জাহাঙ্গীর সরদারের বাড়ি সাতক্ষীরার তালা উপজেলার মদনপুর গ্রামে। দুই মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে তাদের জন্মের পর থেকে ভ্যানে করেই জীবন কাটাচ্ছেন। ৩ সন্তানের মধ্যে বড় মেয়ের বয়স ৮ বছর। আর ছোট এক ছেলে ও এক মেয়ের বয়স ৬। জমজ দুই সন্তানকে জন্ম দিতে গিয়ে জাহাঙ্গীরের স্ত্রীর মৃত্যু হয়। এরপর ভূমিহীন ও গৃহহীন জাহাঙ্গীর সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে আর দ্বিতীয় বিয়ে করেনি।
নিজের কোন ঘর বা জমি না থাকায় সেই থেকেই ভ্যানে সন্তানদের নিয়ে ঘুরে ঘুরে ভিক্ষাবৃত্তি করেই চলে তার জীবন-জীবিকা। এভাবে ঘুরে বেড়াতে বেড়াতে যেখানেই রাত হয় সেখানে ছেলে মেয়ে নিয়ে ভ্যানেই ঘুমিয়ে পড়ে সে। এজন্য ভ্যানে ছাউনি টানিয়ে ভেতরেই রয়েছে কাপড়-চোপড়সহ সংসারের টুকি-টাকি তৈজসপত্র।
মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটা। উপজেলার কপিলমুনি বেদ মন্দিরের সামনে যাত্রীবাহী বাস ভ্যানটিকে চাপা দিলে ভ্যানটি দুমড়ে-মুচড়ে যায়। সেই সাথে দুমড়ে-মুচড়ে যায় জাহাঙ্গীরের স্বপ্ন আর সংসার। আশার কথা দুর্ঘটনায় কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। তবে সর্বশান্ত হয়েগেছে জাহাঙ্গীর ও তার সন্তানেরা।
মঙ্গলবার (৭ ডিসেম্বর) বাস চাপায় ৪টি প্রাণের বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বনটুকু দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়ায় মাঝপথে স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে। বাস কতৃপক্ষ যতসামান্য ক্ষতিপূরণ দিয়েছে। ভ্যানটি মেরামতের জন্য ১৫০ টাকা আর মালামালের ক্ষতিপূরণ বাবদ ১৯০ টাকা দিয়েছেন। যা দিয়ে কোনভাবেই ভ্যানটিকে মেরামত সম্ভব না। তাই তিন শিশুকে নিয়ে শীতের রাতে রাত্রি যাপনের দুশ্চিন্তা ভর করেছে জাহাঙ্গীরকে।
নিজের কোন জমি-জমা বা ঘর না থাকায় মাথা গোঁজার ঠাঁই খুঁজতে স্থানীয় সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানকে নিয়ে সাবেক তালা ইউএনও’র দপ্তরে মুজিব শতবর্ষের একটা ঘরের জন্য অনেকবার ধর্ণা দিয়েও ফল হয়নি। তবে তাতেও আক্ষেপ নেই তার। সন্তানদের বুকে আগলে সকলের সাহায্য-সহযোগীতায় এখনো যে, তাদেরকে বাঁচিয়ে রাখতে পেরেছেন এতেই আল্লাহর দরবারে লাখো-কোটি শুকরিয়া তাঁর।
তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জাহাঙ্গীর মাথায় সংসারের ভাঙাচোরা জিনিষের পুটলা ও ৩ শিশুকে সামনে রেখে এ প্রতিবেদককে জানান, তার কোন স্বপ্ন নেই, তাই বেঁচে থাকার কোন মানেও নেই তার। তবে অবুঝ শিশুদের কথা চিন্তা করে অনেক দিন বেঁচে থাকতে চান তিনি।
আপাতত কেউ তাকে সামান্য সহযোগীতা করলে জীবনে গতি ফিরবে তাদের। এমন প্রত্যাশায় তাকে কেউ সহযোগিতা করতে চাইলে যোগাযোগ করা যাবে তার ব্যবহৃত বিকাশ নম্বরে। সমাজের এমন কেউ কি আছেন? অসহায় শিশুদের সহায়তার হাত বাড়াবেন? জাহাঙ্গীরের মোবাইল নং-০১৩০৬-৬৭২১৭৪।
খুলনা গেজেট/ এস আই