বাঙালির সংস্কৃতি এক এবং অভিন্ন। জাত-পাত আমাদের ভাষাকে ভাগ করতে পারে না, পারবেও না। মুসলিমেরও বাংলা ভাষা, হিন্দুরও বাংলা ভাষা। আমাদের বর্ণমালা তো একই। এটাকে কেউ কোনদিন ধ্বংস করতে পারবে না। যদি কেউ আমাদের বর্ণমালা ধ্বংস করতে চায় তা কোনদিন সম্ভব হবে না। এটা স্লাগার বিষয়।
সাতক্ষীরা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত আবহমান বাংলা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসা কোলকাতার বরেণ্য সাহিত্যিক কাজল চক্রবর্তী দৈনিক পত্রদূত অফিসে এক চা চক্রে যোগ দিয়ে স্থানীয় সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, বাংলা ভাষা কেন্দ্রিক প্রজন্ম হাজার বছর ধরে বিকাশমান। এই বিকাশ তো একদিনের নয়। বাংলা ভাষার জন্ম প্রাকৃতভাষা থেকে। প্রাকৃত বাংলা নির্ভর যে সভ্যতা তা সহজভাবে চারিত হবে, বয়ে যাবে। প্রাকৃত বাংলা চিহ্নিত হয় ১৪শ’ শতাব্দিতে। প্রাকৃত বাংলা যখন চারিত হবে না তখন এ ভাষা অস্তিত্ব সংকটে পড়বে। কাজেই আমি ওই জায়গাতেই চিন্তিত নই যে, বাংলা ভাষা হারিয়ে যাবে। বাংলা ভাষা হারাবে না। বাংলা ভাষা অমর হয়ে থাকবে যুগ থেকে যুগান্তরে। যে ভাষাতেই সাহিত্য চর্চা করেছেন আমাদের মধূসূদন দত্ত, জীবনানন্দ, সুকান্ত ভট্টাচার্য, ঈশ্বর চন্দ্র গুপ্ত, রবীন্দ্র নাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, লালন ফকির সে ভাষা কখনো হারিয়ে যেতে পারে না।
সাহিত্যিক কাজল চক্রবর্তী বলেন, ধর্মান্ধ হয়ে নয়, বরং সচেতনভাবে আমাদের বাঁচতে হবে। একটি শিশু জন্মগ্রহণ করার পর তার গায়ে কোন ধর্মের নাম লেখা থাকে না। আমরাই তাকে ধর্ম চাপিয়ে দিই। মনুষ্য ধর্ম থাকবে। আমাদের মানুষ হিসেবে একে অপরের সাথে মিশে বাঁচতে হবে।
কাজল চক্রবর্তী বলেন, ‘সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই।’ এই সত্যকে ধারণ করতে হবে। সব মানুষের রক্তের রং লাল। তাই আমি মনে করি, ধর্মান্ধ না হয়ে আমরা যদি সচেতনভাবে চলি তাহলে সমাজে-রাষ্ট্রে শান্তির সুবাতাস প্রবাহিত হবেই।
দুই বাংলার মানুষের চিরায়ত অভিন্ন সংস্কৃতি চর্চার কথা বলতে গিয়ে কাজল চক্রবর্তী বলেন, ভারতেই ২৯টি ভাষায় মানুষ কথা বলে। তাই বলে কোন ভাষাই ছোট নয়। সব ভাষার সমান মর্যাদা। ভাষা ও সংস্কৃতিই আমাদের দুই বাংলার মানুষকে বেঁধেছে এক ও অভিন্ন বাঁধনে। এ বাঁধন কখনো ছিড়ে যেতে পারে না।
কাজল চক্রবর্তীর পোশাকী নাম দেবেশ চক্রবর্তী। তাঁর জন্ম ১৯৫৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর কোলকাতায়। পেশায় ইঞ্জিনিয়ার কাজল-এর আটের দশকে লেখালেখির আনুষ্ঠানিক প্রকাশ শুরু। শুধু কবিতা নয় সাহিত্যের প্রায় সব শাখায় তাঁর অবাধ বিচরণ। তাঁর সম্পাদনায় বিভিন্ন কবি, লেখক, চিত্রকর ও বাচিকশিল্পীদের নিয়ে গবেষণামূলক ‘প্রামাণ্য গ্রন্থ’গুলো গবেষকদের কাজে আসে। ১৯৮১ সাল থেকে সম্পাদনা করছেন সাংস্কৃতিক খবর সাহিত্যপত্রটি। ১৯৮৭ সাল থেকে আয়োজন করছেন ‘বাংলা কবিতা উৎসব। লেখালেখিকে কেন্দ্র করে কাজল পৃথিবীর বহু দেশ ভ্রমণ করেছেন, গ্রহণ করেছেন অনেক সাহিত্য পুরস্কার।
খুলনা গেজেট/ টি আই