শুধু মানুষ গড়ার কারিগর নয়, ভালো বীজ উৎপাদন ও সংরক্ষণে সফল উদ্যোক্তা হিসাবেও পরিচিতি হয়েছেন শিক্ষক বোরহান আলী। ডুমুরিয়া উপজেলার উলা গ্রামের শিক্ষক বোরহান আলী সরদার (৪৫) শিক্ষকতার পাশাপাশি ভালো বীজ উৎপাদন করে স্থানীয়দের মাঝে বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন।
স্থানীয় কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, উপজেলার ভান্ডারপাড়া ইউনিয়নের উলা গ্রামের সরদার বোরহান আলী শোভনা দারুস সুন্নাহ দাখিল দ্রাসার একজন শিক্ষক। পেশায় তিনি একজন শিক্ষক এবং স্থানীয়দের কাছে তিনি মাস্টার হিসেবে পরিচিত। শিক্ষকতার পাশাপাশি অবসর সময়ে নিজের জমি চাষাবাদ নিয়েই সময় কাটাতেন তিনি। শারীরিক পরিশ্রম আর অর্থ বিনিয়োগ করে তিনি আশানুরূপ সফলতা পেতেন না। এক পর্যায়ে তিনি তৎকালীন উপজেলা কৃষি অফিসার মোছাদ্দেক হোসেনের সাথে বিষয়টি নিয়ে পরামর্শ করেন। তারই মাধ্যমে জানতে পারেন আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে কৃষক পর্যায়ে উন্নত মানের ধান, গম, পাটসহ বিভিন্ন বীজ উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিতরণ প্রকল্পের আওতায় উদ্যোক্তা তৈরি করা হবে। এতে তিনি উদ্বুদ্ধ হন এবং আগ্রহের সাথে এ কাজ করে তিনি পান ব্যাপক সফলতা ও অধিক মুনাফা।
সরদার বোরহান আলী বলেন, আধুনিক প্রযুক্তি ও মানসম্মত কৃষি কাজে অনেক সফলতা আছে। এর পাশাপাশি সঠিক বীজ উৎপাদন ও সংরক্ষণ করে অনেক টাকা উপার্জন করা সম্ভব। ব্যক্তিগতভাবে কৃষিকাজ ও শাকসবজি ফলানো শখের বসে আমি করতাম। কিন্তু মানসম্মত বীজ পাওয়া কঠিন ছিল। এরপর আমি বীজ উৎপাদনে ঝুঁকে পড়ি। ২০১৯ সালে তৎকালীন উপজেলা কৃষি অফিসারের সাথে পরামর্শ করে রীতিমতো এ কাজ শুরু করি। একই সাথে এলাকায় বাছাই করে ১৫ জন আদর্শ কৃষক নিয়ে একটি দল গঠন করা হয় এবং সরকারিভাবে প্রশিক্ষণ নিয়ে গড়ে তোলা হয় একটি মজবুত কৃষক সংগঠন। ওই সংগঠনের সকল সদস্যদের সমন্বয়ে উলা বিলে ৫ একর জমিতে মানসম্মত বীজ উৎপাদন খামার করে ব্যাপক লাভবান হন। তাছাড়া ওই এলাকার কৃষকরা ভাল মানের বীজ পেয়ে মহাখুশি। পরবর্তীতে কৃষি বিভাগের পরামর্শে ডুমুরিয়া-শরাফপুর সড়কের পাশে উলা নামক স্থানে ১৫ শত বর্গফুটের একটি বীজ প্রসেসিং সেন্টার। শুধু তাই না বীজ প্রসেসিং করার জন্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের এনএটিপি-২ প্রকল্পের আওতায় একটি গ্রেডিং মেশিনও ক্রয় করেন তিনি। বর্তমানে সেখানে বছরে ২৫/৩০ মেট্রিক টন আমন ধানের বীজ ও ১০/১৫ মেট্রিক টন বোরো ধানের বীজ উৎপাদন করে বাজারজাত করে আসছেন। আর এ থেকে তিনি বছরে আয় করছেন ৩ লক্ষাধিক টাকা।
তিনি আরও বলেন, আমার দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ছিল এলাকার কৃষকদের মাঝে ভাল মানের বীজ সরবরাহ করা, আমি সেটাই করছি এবং সেবার মনোভাব নিয়েই আমি এ কাজ করে যাচ্ছি।
এ বিষয়ে তৎকালীন কৃষি অফিসার বর্তমানে অতিরিক্ত উপ-পরিচালক শস্য কৃষিবিদ মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, শিক্ষক বোরহান একজন সফল ও আদর্শ কৃষি উদ্যোক্তা। ২০১৯ সালে তিনি আমার কাছে এসেছিলেন পরামর্শ করার জন্য আমি তাকে বীজ উৎপাদন ও সংরক্ষণে উদ্বুদ্ধ করি বর্তমানে তিনি ধান, গম, পাট সহ বিভিন্ন ধরনের সবজি বীজ উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছে।
খুলনা গেজেট/ গাজী আব্দুল কুদ্দুস/এমএম