খুলনা-যশোর আঞ্চলিক মহাসড়কের নূরনগর এলাকা। এখানে পথের ধারে নার্সারিতে ফুটেছে নানান রঙের ফুল। মূল ফটক দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই চোখে পড়বে সেই রঙের ঝলকানি। গাঁদা, ডালিয়া, কসমস, ডায়ানথাস, জিনিয়া, সিলভিয়া, পিটুনিয়া, সেলফিয়া, গোলাপ ও চন্দ্রমল্লিকাসহ বাহারি সব ফুল। শীতের মাঝামাঝি এসব ফুলে রঙিন হয়ে উঠেছে খুলনা নগর। পথের ধারের বিভিন্ন নার্সারি ও বাড়িতে লাল, হলুদ, বেগুনি, সাদা ও গোলাপি রঙের ফুলের যেনো মেলা বসেছে। চলতি পথে সেদিকে তাকালে মনও প্রফুল্ল হয়ে ওঠে।
মহানগরীর বয়রা এলাকায় বাংলাদেশ বেতার খুলনা কেন্দ্রের আশপাশে গড়ে উঠেছে প্রায় ১২ নার্সারি। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, পলিব্যাগে ও টবে সাজিয়ে রাখা ফুল, ফল ও শীতের সবজির চারায় পানি ছিটিয়ে দিচ্ছেন নার্সারির কর্মীরা। কোনো টবে চলছে নতুন মাটি ভরানোর কাজ। ক্রেতারা এলেই ঘুরে দেখানো হচ্ছে হরেক রকমের গাছের চারা। বাসাবাড়ির বারান্দা আর ছাদ সাজাতে নগরীর নার্সারিগুলো থেকে ফুল-ফলের চারা কিনছেন বৃক্ষপ্রেমীরা।
নগরের বিভিন্ন নার্সারি ঘুরে দেখা গেছে, শৌখিন ক্রেতারা ফুলের চারা কিনতে আসছেন নার্সারিগুলোতে। চলছে বিকিকিনি। চারা তৈরিসহ পরিচর্যায় ব্যস্ততা বেড়েছে বিক্রেতাদের। শীতের ফোটা ফুল দেখে, কিনে ক্রেতা খুশি হলেও বিক্রি কম থাকায় নার্সারির মালিক ও শ্রমিকদের মুখে তেমন হাসি ফুটছে না। নূরনগর এলাকায় পথের ধারে নার্সারিতে ফুলের চারা কিনতে এসেছিলেন গৃহিণী হোসনেয়ারা আক্তার রুনু। নার্সারি ঘুরে তিনি পছন্দ করলেন ডালিয়া, জিনিয়া, গোলাপ ও গাঁদা ফুলের চারা। সঙ্গে নিলেন একটি টমেটোর চারা। বলছিলেন, ‘টবে করে এই চারাগুলো রাখা হবে বাসার বারান্দায়। প্রতি শীত মৌসুমে ফুলের গাছ কেনা হয়। বাসার ভেতর বিভিন্ন রঙের ফুল দেখতে বেশ ভালো লাগে।’
বিক্রেতারা জানালেন, ‘ফুলের মধ্যে গোলাপ, ডায়ানথাস, গাঁদা, পিটুনিয়া, চন্দ্রমালিকা, ডালিয়া, সিলভিয়ার চাহিদা বেশি। আর সবজি ও ফলের মধ্যে লেবু, টমেটো, কমলা ও বেগুনের চারা বেশি বিক্রি হয়। ফুলের ছোট চারাগুলো ২০ থেকে ৩৫ টাকা পর্যন্ত আর বড়গুলো বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৩০০ টাকায়। সবজি চারা ১৫ থেকে ২৫ টাকা ও ফলের চারা ১০০ থেকে শুরু। চারাগুলো নার্সারিতেই তৈরি করা হয়। আর চাহিদা বেশি থাকলে চারা আনা হয় যশোর, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ, বগুড়া ও ঢাকা থেকে।’
নিরালা মোড় থেকে আসা মো. আলফাজ আলমের সঙ্গে কথা হচ্ছিল সোনালী নার্সারির সামনে। তিনি বললেন, ‘এই নার্সারি থেকে প্রায় ১ হাজার ২শ’ টাকার চারা কিনেছি। কেনার সময় চারার বয়স আর গোড়া দেখে কিনছি। বেশি বয়সী চারার নিচের দিকের পাতাগুলো মরা থাকে। আর গোড়ার মাটি শক্ত থাকলে সেই চারা মজবুত হয়। বহন করার সময় নষ্ট হয় না।’
বিক্রেতাদের দেখা গেল, চারা বিক্রির সঙ্গে সঙ্গে এর পরিচর্যার বিষয়গুলোও জানাচ্ছেন ক্রেতাদের। সোনালী নার্সারির সামনে নগরের খালিশপুর থেকে আসা শিক্ষার্থী সাদিয়া চাঁদনী নামের এক ক্রেতার কাছে চারা বিক্রি করছিলেন এর স্বত্বাধিকারী সফিকুল ইসলাম। ক্রেতাকে বলছিলেন, রোদ আসে এমন জায়গায় চারা রাখতে হবে। ব্যবহার করতে হবে জৈব অথবা রাসায়নিক সার। সফিকুল ইসলাম খুলনা গেজেটকে বলেন, ‘শীত মৌসুমের নির্দিষ্ট ফুলগুলো শীতকালের পরে আর দেখা মেলে না। ফুলগুলোকে সুন্দর দেখাতে নিয়মিত পানি দিতে হয়। যত্ন করতে হয়। একবার ফুল ঝরে গেলে তখন সেই চারা আর বিক্রি হয় না। কেননা গাছের ফুল না দেখলে ক্রেতাদের মন ভরে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘শীতে ফুলের চাহিদা একটু বেশি থাকে। এ কারণে আমরাও চেষ্টা করি সব ধরনের ফুলের চারা রাখতে। কারণ, এ সময়টাতে বেচাকেনা একটু জমে ওঠে। কিন্তু এ বছর বেচাবিক্রি একটুও ভাল হচ্ছে না। করোনার কারণে অধিকাংশ ক্রেতারা নার্সারিতে আসছে না। মোবাইলে ফুলের নাম বলে অর্ডার করছে, কিন্তু অনেক সময় ওই ফুলের চারা নার্সারিতে থাকছে না। ক্রেতা সরাসরি নার্সারিতে আসতে পারলে, পছন্দের চারা না পেলেও নার্সারি ঘুরে কোন-না-কোন ফুলের চারা কিনে নিয়ে যেতো। তবে সে তো আর হচ্ছে না।’
নূরনগর ছাড়াও নগরীর আদালত এলাকা, রূপসা ফেরিঘাট, গল্লামারি সেতু, সরকারি করোনেশন বালিকা বিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, আহসান আহম্মেদ সড়ক, খালিশপুর ও খান-এ-সবুর সড়কের পাশের ফুটপাতেও অনেক নার্সারি গড়ে উঠেছে। এসব নার্সারিতেও মৌসুমি ফুলের চারার সন্ধানে আসছেন প্রকৃতিপ্রেমীরা।
খুলনা গেজেট / এনএম / এমএম