নানা বিতর্কের অবসান ঘটিয়ে অবশেষে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন যশোর জেলা কমিটি ঘোষণার ২৪ ঘন্টার মধ্যে যুগ্ম আহবায়ক-১ মাসুম বিল্লাহ স্বেচ্ছায় অব্যাহতি নিয়েছেন। সদ্য ঘোষিত কমিটিতে স্থান পাওয়া সদস্যরা নৈতিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ বলে অভিযোগ করে তিনি কমিটি থেকে অব্যহতির ঘোষণা দেন।
বুধবার (২৭ নভেম্বর) বিকেলে প্রেসক্লাব যশোরে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তিনি কমিটি থেকে অব্যাহতির কথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মাসুম বিল্লাহ বলেন, আমি শুরু থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাথে সমস্ত কর্মসূচিতে আছি। মঙ্গলবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যশোর-জেলা কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। কমিটিতে এমন অনেককেই রাখা হয়েছে যারা সমাজের কাছে নৈতিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ এবং তাদের মানবিক গুণাবলীও প্রশ্নবিদ্ধ। এ কমিটির অধীনে কাজ করলে আমার নৈতিক গুণাবলীর অধঃপতন হবে বলে আশংকা প্রকাশ করছি। কিন্তু ছোটবেলা থেকে নৈতিকতার প্রশ্নে আমি কখনও আপোষ করিনি। শুধুমাত্র আমার নৈতিক ও মানবিক গুণাবলী অক্ষুন্ন রাখার স্বার্থে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যশোর জেলার সদ্য ঘেষিত কমিটি থেকে আমি যুগ্ম আহবায়ক পদ এবং কমিটি থেকে অব্যাহতি নিচ্ছি। তবে শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক সকল দাবীর সাথে আমি ছিলাম, আছি এবং থাকব ইনশাআল্লাহ।
অব্যাহতি নেওয়া মাসুম বিল্লাহ বলেন, এ কমিটিতে আমার গ্রুপের কেউ স্থান পায়নি। যাদের আপত্তিকর ভিডিও ভাইরাল হয়, ছাত্রলীগের সাথে জড়িত তারা বড় বড় পদ-পদবী পেয়েছে। যশোরে বৈষম্য বিরোধীর দুটি গ্রুপ ছিল, একটি রাশেদ খানের এবং একটি আমার। রাশেদ খানের গ্রুপের অধিকাংশ সদস্য এ কমিটিতে স্থান পেয়েছে, কিন্তু আমার গ্রুপের কেউ এ কমিটিতে স্থান না পাওয়ায় আমি স্বেচ্ছায় কমিটি থেকে অব্যাহতি গ্রহন করছি।
এদিকে, গত ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের পর অব্যাহতি নেওয়া মাসুম বিল্লাহ বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন যশোরের আন্দোলন করা শিক্ষার্থীদের নিয়ে গ্রুপিং সৃষ্টি করে বলে অভিযোগ ওঠে। একইসাথে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে তার জড়িত থাকার অভিযোগও ওঠে। এ সকল অভিযোগের ব্যাপারে মাসুম বিল্লাহ বলেন, আমি কোন রাজনৈতিক দলের সাথে জড়িত ছিলাম না, আমাকে অভিযোগটা দেখান। যশোরে আমার আর রাশেদের দুটি গ্রুপ ছিল।
এ বিষয়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন যশোরের আহবায়ক রাশেদ খান বলেন, জেলা কমিটি কেন্দ্রীয়ভাবে ঘোষণা করা হয়েছে। এখানে বিতর্কিত কাউকে স্থান দেওয়া হয়নি। যারা প্রকৃত অর্থে আন্দোলন করেছে তারাই এ কমিটিতে স্থান পেয়েছে। তিনি আরও বলেন, মাসুম বিল্লাহ’র ছাত্রত্ব নেই। তার ছাত্রত্ব আরও পাঁচ বছর আগে শেষ হয়েছে। তবুও সিনিয়রিটি মেইনটেইন করে তাকে কেন্দ্র যুগ্ম আহবায়ক পদ দিয়েছিল।
এ বিষয়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন যশোরের সদস্য সচিব জেসিনা মুর্শীদ প্রাপ্তি বলেন, এ কমিটি কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ যাচাই-বাছাই করে গঠন করেছেন। এখানে কে বিতর্কিত এবং কে সুশীল সেটা কেন্দ্রই ভালো বলতে পারবে। অব্যাহতি নেওয়া ব্যাক্তিগত ব্যাপার বা তার অন্য কোন উদ্দেশ্য থাকতে পারে। আমরা কেন্দ্রের নির্দেশনা মেনে চলি এবং চলবো।
এ বিষয়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটির সমন্বয়ক (যশোরের দায়িত্বে থাকা) আকরাম হোসাইন রাজ বলেন, কমিটি দেওয়ার আগে সকলকে বলা হয়েছিল, কমিটি নিয়ে কারও কোন আপত্তি বা বিতর্কিত কমিটি মনে হলে বা কেউ পদত্যাগ করতে চাইলে সেটা আমাদের জানাতে। এসব বিষয় জানালে আমরা এক সপ্তাহের মধ্যে খতিয়ে দেখে সাংগঠনিকভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারতাম। কিন্তু মাসুম বিল্লাহ কেন্দ্রকে কিছুই জানায়নি, না জানিয়ে সে অব্যহতি নিয়েছে।
উল্লেখ্য, সদ্য ঘোষিত বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন যশোরের ১১৪ সদস্যের এ কমিটিতে আহবায়ক করা হয়েছে রাশেদ খানকে, এবং সদস্য সচিব করা হয়েছে জেসিনা মুর্শীদ প্রাপ্তি’কে। এছাড়া, যুগ্ম আহবায়ক-১ করা হয় মাসুম বিল্লাহকে। তিনি এদিন ঘোষনা দিয়ে পদত্যাগ করলেন।
খুলনা গেজেট/কেডি