কেশবপুর হরিহার নদীর উপর ভাসমান সবজির চাষ করে বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি পেয়েছে মধ্যকুল গ্রামের প্রায় শতাধিক জেলে কৃষক পরিবার। নাব্যতাহীন নদীতে জমে থাকা কচুরিপনা দিয়ে ভাসমান বেড তৈরি করে তার উপরে সবজি চাষ করে তারা এখন সাবলম্বী হয়েছে।
কেশবপুর মধ্যকুল গ্রামের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে হরিহর নদী। নদীর পাড়ে মধ্যকুল রাজবংশি পাড়ার প্রায় শতাধিক জেলে পরিবার জীবিকা নির্বাহ করতেন নদীতে মাছ শিকার করে। কিন্তু কালের বিবর্তনে সময়ের সাথে সাথে নদীর নাব্যতা হারিয়ে যায়। নাব্যতা হারা নদীতে কচুরীপনা জন্মে বদ্ধ জলাশয়ে পরিণত হয়েছে। বন্ধ হয়ে যায় শতাধিক জেলে পরিবারের জীবনের জীবিকা নির্বাহ। এরই সাথে নদীর তীরে রাজবংশি পাড়ার জেলে পরিবারের উপর নেমে এসেছে বেকারত্বের অভিশাপ। এইসময় তাদের পাশে এসে দাড়িয়েছে কেশবপুর উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর। তাদেরকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে কিভাবে নদীর উপর জমে থাকা শেওলাকে কাজে লাগিয়ে ভাসামান বেড তৈরি করে ভাসমান সবজির চাষ করতে হয়। আর জেলে পরিবারের কৃষকরা তাদের নেওয়া এই প্রশিক্ষণকে কাজে লাগিয়ে বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি পেয়ে নিজেদের ভাগ্যের পরিবর্তন করেছে। তারা এখন নদীতে ভাসমান সবজি চাষ করে সংসারের স্বচ্ছলতা ফিরাইতে নতুন স্বপ্ন দেখছে।
এলাকার কৃষক তপন বিশ্বাস বলেন, আমাদের কোনো চাষের জমাজমি নেই। এখন নদীর উপর কচুরিপনা দিয়ে ভাসমান সবজি চাষ করে সংসারের স্বচ্ছলতা ফিরাইতে পেরেছি। তিনি নদীর উপর ৩৪ টি ভাসমান বেড তৈরি করে তার উপরে লাল শাক, পুইশাক, লাউ, কুমড়া, শীতকালীন সবজি পালং শাক, ওলকপি, পাতা কপি এমনকি ফুলকপি চাষও করে সফলতা পেয়েছি। তার চাষ করা সবজিতে সংসারের প্রয়োজন মিটিয়ে বাজারে বিক্রি করতে পারছি। আর এসব সম্ভব হয়েছে কেশবপুর উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর উদ্যোগে এই ভাসমান সবজি চাষের প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করার কারণে। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর দুইটি ডিঙ্গি নৌকা দিয়েছেন।
রাজবংশী পাড়ার বাসিন্দা পারুল বিশ্বাস জানান, তিনি নদীতে ৩৫ টি ভাসমান বেড তৈরি করে তার উপরে বিভিন্ন প্রকার তরিতরকারির চাষ করেছেন। সংসার চালিয়ে, সন্তানের বই, খাতা, কলম কিনতে এখন আর অন্যের কাছে হাত পাতা লাগে না।
মধ্যকুল গ্রামের মিজানুর রহমান জানান, তার কৃষি জমি নেই তিনিও প্রতিবেশীদের মাধ্যমে ভাসমান সবজি চাষের পদ্ধতি জেনে চাষের কাজ শুরু করেছে।
কৃষি অধিদপ্তরের মধ্যকুল ব্লকের উপর সহকারী কৃষি অফিসার অনাথবন্ধু দাস বলেন, হরিহর নদীতে কচুরিপানা জমে পড়ায় তারা বেকারত্ব সমস্যায় ভুগছিল। তাই তাদেরকে ভাসমান সবজি চাষের পদ্ধতির উপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। প্রায় শতাধিক কৃষক জেলে প্রশিক্ষণ নিয়ে এই ভাসমান সবজির আবাদ গড়ে তুলেছে। প্রতিটি কৃষক ৩৫ বেড তৈরি করে ভাসমান সবজি চাষ করছে। তারা এখন অনেকটা স্বচ্ছল ও স্বাবলম্বী হতে শুরু করেছে।
এ ব্যাপারে কেশবপুর উপজেলা কৃষি অফিসার ঋতুরাজ সরকার বলেন, কেশবপুর উপজেলার হরিহর নদীর দুই তীরে যাদের জমি নেই তারা চাইলে এই চাষের পদ্ধতি জেনে ও প্রশিক্ষণ নিয়ে এই চাষ করতে পারে। প্রয়োজনে আমরা তাদের প্রশিক্ষণে সহযোগিতা দিবো।
খুলনা গেজেট/এনএম