয়েছে। এটি মৌমাছির খাদ্যাভাসের ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন।’

দক্ষিণ আমেরিকার জঙ্গলে পাওয়া মাংসাশী মৌমাছির পরিপাক তন্ত্রে মাংস হজমের উপযোগী রূপান্তরও লক্ষ্য করেছেন বিজ্ঞানীরা। খাবার হজমে সহায়তার জন্য প্রতিটি প্রাণীর পরিপাকতন্ত্রে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের উপকারী ব্যাকটেরিয়া ও অণুজীব। প্রাণিবিজ্ঞানীরা বলছেন, মধু জাতীয় খাদ্য পরিপাকে মৌমাছির পরিপাকতন্ত্রে মূলত পাঁচটি অণুজীব সক্রিয়। প্রায় আট কোটি বছর ধরে এগুলোই প্রায় সব প্রজাতির মৌমাছির পরিপাকতন্ত্রে আধিপত্য বজায় রেখেছে। তবে মাংসাশী মৌমাছির পরিপাকতন্ত্রে পাওয়া গেছে একদম আলাদা ধরনের অণুজীব।

ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া, রিভারসাইড এর গবেষক দলটির গবেষণাটি সম্প্রতি আমেরিকান সোসাইটি অফ মাইক্রোবায়োলজিতে প্রকাশিত হয়েছে। মাংস খেতে সক্ষম মৌমাছিরা ‘ভালচার বি’ বা শুকুনি মৌমাছি নামে পরিচিতি পেয়েছে।

শকুনি মৌমাছির দেখা মিলেছে কোস্টারিকার বনে-জঙ্গলে। এদের আচরণ ও খ্যাদ্যাভাস পর্যবেক্ষণে ইউসিআর গবেষক দলটি গাছে ঝুলিয়ে রেখেছিল মুরগির কাঁচা মাংসের টুকরো। দেখা গেছে, কিছুক্ষণের মধ্যেই এর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে শুকুনি মৌমাছিরা। মাংস ও মধু- দুটিই খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে এমন প্রজাতিও পাওয়া গেছে সেখানে।

গবেষক দলটি বলছে, মাংসাশী, সর্বভুক এবং কেবল মধু খাওয়া মৌমাছিদের পরিপাক তন্ত্রের মধ্যে বড় ধরনের পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে।

ইউসিআর-এর কীটতত্ত্ববিদ কুইন ম্যাকফ্রেডরিক বলেন, ‘শকুনি মৌমাছির অন্ত্রের মাইক্রোবায়োম অ্যাসিড সম্মৃদ্ধ ব্যাকটেরিয়ায় পরিপূর্ণ, সাধারণভাবে অন্যান্য মৌমাছিতে যা একেবারেই দেখা যায় না। শকুন, হায়েনার মতো প্রাণীর পরিপাকতন্ত্রেও এ ধরনের ব্যাকটেরিয়া দেখা যায়। এসব ব্যাকটেরিয়া পঁচা মাংসের রোগজীবাণু থেকে খাদ্য গ্রহণকারী প্রাণীকে রক্ষা করে।’

শকুনি মৌমাছির অন্ত্রে পাওয়া ব্যাকটেরিয়ার একটি হল ল্যাকটোব্যাসিলাস, যা দই জাতীয় খাবারে পাওয়া যায়। এই ব্যাকটেরিয়া শক্ত খাবার হজমে সাহায্য করে।

গবেষক দলের সদস্য জেসিকা ম্যাকারো বলছিলেন, ‘মৌমাছি কোনো প্রাণীর মৃতদেহ ছিড়ে খাচ্ছে, এটা ছিল ভয়ঙ্কর দৃশ্য। মৃতদেহের পঁচা মাংসে ক্ষতিকর অনেক জীবাণু থাকে, তবে এসব জীবাণুকে প্রতিরোধের ক্ষমতা শকুনি মৌমাছি অর্জন করেছে।’

কোস্টারিকায় পাওয়া শকুনি মৌমাছির বেশিরভাগ প্রজাতির হুল নেই। তবে আক্রমণ ঠেকাতে এদের প্রতিরোধ ক্ষমতা পুরোপুরি হারিয়ে যায়নি। কয়েকটি প্রজাতি কামড়ানোর শক্তি রাখে, আর সেই কামড়ে ত্বকে ফোস্কা পড়াসহ, ঘা তৈরি হতে পারে। সূত্র : নিউজ বাংলা।




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!