এ বছরের শুরু থেকেই করোনাভাইরাস যখন চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ছে, পৃথিবীর তাবৎ পরাশক্তি তাকে মোকাবিলার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কিছুতেই কিছু যখন হচ্ছে না, সবাই চেষ্টা করছে কোনরকমে খড়কুটো ধরে বাঁচতে। তারই অংশ হিসেবেই ভিটামিন-ডি রোগ প্রতিরোধের অংশ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কিন্তু ভিটামিন-ডি এর এই ব্যবহার খোদ ডাক্তারদের মধ্যেই দ্বিধাবিভক্তি দেখা গেছে।
একদল চিকিৎসক বলছেন, কভিড-১৯ চিকিৎসা ও প্রতিরোধে ভিটামিন-ডি সাফল্যজনক ভূমিকা রাখছে, আর আরেকদল বলছেন ভিটামিন-ডি-এর অতিরিক্ত ব্যবহার কিডনিরোগসহ নানা জটিলতা দেখা যেতে পারে শরীরে। আসুন তাহলে জানি চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের গবেষণার ফলাফল কী বলে…
গত ২৩ জুলাই ইসরাইলের গবেষক ড. মিলানা ফ্রেঙ্কেল এবং তার টিম “The FEBS Journal” এ প্রকাশ করেছেন যে, যাদের শরীরে ভিটামিন-ডি-এর ঘাটতি আছে তাদের কভিড-১৯ এ আক্রান্তের আশংকা দ্বিগুণ। তারা ৭৮০৭ জন রোগীর ওপর গবেষণা চালিয়ে এ তথ্য প্রকাশ করেছেন। ঠিক একই ধরণের তথ্য প্রকাশ করেছেন আমেরিকার শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ড. ডেভিড মেলযার এবং তার টিম। তাদের গবেষণা প্রকাশ্যে এসেছে, গত ৩ সেপ্টেম্বর “JAMA Network Open” জার্নালে। তাঁরা বলছেন যাদের শরীরে 25-hydroxycholecalciferol এবং 1,25-dihydroxycholecalciferol (ভিটামিন-ডি ৩ এর সক্রিয় উপাদান) যথাক্রমে ২০ ন্যানগ্রাম/মিলি এবং ১৮ পিকগ্রাম/মিলি থেকে কম তাঁদের কভিড-১৯ এ আক্রান্তের প্রবণতা দ্বিগুণ।
ড. ডেভিড মেলযার তার গবেষণায় আরও চাঞ্চল্যকর যে তথ্যটি প্রকাশ করেছেন তা হল, আমেরিকার ৫০ ভাগ মানুষই ভিটামিন-ডি স্বল্পতায় ভুগছেন।
আফ্রিকান-আমেরিকান, হিস্পান এবং যারা শিকাগোর মত ঠাণ্ডা এলাকাতে বসবাস করে এবং সূর্যের আলোর সঙ্গে কদাচিৎ সাক্ষাৎ হয় তাঁদের ক্ষেত্রে ভিটামিন-ডি স্বল্পতার প্রবণটা আরও বেশি। হতে পারে সেকারণেই হয়তবা আফ্রিকান-আমেরিকানদের আক্রান্তের পরিমাণ এতবেশি পরিলক্ষিত হয়েছে।
ভিটামিন ডি-এর সঙ্গে কভিড-১৯ আক্রান্তের সম্পর্ক কী?
ড. ডেভিড মেলযারের মতে, ভিটামিন-ডি শরীরের প্রাকৃতিক রোগ প্রতিরোধ (Innate Immunity) ক্ষমতা বাড়ায়। যার ফলে কভিড-১৯ সহজে মানব শরীরকে আক্রান্ত করতে পারে না এবং সেই সঙ্গে ট্রান্সমিশনকে ও প্রতিরোধ করে। ভিটামিন-ডি জিংক মেটাবোলিজমে ও ব্যাপক ভূমিকা রাখে, ফলে ভাইরাসটি শরীরের মধ্যে বংশবিস্তারে বাঁধাগ্রস্ত হয়।
আমাদের করণীয় কী?
যদিও ভিটামিন-ডি এর তেমন কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নাই, তথাপিও যাদের কিডনি বা লিভারে অসুবিধা আছে, তাদেরকে এই ওষুধ গ্রহণে অতিরিক্ত সতর্ক হতে হবে। আর সবচেয়ে নিরাপদ হল, ভিটামিন-ডি গ্রহণের পূর্বে চিকিৎসকের অনুমতিক্রমে শরীরে 25-hydroxycholecalciferol এবং 1,25-dihydroxycholecalciferol এর পরিমাণ মেপে চিকিৎসক দ্বারা নির্ধারণ করা কি পরিমাণ ভিটামিন-ডি গ্রহণ করলে শরীরে যথোপযুক্ত রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হবে।
লেখক: ডা. মোহাম্মাদ আরিফ হোসেন
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসা বিজ্ঞানী, টোকিও, জাপান
খুলনা গেজেট / এমএম