খুলনা, বাংলাদেশ | ২০শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ৪ঠা জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

Breaking News

  সীমান্ত হত্যা যে কোন মূল্যে বন্ধ করতে হবে : নাহিদ ইসলাম
  রাজধানীর ভাটারায় গ্যাস লিকেজে বিস্ফোরণ : দগ্ধ যুবকের মৃত্যু

বেনাপোল স্থল বন্দরে পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ, দুশ্চিন্তায় খুলনাসহ দেশের পাট রপ্তানিকারকরা

একরামুল হোসেন লিপু

বাংলাদেশ থেকে স্থলপথে নতুন করে ৯ ধরনের পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ করেছে ভারত। শুক্রবার (২৭ জুন) এক বিজ্ঞপ্তিতে এই নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পর তা কার্যকর হয়েছে। তৃতীয় দফায় ভারতের এই নিষেধাজ্ঞা দেশের অন্যান্য অঞ্চলের কাঁচাপাট রপ্তানিকারকদের ন্যায় খুলনার দৌলতপুরের কাঁচাপাট রপ্তানিকারকরা দুশ্চিন্তায় পড়েছে।

জানা যায়, ভারতের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশ থেকে এই ৯ পণ্য আমদানির জন্য সমুদ্রপথে একটি পথ খোলা রেখেছে দেশটি। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, সমুদ্রপথে মুম্বাইয়ের নভোসেবা বন্দর দিয়ে এসব বাংলাদেশি পণ্য ভারতে নেওয়া যাবে। তবে সমুদ্রপথে বাংলাদেশ থেকে ভারতে এসব পণ্যের মোট রপ্তানির ১ শতাংশ রপ্তানি হয়। ফলে নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে মূলত এসব পণ্য রপ্তানির সহজ পথটি বন্ধ করে দিল ভারত।

ভারতের বিধিনিষেধের তালিকায় থাকা ৯ পণ্যের মধ্যে রয়েছে ফ্ল্যাক্স সুতার বর্জ্য, কাঁচা পাট, পাটের রোল, ফ্ল্যাক্স সুতা, পাটের সুতা, ফুড গ্রেড সুতা, লিনেন কাপড়, লিনেন ও তুলার সুতা মিশ্রিত কাপড় এবং কম প্রক্রিয়াজাত বোনা কাপড়। নিষেধাজ্ঞার তালিকায় মূলত কাঁচা পাট ও প্রক্রিয়াজাত পাটপণ্যই বেশি।

ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, চীন, ব্রাজিল, ইউকে, কোরিয়া, তিউনিসিয়া, ভিয়েতনাম ইউএসএ, আইভরিকোস্ট, রাশিয়া ও থাইল্যান্ড এই ১৩ টি দেশে বাংলাদেশ পাট রপ্তানি করে থাকে। এর মধ্যে বাংলাদেশ ভারতে সবচেয়ে বেশি পাট রপ্তানি করে থাকে। জুন মাসে বাংলাদেশ এক হাজার ২৯ কোটি টাকার সমমানের ৭ লাখ ৯৭ হাজার ৩৩২ বেল পাট ভারতে রপ্তানি করে। ভারতে রপ্তানিকৃত পাটের ৬৫ থেকে ৭০ শতাংশ বেনাপোল স্থল বন্দর দিয়ে রপ্তানি করা হয়।

দেশের শীর্ষস্থানীয় কাঁচাপাট রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান খুলনার দৌলতপুরের সারতাজ ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী বদরুল আলম মার্কিন বলেন, হঠাৎ করে বেনাপোল স্থল বন্দর বন্ধ হওয়ায় কাঁচাপাট রপ্তানিকারকরা দুশ্চিন্তার মধ্যে পড়েছি। দৌলতপুরে বর্তমানে আমরা ১৫ থেকে ২০ জন কাঁচা পাট রপ্তানিকারক আছি । যাদের প্রত্যেকের ভারতের রপ্তানির উদ্দেশ্যে হাজার হাজার মন বেল মজুদ রয়েছে। আমার নিজেরও রপ্তানি যোগ্য দশ হাজার বেল পাট রয়েছে। এখন বিকল্প হিসেবে নদী অথবা সমুদ্রপথে রপ্তানি করতে হবে। এতে করে খরচ এবং সময় উভয় বাড়বে। এছাড়া স্থলবন্ধর বন্ধ হওয়ায় এর প্রভাব আমাদের বাজারের উপর পড়বে। কৃষকদের এ বছর পাটের ন্যায্য মূল্য প্রাপ্তিতে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

গোপালগঞ্জ জয়নগর মোকামের এক সময়ের প্রান্তিক পাট চাষী ও বর্তমান ওই বাজারের বড় আড়ৎদার রিপন চৌধুরী বলেন, হঠাৎ করে বেনাপোল স্থল বন্দর বন্ধ হওয়ার এর প্রভাব স্থানীয় পাটের মোকামে পড়বে। রপ্তানিকারকরা মোকাম থেকে পাট না কিনলে কৃষকরা ন্যায্য মূল্য পাবে না। এখন পাটের মৌসুম। ইতিমধ্যে মোকামে অল্প পাট উঠতে শুরু করেছে, তবে সেগুলো অপরিপক্ক। পরিপক্ক এবং কোয়ালিটির পাট আগামী এক মাসের মধ্যে মোকামে উঠবে।

বাংলাদেশ জুট অ্যাসোসিয়েশন (বিজেএ)’র চেয়ারম্যান মো. ফরহাদ আহমেদ আকন্দ খুলনা গেজেটকে বলেন, বেনাপোল স্থল বন্দর দিয়ে আমদানি রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ায় এর প্রভাব ইতিমধ্যে দেশের পাটের বাজারে উপর পড়তে শুরু করেছে। দাম কমতে শুরু করেছে পাটের। এখন পাটের মৌসুম। রপ্তানি কারকরা যদি কাঁচা পাট না কেনে কৃষকরা ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হবে। যাদের ঘরে পাট আছে সেগুলোর দাম অলরেডি কমে গেছে।

তিনি বলেন, প্রতিবছর বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে সাড়ে তিন লাখ থেকে চার লাখ বেল পাট ভারতে রপ্তানি হয়। দেশের মোট রপ্তানির ৬৫ থেকে ৭০ শতাংশ পাট এই বন্দর দিয়ে ভারতে রপ্তানি হয়। খুলনা, নারায়ণগঞ্জ, উত্তরবঙ্গ মিলে ৪০ থেকে ৪৫ জন কাঁচা পাট রপ্তানিকারক রয়েছেন। এরমধ্যে আমাদের দৌলতপুরের ২৫ থেকে ৩০ জন পাট রপ্তানিকারক আছেন। এখন ভারতে আমাদের মাল যাবে সমুদ্রপথে মুম্বাই হয়ে ঢুকতে হবে। কান এখন ঘুরিয়ে ধরতে হবে। এতে করে সময় এবং খরচ দুটোই বাড়বে।

খুলনা গেজেট/এএজে




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!